দুবাই: তারকারা বড় মঞ্চেই জ্বলে ওঠেন। বিরাট কোহলি তা আবার প্রমাণ করলেন। দুবাইয়ে রবিবাসরীয় ভারত-পাক মহারণে ভিকে সত্যিই ভেরি ভেরি স্পেশাল। তাঁর দুরন্ত শতরানে ভর করেই পাকিস্তান বধ রোহিত ব্রিগেডের। চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীকে শুধু হারানো নয়, চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি থেকেই কার্যত ছিটকে দিলেন মহাতারকা। ৪৩ ওভারে খুশদিলকে এক্সট্রা কভার বাউন্ডারিতে পাঠিয়ে ৫১তম ওডিআই সেঞ্চুরির পাশাপাশি ভারতের সেমি-ফাইনালে জায়গাও প্রায় নিশ্চিত করলেন বিরাট। কিন্তু ম্যাচের নায়ককে আবেগে ভাসতে দেখা গেল না। বরং তারপর হেলমেট খুলে ব্যাট উঁচিয়ে ডাগ-আউটের দিকে তাকিয়ে যেন বোঝাতে চাইলেন, ‘নখদন্তহীন এই পাকিস্তানকে হারাতে আমি একাই যথেষ্ট।’
সাম্প্রতিক ফর্ম নিয়ে অবশ্য বিরাটকে কম সমালোচনা সহ্য করতে হয়নি। ২০২৩ ওডিআই বিশ্বকাপের পর থেকে এই ফরম্যাটে মাত্র একটি অর্ধশতরান এসেছিল তাঁর ব্যাট থেকে। কিন্তু পরিসংখ্যানের নিরিখে বিরাটের ক্লাসকে মাপার উপায় নেই। বড় মঞ্চে বারবারই জ্বলে উঠছেন তিনি। তা সে ২০২৪ টি-২০ বিশ্বকাপের ফাইনালই হোক বা চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ভারত-পাক মহারণ। সামনে পাকিস্তানকে দেখলে তো আরও বেশি করে অ্যাড্রিনালিন ক্ষরণ শুরু হয়ে যায়। ২০২২ টি-২০ বিশ্বকাপে এমসিজি’তে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীদের ঠোঁটের ডগা থেকে ছিনিয়ে নিয়েছিলেন জয়। তাই পাকিস্তানের কাছে ‘আতঙ্ক কা দুসরা নাম বিরাট ভাই।’ রবিবার দুবাইতে আরও একবার তা টের পেলেন বাবররা। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ওডিআই ফরম্যাটে এটা তাঁর চতুর্থ শতরান। জয়সূচক ইনিংসের পর বিরাটের মন্তব্য, ‘জানি, অনেক সমালোচনা হয়েছে। কিন্তু বাইরের কথায় কান দিই না। এদিন রোহিত, শুভমানের আউটের পর প্রতিজ্ঞাবদ্ধ ছিলাম দলকে জিতিয়েই মাঠ ছাড়ব। পরিকল্পনা ছিল স্পিনারদের বিরুদ্ধে বেশি ঝুঁকি নেব না। তবে প্রশংসা করতে হবে শ্রেয়স, শুভমানেরও। বোলাররাও দুরন্ত পারফরম্যান্স মেলে ধরেছে। টিম গেমেই জয় এসেছে।’
রবিবার রান তাড়া করতে নামা ভারতের শক্ত ভিত গড়ে দিয়েছিলেন শুভমান গিল। শাহিন শাহ আফ্রিদির ম্যাজিক ইয়র্কারে রোহিত আউট (২০) হওয়ার পর দলকে ভরসা জোগান তিনি। তৃতীয় উইকেটে ‘কিং’ বিরাট ও ‘প্রিন্স’ শুভমানের জুটিতে ওঠে মূল্যবান ৬৯ রান। স্পিনার আব্রারের দুরন্ত ঘূর্ণিতে বোল্ড হন শুভমান (৫২ বলে ৪৬)। এরপর গিলকে বিদ্রুপাত্মক ‘সেন্ড অফ’ দিয়ে বড় ভুল করে ফেলেন পাকিস্তানি তরুণ। বোধ হয় তিনি খেয়াল করেননি পাশেই বিরাট দাঁড়িয়ে। ভারতীয় মহাতারকাকে স্লেজিং করতে যেখানে অজিরা পর্যন্ত ভয় পায়, সেখানে আব্রার তো চুনোপুটি! এই ঘটনা নিশ্চয়ই ভিকে’কে তাতিয়ে দিয়েছিল। তারপর আর তাঁকে রোখা যায়নি। শাহিনদের রীতিমতো শাসন করলেন।
শেষদিকে ভারতের জয় নিশ্চিত দেখালেও বিরাটের শতরান নিয়ে শঙ্কা জেগেছিল। কোহলির স্কোর যখন ৮৮, তখন জেতার জন্য আরও ১২ রান দরকার। সেই সময় শাহিন একের পর এক ওয়াইড করছিলেন। তবে যাবতীয় আশঙ্কা কাটিয়ে তিন অঙ্কের ঘরে পৌঁছন তিনি।
স্কোরবোর্ড: পাকিস্তান- ইনাম রান আউট ১০, বাবর ক রাহুল বো হার্দিক ২৩, শকিল ক অক্ষর বো হার্দিক ৬২, রিজওয়ান বো অক্ষর ৪৬, সলমান ক জদেজা বো কুলদীপ ১৯, তাহির বো জাদেজা ৪, খুশদিল ক কোহলি বো হর্ষিত ৩৮, শাহিন এলবিডব্লু বো কুলদীপ ০, নাসিম ক কোহলি বো কুলদীপ ১৪, হ্যারিস রান আউট ৮, আব্রার অপরাজিত ০, অতিরিক্ত ১৭, মোট (৪৯.৪ ওভারে) ২৪১। উইকেট পতন: ১-৪১, ২-৪৭, ৩-১৫১, ৪-১৫৯, ৫-১৬৫, ৬-২০০, ৭-২০০, ৮-২২২, ৯-২৪১, ১০-২৪১। বোলিং: সামি ৮-০-৪৩-০, হর্ষিত ৭.৪-০-৩০-১, হার্দিক ৮-০-৩১-২, অক্ষর ১০-০-৪৯-১, কুলদীপ ৯-০-৪০-৩, জাদেজা ৭-০-৪০-১।
ভারত: রোহিত বো শাহিন ২০, গিল বো আব্রার ৪৬, কোহলি অপরাজিত ১০০, শ্রেয়স ক ইমাম বো খুশদিল ৫৬, হার্দিক ক রিজওয়ান বো শাহিন ৮, অক্ষর অপরাজিত ৩, অতিরিক্ত ১১, মোট (৪২.৩ ওভারে) ২৪৪-৪। উইকেট পতন: ১-৩১, ২-১০০, ৩-২১৪, ৪-২২৩। বোলিং: শাহিন ৮-০-৭৪-২, নাসিম ৮-০-৩৭-০, হ্যারিস ৭-০-৫২-০, আব্রার ১০-০-২৮-১, খুশদিল ৭.৩-০-৪৩-১, সলমান ২-০-১০-০।
ভারত ৬ উইকেটে জয়ী। ম্যাচের সেরা বিরাট কোহলি।