শরীর ও স্বাস্থ্য

ডায়েটের সমাধান

ওজন নিয়ন্ত্রণে ডায়েট কেমন হবে? পরামর্শ দিলেন পুষ্টিবিদ চিকিৎসক ডাঃ অনন্যা ভৌমিক মিত্র। লিখছেন স্বরলিপি ভট্টাচার্য।

‘সকালে উঠিয়া আমি মনে মনে বলি, 
সারাদিন আমি যেন ভালো হয়ে চলি।
আদেশ করেন যাহা মোর গুরুজনে,
আমি যেন সেই কাজ করি ভাল মনে।’
হঠাৎ করেই চোখের সামনে ছোটবেলা এসে হাজির হল তো? মদনমোহন তর্কালঙ্কারের লেখা এই অমোঘ লাইনগুলো কিন্তু জীবনের সব ক্ষেত্রেই সত্যি। গুরুজনের কথা শুনলে চলার পথ খানিক মসৃণ হয়। কারণ গুরুজনরা তো যা বলেন, তা ভালোর জন্যই। আর এখানেই ওঠে সেই চিরাচরিত প্রশ্ন। গুরুজনরা হয়তো ভালোর জন্যই বলেন। কিন্তু যা বলছেন, তাতে সত্যিই ভালো হচ্ছে কি? অর্থাৎ গুরুজনদেরও ক্ষেত্র বিশেষে একটু জেনে নেওয়া প্রয়োজন। ধরুন, আপনার সন্তান শারীরিক দিক থেকে বেশ গোলগাল। আপনি আদর করে সর্বসমক্ষেই হয়তো বলেন, ‘খাতে পিতে ঘরকা’। এ নেহাতই মজার অনুষঙ্গ। কিন্তু এর আড়ালেই বিপদ লুকিয়ে নেই তো? যে বিপদের নাম ওবেসিটি। বয়স বাড়লে তা এমন ভয়ঙ্কর আকার নেবে, তখন পরিত্রাণের উপায় খুঁজতে নাজেহাল হতে হবে। তাই গোড়া থেকেই ভিত মজবুত করা ভালো।
ওবেসিটি এমন এক অসুখ, যার কোনও নির্দিষ্ট বয়স নেই। ওবিস শিশুর সংখ্যা নেহাত কম নয়। ফলে হঠাৎ একদিন যদি স্লিম হওয়ার বাসনা জাগে, তাকে কার্যক্ষেত্রে ফলপ্রসূ করা কঠিন। ওবেসিটি নিয়ন্ত্রণ বা স্লিম হওয়া কোনও ম্যাজিক নয়। এর জন্য নিরন্তর চর্চা প্রয়োজন। কেমন চর্চা? প্রথমেই চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। আপনার জন্য কোন ধরনের শরীরচর্চা এবং ডায়েট প্রয়োজন তা একজন পেশাদার বলে দিতে পারবেন। নিজের ইচ্ছেমতো ডায়েট করা যায় না। ডায়েট আসলে অত্যন্ত ব্যক্তিনির্ভর একটি পদ্ধতি বলে মনে করেন ক্লিনিক্যাল নিউট্রিশনিস্ট তথা ওয়েলনেস কনসালটেন্ট চিকিৎসক অনন্যা ভৌমিক মিত্র। কিন্তু সচেতন হতে হবে ছোট থেকেই। শিশুরা নিজেরা সচেতন হতে পারবে না। এক্ষেত্রে অভিভাবকদের ভূমিকা অপরিসীম। ভালোবাসে বলেই পছন্দের খাবার অতিরিক্ত মাত্রায় দেওয়া যাবে না। আর বয়স বাড়লে সেই সচেতনতা আনতে হবে নিজের তাগিদেই। ডায়েটের ক্ষেত্রে পথ দেখালেন অনন্যা।

