শরীর ও স্বাস্থ্য

ওজন কমাতে ফ্রি হ্যান্ড এক্সারসাইজ
 

ভুঁড়ি কমানোর ক্ষেত্রে ফ্রি হ্যান্ড এক্সারসাইজের কোনও জুড়ি নেই, জানালেন ফিটনেস বিশারদ গুরুপ্রসাদ বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর কথায়, ফ্রি হ্যান্ড এক্সারসাইজের নানা রকম ও ধরন রয়েছে। এক একটির উপকারিতা এক এক রকম। প্রথমেই বলে রাখা দরকার যে ভুঁড়ি কমানোর জন্য কার্ডিও এক্সারসাইজ করতে হবে। কেবলমাত্র পেটের ব্যায়াম করলে বা ভুঁড়ি কমানোর ব্যায়ামের উপর জোর দিলে কিন্তু উদ্দেশ্য সাধিত হবে না। তাতে হয়তো পেটের পেশি শক্ত হবে, কিন্তু উপরের চর্বি কমবে না। হোল বডি এক্সারসাইজ করলে ত঩বেই ভুঁড়ি কমানো যাবে। কেমন সেই ব্যায়াম? গুরুপ্রসাদবাবুর কথায়, যেহেতু ভুঁড়ি কমানো উদ্দেশ্য, তাই কার্ডিও এক্সারসাইজগুলো এমন হবে যেগুলোতে পেটের উপর চাপ পড়ে। এছাড়া ক্যালোরি বার্ন করার কথাও মাথায় রাখতে হবে। অর্থাৎ শরীরে ক্যালোরি যদি বেশি ঢুকে পড়ে এবং সেই মতো তা ঝরানো না যায় তাহলেও ভুঁড়ি কমানো যাবে না। অতএব ভুঁড়ি কমাতে গেলে এক্সারসাইজ যেমন জরুরি তেমনই সঠিক খাওয়াদাওয়াও খুবই দরকার। 
পাঁচ থেকে নব্বই— সবাই ব্যায়াম করতে পারে। কিন্তু কে কেমন ব্যায়াম করবে সেটাই আসল কথা, জানালেন গুরুপ্রসাদবাবু। একটু বয়সভিত্তিক ব্যায়ামের কথায় আসা যাক। মহিলাদের সন্তান যদি সিজারিয়ান অপারেশনের মাধ্যমে হয় তাহলে পেটের মাসলগুলো ঝুলে যেতে পারে। সেক্ষেত্রে মাসল টোনিং এক্সারসাইজ করতে হবে। অপারেশনের পরে ডাক্তার যখন ফিট সার্টিফিকেট দেবেন, তখন থেকেই এই টোনিং এক্সারসাইজ শুরু করা যায়। তবে এই সময় খুবই হালকা এক্সারসাইজ দিয়ে শুরু করা উচিত। স্ট্রেচিং এক্সারসাইজগুলো এই সময়ের পক্ষে সবচেয়ে উপযুক্ত। তবে সি-সেকশন (সিজারিয়ান সার্জারি) হলে পেটে একটা ইলাস্টিক গার্ড লাগিয়ে তবেই এক্সারসাইজ করা উচিত। পুরুষদেরও যদি কোনও পেটের সার্জারি হয়, ল্যাপেরোস্কপি ছাড়া, তাহলে তাঁরাও পেটের মাসল টোনিং এক্সারসাইজ করবেন। নাহলে পেটের পেশি ঝুলে যাবে। তবে পুরুষদের বিশেষত বলব, মহিলাদের তো বটেই, অপারেশনের পর ওয়েট নিয়ে এক্সারসাইজ করবেন না। বরং ফ্রি হ্যান্ড এক্সারসাইজ, হাঁটা, সাঁতার ইত্যাদি করুন। অপারেশনের কিছুদিন পর থেকে হালকা সাইক্লিং করুন। এটা খুব ভালো এক্সারসাইজ। ক্রমশ হালকা ফ্রি হ্যান্ড এক্সারসাইজ করুন। যেমন চেয়ারে বসে সিটেড সাইড বেন্ড। এক্ষেত্রে চেয়ারে বসে হাত দুটো মাথার উপর সোজা করে তুলে একবার ডান দিকে হেলুন কোমর থেকে, আর একবার বাঁদিকে হেলুন। প্রতিবারই পাঁচ পর্যন্ত গুনবেন। খেয়াল রাখবেন যাতে