শিশু-কিশোরদের হেলথ টিপস
শুধুমাত্র ডায়েট বদলে ওবেসিটি নিয়ন্ত্রণ করা যায় না। তার জন্য লাইফস্টাইলের কিছু বদল প্রয়োজন। শিশু বয়স থেকে শুরু করে কিশোর কিশোরীদের জীবনযাপনের পদ্ধতিগত কিছু নিয়ম মেনে চলা প্রয়োজন। 
১) খাবার অভ্যাস স্বাস্থ্যকর হতে হবে। সারাদিনে যা খাবার খাবে তার মধ্যে পুষ্টিগুণের সঠিক ভারসাম্য বজায় রাখা জরুরি। প্রচুর পরিমাণে শাকসব্জি, মরশুমি ফল, শস্যদানা, চর্বিহীন প্রোটিন রাখুন খাদ্যতালিকায়। মিষ্টিজাতীয় পানীয়, প্রসেসড স্ন্যাক্স, জাঙ্ক ফুড ছোট থেকেই শিশুকে নিয়ন্ত্রণ করতে শেখান। 
২) মোবাইল এখন প্রায় সব বয়সের মানুষেরই জীবনসঙ্গী। এই নেশার বাইরে নয় শিশুমনও। একটা সময় টিভিতে কার্টুন চালিয়ে বাচ্চাকে খাওয়ানোর রেওয়াজ ছিল ‘ঘর ঘর কি বাত’। এখন সেই কার্টুন মোবাইল বন্দি। এই অভ্যেসে ছোট থেকেই দাঁড়ি টানতে হবে। স্ক্রিন টাইম সীমাবদ্ধ করুন। টিভি দেখা, ভিডিও গেম খেলা বা মোবাইলে বুঁদ হয়ে থাকা ওবেসিটি আক্রান্তদের সাধারণ প্রবণতা। এর বাইরে বেরতে হবে। শিশুকে শারীরিকভাবে সক্রিয় রাখার চেষ্টা করুন। প্রতিদিন অন্তত একঘণ্টা যাতে সে ঘাম ঝরিয়ে খেলাধুলা করার সুযোগ পায় সেদিকে নজর দিতে হবে অভিভাবকদের।
৩) ছোটবেলায় বেশিরভাগ শিশুর কাছেই তার বাবা, মা হয়ে ওঠেন রোল মডেল। অভিভাবক হিসেবে আপনি যখন আদর্শ, তখন সন্তান আপনাকেই অনুসরণ করবে। ফলে আচরণগত দিক থেকে যেমন আপনাকে সতর্ক থাকতে হবে, তেমনই খাদ্যাভ্যাস এবং শারীরিক সক্রিয়তার দিক থেকেও আপনি সচেতন থাকুন। আপনার স্বাস্থ্যকর লাইফস্টাইল, শরীরচর্চার অভ্যেস, ডায়েটে থাকার নিয়ম দেখেই সন্তানও শিখবে। পরিবারে সকলেই স্বাস্থ্য সচেতন হলে ছোট থেকেই শিশুর মধ্যে এই সুঅভ্যেস গড়ে উঠবে।
৪) খাদ্যদ্রব্যকে কখনও পুরস্কার অথবা তিরস্কার হিসেবে তুলে ধরবেন না। অর্থাৎ ভালো রেজাল্ট করলে বা দুষ্টুমি না করলে তোমাকে চকোলেট কিনে দেব, এহেন প্রতিশ্রুতি বাবা, মা দেন। আবার সন্তান কোনও দোষ করলে শাস্তিস্বরূপ হয়তো একদিন সে তার পছন্দের বিরিয়ানি খাওয়া থেকে বঞ্চিত হয়। কোনওটাই কাম্য নয়। পুরস্কার বা তিরস্কারের প্রাপ্তি কখনও কোনও খাবার হতে পারে না।
৫) শরীরে চাহিদার অনুযায়ী খাবার খাওয়া উচিত, ছোট থেকেই শিশুর মধ্যে এই বোধ তৈরি করতে হবে। শরীরে খাবারের চাহিদা ব্যক্তিভেদে ভিন্ন হয়। ফলে নিজের শরীর আগে চিনতে হবে। কতটা আমার প্রয়োজন, সেটা ছোট থেকে বুঝতে শিখলে ভালো। সেই প্রয়োজন অনুযায়ী খাবার খেলে কখনও অতিরিক্ত খেয়ে ফেলার সম্ভাবনা থাকে না।
৬) যেসব শিশু বা কিশোর-কিশোরী ওবেসিটিতে আক্রান্ত, তাদের অনেক সময় সামাজিক অবমাননার শিকার হতে হয়। পরিবার বা বন্ধুমহলে অনেকেই অতিরিক্ত ওজনের কারণে তাদের নিয়ে মশকরা করে। এই পরিস্থিতিতে বাবা, মাকেই মানসিক ভরসা দিতে হবে। সমালোচনায় ভেঙে না পরে কীভাবে সুস্থ থাকা যায়, কীভাবে শরীরের যত্ন নেওয়া দরকার, তা বোঝাতে হবে। কারণ সামাজিক হেনস্থার ফলে ডিপ্রেশনের শিকার হলে ওবেসিটির মাত্রা বাড়তে পারে। তখন স্লিম হওয়ার স্বপ্ন আর সত্যি হবে না।
৭) একান্তই ওবেসিটি নিয়ন্ত্রণে না এলে সন্তানের জন্য নির্ধারিত চিকিৎসকের কাছে গিয়ে পরামর্শ নিন। তিনি ব্যক্তিভেদে কেমন ডায়েট প্রয়োজন সে ব্যাপারে পথ দেখাতে পারবেন। 

পূর্ণবয়স্কদের জন্য পরামর্শ
ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা এখন ভালো থাকার অন্যতম শর্ত। ব্যস্ত দৈনন্দিনে শরীরচর্চা বা সঠিক ডায়েটের রুটিন অনেকেই মেনে চলতে পারেন না। কিন্তু তার মধ্যেও সুস্থ থাকতে হবে। ওবেসিটি নিয়ন্ত্রণে, স্লিম হওয়ার তাগিদে সাধারণ কয়েকটি বিষয় মনে রাখার পরামর্শ দিলেন অনন্যা।
১) খাবার সময় অন্য কিছুতে নয়, শুধুমাত্র খাবারে মনোযোগ দিতে হবে। খেতে খেতে বই পড়া, টিভি দেখা, মোবাইল গেম বা গল্প করার দিকে মন চলে গেলে প্রয়োজনের থেকে অতিরিক্ত খাওয়ার প্রবণতা তৈরি হয়। তাছাড়া যে খাবার আপনি খেতে ভালোবাসেন, তা পরিমাণে অতিরিক্ত খাওয়া থেকেও নিজেকে বিরত রাখতে হবে। লক্ষ্য করে দেখবেন, ভালোলাগার খাবারগুলো অধিকাংশ সময়ই অস্বাস্থ্যকর হয়। তাই সেসব খাবার সীমিত খেতে হবে। এ বিষয়ে আবেগপ্রবণ হলে আখেরে নিজেরই ক্ষতি।
২) সকাল, দুপুর, বিকেল, রাত— দিনের এই চারটি খাবার মিস করবেন না। পরিমাণে অল্প খাবেন। কিন্তু বারবার খাবেন। এই অভ্যেস তৈরি করে ফেলতে পারলে হজমশক্তি বৃদ্ধি পায়। দিনের চারটি মূল খাবারের মধ্যে পুষ্টিগুণের সঠিক ভারসাম্য বজায় রাখা জরুরি। প্রচুর পরিমাণে শাকসব্জি, মরশুমি ফল, শস্যদানা, চর্বিহীন প্রোটিন রাখুন খাদ্যতালিকায়।
৩) যে কোনও শারীরিক সমস্যার সমাধানে বাঙালি মায়েরা নাকি বেশি করে জল খাওয়ার পরামর্শ দেন। এহেন হাস্যরসের অনুষঙ্গ সামাজিক বৈঠকি আলোচনায় শুনতে পাবেন। তবে হাস্যরস ভুলে তথাকথিত গুরুগম্ভীর আলোচনাতেও সুস্থ থাকতে পরিমাণ মতো জল খাওয়ার কোনও বিকল্প নেই। আসল কথাটা হল, শরীরকে আর্দ্র রাখাটা জরুরি। সারাদিনের বিভিন্ন খাবারের মধ্যে জলের ভাগ ঠিক রাখলে তা একদিকে আপনার অতিরিক্ত খাওয়ার প্রবণতাকে দূরে রাখবে। অন্যদিকে খিদে পাওয়ার অনুভূতিকেও নিয়ন্ত্রণে রাখবে। খিদে পেয়েছে মনে হলেই চটজলদি ভুলভাল খাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। শরীরে জলের ভারসাম্য বজায় থাকলে সেই সমস্যা থেকে দূরে থাকতে পারবেন। যা ওবেসিটি নিয়ন্ত্রণের অন্যতম হাতিয়ার।