কোমরে চাপ পড়ে। এইভাবে প্রথমে দশবার অভ্যাস করুন। তারপর বাড়াবেন। এছাড়া আছে সিটেড ক্রাঞ্চ। এক্ষেত্রে একটা চেয়ারের উপর বসে চেয়ারের হাতলটা ধরে নিন। এবার শ্বাস ছাড়তে ছাড়তে পেট ভেতর দিকে টানতে থাকুন এবং সামনে ঝুঁকে পড়ুন। তারপর একটুক্ষণ শ্বাসটা বন্ধ রাখুন। এরপর শ্বাস আস্তে আস্তে ছাড়তে ছাড়তে সোজা হয়ে বসুন। এইভাবে তিনবার পর্যন্ত করতে পারেন। এক একবারে দশ বা কুড়ি পর্যন্ত গুনতে গুনতে শ্বাস টানবেন তারপর তা বন্ধ রেখে ক্রমশ ছাড়বেন। এরপর লেগ ক্রিসক্রস এক্সারসাইজ। অর্থাৎ চিত হয়ে শুয়ে পড়ুন। তারপর পা দুটো পঁয়তাল্লিশ ডিগ্রি উপরে তুলুন। এরপর কাঁচি চালানোর মতো তা একে অপরের উপর তুলুন ও নামান। এইভাবে দশবার করে তিনটে সেট করুন। পায়ের আর একটা ভালো ব্যায়াম হল লেগ রেইজ। এতেও পেটের মাসল কমবে। এক্ষেত্রে চিত হয়ে শুয়ে একটা পা পঁয়তাল্লিশ ডিগ্রি তুলবেন আবার নামাবেন। একইভাবে অন্য পা-ও করবেন। এই এক্সারসাইজটা যখন অভ্যাস হয়ে যাবে তখন আর একটা এক্সারসাইজ করবেন, টো টাচ। এক্ষেত্রে চিত হয়ে শুয়ে হাত দুটো কানের পাশ দিয়ে সোজা করে তুলে দিন। তারপর ডান এবং বাঁ পা একসঙ্গে তুলুন, নৌকোর মতো করে। তারপর হাত দিয়ে পায়ের বুড়ো আঙুলটা ধরুন। এরপর আস্তে আস্তে শুয়ে পড়ুন। এইভাবে তিনটে সেট অভ্যাস করুন। তবে এই এক্সারসাইজটা একটু সইয়ে সইয়ে করাই ভালো। পেটে যেন টান না পড়ে সেদিকে খেয়াল রাখবেন। 
এই ব্যায়ামগুলো বেশ আয়ত্তে এসে গেলে পরের এক্সারসাইজটা হল প্ল্যাংক। এই এক্সারসাইজটা খাটের উপরেও করতে পারেন। এর জন্য প্রথমে উপুড় হয়ে শুয়ে পড়ুন। তারপর হাত দুটো মুঠো করে কনুই আর হাতের উপর ভর দিয়ে টোয়ের সাহায্যে গোটা শরীরটা কোমর থেকে উপরে তুলে ফেলুন খাটের সমান্তরাল রেখে। এবার শ্বাস টানতে টানতে পেটটা ভেতর দিকে ঢোকাতে থাকুন। যতটা সম্ভব পেট ভেতর দিকে টানুন। মনে করুন, যেন পেট পিঠে এসে ঠেকছে। এইভাবে পেট টেনে রেখে শ্বাসবন্ধ করে প্রথমে দশ সেকেন্ড পরে কুড়ি সেকেন্ড পর্যন্ত থাকুন। তারপর আস্তে আস্তে শ্বাস ছাড়তে ছাড়তে পেট রিল্যাক্স করুন। এইভাবে তিন সেট করুন। এর সঙ্গে জুড়ে দিন ব্রিস্ক ওয়াকিং। দিনে অন্তত চল্লিশ মিনিট হাঁটতে হবে। যদি একসঙ্গে চল্লিশ মিনিট হাঁটার সময় না পান তাহলে ভেঙে ভেঙে হাঁটুন। 
এছাড়া একটা দাঁড়ানো এক্সারসাইজও করতে হবে। দেওয়ালের দিকে পিঠ করে দাঁড়াতে হবে। তার থেকে দেড় হাত মতো এগিয়ে দাঁড়াবেন। হাত দুটো সামনের দিকে সোজা করে মেলে দিন। তারপর কোমর থেকে শরীরটা টুইস্ট করে যে কোনও একদিকে ঘুরিয়ে দেওয়ালে হাত ছোঁয়ানোর চেষ্টা করুন। ওই অবস্থায় এক থেকে দশ গুনে আবারও আগের অবস্থায় ফিরে যান। এইভাবে দু’দিকেই শরীরটাকে বেঁকিয়ে এই ব্যায়ামটা অভ্যাস করুন। দেখবেন পেটের বাড়তি মেদ কমবেই। 