৪) যে কোনও বয়সের মানুষের সুস্থ থাকার তাগিদেই ক্যালোরি বার্ন করা জরুরি। দিনে অন্তত ১৫০ মিনিট শারীরিক কসরত করতে পারলে শরীর ভালো থাকবে। আপনার চাহিদা ও প্রয়োজন মতো হাঁটা, ফ্রি হ্যান্ড এক্সসারসাইজ, দৌড়নো, সাঁতার, সাইকেল চালানোর মতো ব্যায়াম বেছে নিন। ঘাম ঝরানো এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ। এতে হজমশক্তিও বৃদ্ধি পায়। খাবার দ্রুত হজম হলে দেহে অতিরিক্ত ফ্যাট জমে থাকার সম্ভাবনা কমতে থাকে। স্লিম থাকার অন্যতম পথ এটাই।
৫) ঘুমের ব্যাঘাত ঘটলে ওজন বৃদ্ধি পায়। বর্তমানে অধিকাংশ মানুষ পেশার তাগিদেই অত্যন্ত খারাপ একটি লাইফস্টাইলের মধ্যে থাকতে বাধ্য হন। বায়োলজিক্যাল ক্লক সম্পূর্ণ বদলে যায়। রাতে কাজ, দিনে ঘুম— এই রুটিনে অভ্যস্ত হয়ে পড়েন অনেকে। কিন্তু এটা স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। প্রতি রাতে ৭-৯ ঘণ্টা ঘুম জরুরি। যাঁরা একান্তই পেশাগত কারণে এই রুটিনে অভ্যস্ত হতে পারবেন না, তাঁরা দিনের বেলা টানা ঘুমানোর চেষ্টা করুন। কাজের বিরতিতে প্রয়োজন হলে ১০-১৫ মিনিটের বিশ্রাম নিতে পারেন। 
৬) স্ট্রেস এখন আধুনিক জীবনের ছায়াসঙ্গী। অনেক ছোট বয়স থেকেই স্ট্রেস সামলাতে অভ্যস্ত হতে হয়। ওজন বৃদ্ধির অন্যতম কারণ এই উদ্বেগ। জীবনযাপনে উদ্বেগ থাকবেই। কিন্তু তা থেকে দূরে থাকার জন্য শরীরচর্চা, মেডিটেশন করতে পারেন। প্রয়োজন হলে মনোবিদের সাহায্য নিন। অত্যধিক স্ট্রেস খাদ্যাভ্যাস বদলে দেয়। অতিরিক্ত ও ভুল খাবার খাওয়ার প্রবণতা তৈরি হয়। যার পরিণতি মারাত্মক হতে পারে। 
৭) নিজের ওজন সম্পর্কে সচেতন থাকুন। দু’মাস অন্তর ওজন পরীক্ষা করিয়ে নিন। স্বাভাবিকের থেকে তা বেশি মনে হলে শরীরচর্চা, ডায়েট শুরু করুন। প্রয়োজন হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
4d ago
কলকাতা
রাজ্য
দেশ
বিদেশ
খেলা
বিনোদন
ব্ল্যাকবোর্ড
বিশেষ নিবন্ধ
সিনেমা
প্রচ্ছদ নিবন্ধ
আজকের দিনে
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
mesh

কর্মের প্রসার ও উপার্জন বৃদ্ধির যোগ। গৃহ পরিবেশে চাপা উত্তেজনা। পেশার প্রসার।...

বিশদ...

এখনকার দর
ক্রয়মূল্যবিক্রয়মূল্য
ডলার৮৩.০৭ টাকা৮৪.৮১ টাকা
পাউন্ড১০৮.৬৫ টাকা১১২.২০ টাকা
ইউরো৯১.৫৭ টাকা৯৪.৭৬ টাকা
[ স্টেট ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া থেকে পাওয়া দর ]
*১০ লক্ষ টাকা কম লেনদেনের ক্ষেত্রে
17th     September,   2024
দিন পঞ্জিকা