ডারউইন সেই কবেই বলে গিয়েছিলেন, সারভাইভাল অব দ্য ফিটেস্ট-এর কথা। এযুগে জীবনযাপনের ক্ষেত্রে সেটা খুবই প্রযোজ্য। এখনকার প্রতিযোগিতার যুগে যেসব দিক দিয়ে ফিট তারই সবচেয়ে বেশি কদর। অতএব আপনার কাজে আপনি দক্ষ হলেই চলবে না, সঙ্গে চাই শারীরিক সুস্থতাও। এবং সেক্ষেত্রেই এক্সারসাইজের প্রয়োজন। এই কথাটা যেমন সত্য, তেমনই এটাও বলা দরকার যে, এই এক্সারসাইজ করার কোনও ধরাবাঁধা সময় নেই। আপনি যখন সময় করতে পারবেন তখনই এক্সারসাইজ করুন। শুধু খেয়াল রাখবেন তা করার সময় পেট যেন ভর্তি না থাকে। খাওয়ার মোটামুটি ঘণ্টা দুয়েক পর থেকেই এক্সারসাইজ করা যায়। এবার প্রশ্ন হল কে কতক্ষণ এক্সারসাইজ করবেন? এক্ষেত্রে বলা যায় নিজের প্রয়োজন অনুযায়ী এক্সারসাইজ করুন। যদি আপনি অতিরিক্ত মোটা হন তাহলে দিনে এক ঘণ্টা এক্সারসা‌ইজ করুন। যদি আপনার স্বাস্থ্য মাঝারি হয় তাহলে দিনে পঁয়তাল্লিশ মিনিট ব্যায়াম করুন। আর মোটাও নয় আবার রোগাও নয়— এমন চেহারার অধিকারী হলে দিনে কুড়ি মিনিট এক্সারসাইজ যথেষ্ট।     
বাচ্চাদের ওবেসিটি কিন্তু সম্পূর্ণই শহুরে রোগ। আর এটা লাইফস্টাইলের জন্যই হয়। এখন বাচ্চারা স্কুল, টিউশন এবং বাড়ি এই রুটিনে চলে। আর সেই কারণেই তাদের খেলাধুলোর কোনও সময় নেই। ফলে অযথা মোটা হয়ে যাচ্ছে তারা। বাবা মায়েরা ছুটছেন জিম বা যোগাসনের পিছনে। কিন্তু তার বদলে যদি দিনে এক ঘণ্টা খেলাধুলো করে তাহলেই মোটা হয়ে যাওয়ার কোনও সমস্যাই থাকবে না। বাচ্চাকে তো বটেই, বাবা-মাকেও এই বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে। তাছাড়া বাচ্চাদের জন্য উপযুক্ত এক্সারসাইজ হল সাইক্লিং। দিনে অন্তত আধ ঘণ্টা বাচ্চাকে সাইকেল চালাতে দিন। স্কুল যদি বাড়ির কাছাকাছি হয় তাহলে সাইকেলে চড়েই সে পথ পাড়ি দিক শিশু। গরমের ছুটিতে সুইমিংয়ে ভর্তি করে দিন। শীতে ব্যাডমিন্টন খেলতে দিন। যদি ক্রিকেট খেলার মাঠ থাকে তাহলে তা-ই খেলুক। কিছুই না পারলে দশ পাক ছুটে নিক। যদি মনে করেন, জিমন্যাস্টিক শেখাবেন তাহলে তাও করতে পারেন। মোট কথা বাচ্চাকে খেলাধুলোয় মত্ত রাখুন। আলাদা করে এক্সারসাইজ করানোর চেয়ে তা ঢের ভালো। আর একটা কথা, জাঙ্ক ফুড বাদ দিতে হবে। কেনা খাবার একদম বন্ধ করে দিন। আপনারাও খাবেন না। তাহলেই দেখবেন বাচ্চার শরীর আপনিই ফিট থাকবে। 
খাওয়াদাওয়া বা ডায়েট বিষয়ে বিস্তারে বলার নেই, কিন্তু খাওয়ার পর কিছু নিয়ম আমাদের পালন করতে হবে ফিটনেস বজায় রাখার জন্য। ইংরেজিতে একটা কথা বলা হয় রাতের খাবারের পর এক মাইল হাঁটা জরুরি। আমাদের দেশের আবহাওয়ায়, জীবনযাত্রার ধরন অনুযায়ী বা পরিবেশের অসুবিধের জন্য হয়তো ডিনারের পর রাস্তায় নেমে হাঁটা সম্ভব হয় না, তাই বলে আমাদের যেটা গড়পরতা অভ্যাস, রাতের খাওয়া সেরেই টিভির সামনে বসে পড়া, অথবা ফোন নিয়ে খাটে উঠে শুয়ে পড়া— এই অভ্যাস ত্যাগ করতে হবে। বরং রাতে খাওয়ার পর অন্তত আধ ঘণ্টা ঘরেই ঘোরাঘুরি করে টুকটাক কাজ করুন। খাবার টেবিল মুছে নিন, গ্যাসের চারপাশ ও রান্নাঘর পরিষ্কার করে রাখুন। জল ভরুন। অফিস থাকলে পরের দিনের পোশাকটা বের করে রাখুন। প্রয়োজনে ইস্ত্রি চালিয়ে নিন— এই আর কী। এর পর বাকি আধ ঘণ্টা সোফায় বা চেয়ারে বসে একটু রিল্যাক্স করুন। টিভি চালিয়ে দিতে পারেন, গান চালাতে পারেন। তারপর এ কঘণ্টা কেটে গেলে শুতে যান। এই নিয়মটা মেনে চলা খুবই জরুরি। 
এবার ধরুন আপনার হাতে কোনও সময়ই নেই, জিমে যেতে পারছেন না, অফিসেও বসে কাজ করেন। তাঁরা কী করবেন? তাঁদের জন্য কিছু অ্যারোবিক্স মুভমেন্ট রাখা যেতেই পারে। তার মধ্যে সবচেয়ে ভালো এবং উপকারী হল নাচ। যদি আগে থেকেই ক্ল্যাসিকাল ডান্স আপনার জানা থাকে তাহলে তো কথাই নেই, অভ্যাসটা ছাড়বেন না। সামান্য অবসর সময়েও কোনও একটা গান বা মিউজিক চালিয়ে ক্লাসিকাল নৃত্যের স্টেপগুলো অভ্যাস করুন। মোটামুটি মিনিট পনেরো বা কুড়িই তা অভ্যাস করা যথেষ্ট। যদি ক্লাসিকাল নাচের প্রশিক্ষণ না থাকে তাহলে ইউটিউবে জুম্বা ডান্স চালান এবং সেই স্টেপগুলো দেখে দেখে অভ্যাস করুন। তাতেই কাজ হবে। এই ধরনের এক্সারসাইজ কিন্তু পোস্ট অপারেশনের ক্ষেত্রেও খুবই ভালো। এগুলো শরীরের বাড়তি মেদ ঝরাতে সাহায্য করে  এবং শরীরের কোনও ক্ষতি হয় না। পোস্ট অপারেশন এই ধরনের নাচের মাধ্যমে ব্যায়াম শুরু করে তারপর একটু কঠিন ফ্রি হ্যান্ড এক্সারসাইজে যেতে পারলে সবচেয়ে ভালো ফল পেতে পারেন।   
4d ago
কলকাতা
রাজ্য
দেশ
বিদেশ
খেলা
বিনোদন
ব্ল্যাকবোর্ড
বিশেষ নিবন্ধ
সিনেমা
প্রচ্ছদ নিবন্ধ
আজকের দিনে
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
mesh

কর্মের প্রসার ও উপার্জন বৃদ্ধির যোগ। গৃহ পরিবেশে চাপা উত্তেজনা। পেশার প্রসার।...

বিশদ...

এখনকার দর
ক্রয়মূল্যবিক্রয়মূল্য
ডলার৮৩.০৭ টাকা৮৪.৮১ টাকা
পাউন্ড১০৮.৬৫ টাকা১১২.২০ টাকা
ইউরো৯১.৫৭ টাকা৯৪.৭৬ টাকা
[ স্টেট ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া থেকে পাওয়া দর ]
*১০ লক্ষ টাকা কম লেনদেনের ক্ষেত্রে
17th     September,   2024
দিন পঞ্জিকা