শরীর ও স্বাস্থ্য

মেদ ঝরুক যোগাসনে

নিয়ম মতো যোগাসনের অভ্যাস কমিয়ে দিতে পারে পেটের বাড়তি মেদ। আসনের বিস্তারিত ব্যাখ্যা দিলেন যোগবিদ তুষার শীল। সাক্ষাৎকারে কমলিনী চক্রবর্তী।
 
বাঙালির ‘মধ্যপ্রদেশ’ বেড়ে যাওয়ার সমস্যা নতুন কোনও ঘটনা নয়। সত্যি বলতে কী, আমাদের শরীরে অতিরিক্ত মেদ জমতে শুরু করলে তার প্রকাশ পেট দিয়েই প্রথম বোঝা যায়। হাত, পা বা শরীরের অন্যত্র মেদ জমার বহিঃপ্রকাশ একটু পরে প্রকট হয়। ফলে পেটে বাড়তি মেদ জমা বিষয়ে আমাদের আগে থেকেই সচেতন হতে হবে। 
কেমন আসন করলে এই মেদ ঝরে যাবে বা জমবেই না? এক্ষেত্রে প্রথমেই বলা দরকার, পেটের মেদ কমানোর জন্য শুধুই পেট সংক্রান্ত আসন করলে কিন্তু চলবে না। বরং সারা শরীর থেকেই যাতে মেদ কমানো যায় সেই চেষ্টাই করতে হবে। তারই মধ্যে কিছু আসনের উপর প্রাধান্য দিতে হবে যেগুলো নিয়মমাফিক অভ্যাস করলে পেটের বাড়তি মেদ কমবে।
 যে কোনও আসন শুরু করার আগে শরীর গরম করে নিতে হয়। সেক্ষেত্রে কিছু আসনের মাধ্যমে ওয়ার্মআপ কীভাবে করবেন তাই দিয়েই শুরু করা যাক।   
 শিবানন্দ ভ্রমণ প্রাণায়াম: এই প্রাণায়ামটা হাঁটতে হাঁটতে করতে হয়। খুবই সহজ প্রাণায়াম, হাঁটার সময় খেয়াল করে প্রথম চারটে স্টেপ শ্বাস নিতে নিতে গেলাম। পরের চারটেতে তা ছাড়তে ছাড়তে যাব। আবারও তারপরের চারটেতে শ্বাস নেব এবং পরবর্তী চারটেতে ছাড়ব। এইভাবে খেয়াল করে শ্বাস নেওয়া এবং ছাড়াকে নিয়ন্ত্রণ করতে করতে এগতে হবে। তাতে পাঁচ মিনিট হাঁটতে হবে। তারপর হয়তো একটু হাঁপিয়ে যাবেন। তখন সাধারণভাবে দম নিতে নিতে হাঁটুন, কিন্তু থেমে যাবেন না। এইভাবে হাঁটলে ভুঁড়ি কমবেই। আর এই হাঁটা যেহেতু মূলত সহজ, তাই অপারেশনের পরেও তা আস্তে ধীরে অভ্যাস করাই যায়। 
 চেয়ার সিটিং ওয়াকিং: এটি মূলত বয়স্ক মানুষদের জন্য।  এটা ভার্চুয়াল হাঁটা। এক্ষেত্রে চেয়ারে বসে শ্বাস নিতে নিতে ডান পায়ের হাঁটু ভাজ করে বুকের কাছে তুলে নিন। তারপর শ্বাস ছাড়তে ছাড়তে তা নামান। একইভাবে বাঁ পা দিয়েও এই ব্যায়াম করুন। এটি বয়স্ক মানুষদের পক্ষে অব্যর্থ। তবে যে কেউ-ই এই আসনটি অভ্যাস করতে পারেন। 
 দণ্ডায়মান বুকের পেশির সংকোচন প্রসারণ: দুটো পায়ের মাঝে একটু ফাঁক রেখে দাঁড়ান। হাত দুটো মাটির সমান্তরাল সামনের দিকে ছড়িয়ে দিন। এরপর শ্বাস নিতে নিতে হাত দুটো উপরের দিকে তুলুন আর শ্বাস ছাড়তে ছাড়তে তা আবারও আগের পর্যায়ে নিয়ে আসুন। এইভাবে দশ পনেরোবার অভ্যাস করতে হবে। এই আসনটা একটু পরিবর্তন করে হাত তোলার সময় পায়ের গোড়ালিও তুলে নিন আবার তা নামানোর সময় গোড়ালি নামিয়ে দিন।  
 স্পট রানিং: শরীর গরম হয়ে গেল। এবার একটু পরিশ্রমসাধ্য আসনে আসা যাক। প্রথমেই বলব স্পট রানিংয়ের কথা। একই জায়গায় দাঁড়িয়ে হাত দুটো দৌড়নোর ভঙ্গিতে করে দৌড়তে হবে। এইভাবে কুড়িবার দিয়ে শুরু করে ক্রমশ বাড়িয়ে নিতে হবে। এটা হোল বডি এক্সারসাইজ। গোটা শরীরের বাড়তি মেদ এর মাধ্যমে কমবে। বয়স্করা এই আসনটাই বসে করতে পারেন। হাতল ছাড়া চেয়ারে বসে হাঁটু ভাঁজ করে শ্বাস নিতে নিতে পা বুকের কাছে তুললেন এবং শ্বাস ছাড়তে ছাড়তে পা নামালেন। এইভাবে দু’পায়ের ক্ষেত্রেই আলাদা আলাদাভাবে এই অসন অভ্যাস করবেন। মিনিট পাঁচেক দিয়ে শুরু করে ক্রমশ বাড়িয়ে নিতে হবে। 
 শয়ন অর্ধপদে কোটি চক্রাসন: চিৎ হয়ে শুয়ে পড়ুন। হাত দুটো মাথার পিছনে পেতে দিন, বালিশের মতো। এবার পা হাঁটু থেকে ভাঁজ করে নিন। এবার শ্বাস ছাড়তে ছাড়তে পা দুটোকে একপাশে ফেলে দিন। ডান পাশ দিয়েই শুরু করা ভালো। এরপর শ্বাস নিতে নিতে তা আবারও আগের পর্যায়ে ফিরিয়ে আনুন। এরপর একই নিয়মে পা বাঁদিকে ফেলে দিন এবং তা আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনুন। এইভাবে এক এক দিকে দশবার দিয়ে শুরু করুন। ক্রমশ বাড়িয়ে নেবেন।
 ভুজঙ্গাসন: উপুড় হয়ে শুয়ে পড়ুন। হাত দুটো বুকের দু’পাশে রাখুন। তারপর হাঁটুর জোরে বুকটাকে মাটির থেকে উপরে তুলে দিন। এইভাবে দশ থেকে পনেরো সেকেন্ড থাকুন। এই সময় পেটটাকে টেনে রাখবেন ভেতর দিকে। এরপর শ্বাস ছেড়ে আবার বুকটা মাটিতে ঠেকিয়ে দিন। এইভাবে দশবার অভ্যাস করুন। প্রথমে দশবার না পারলে পাঁচবার করুন। ক্রমশ বাড়িয়ে দশবার করবেন। তার চেয়েও বেশিবার পারলে তা-ই করবেন। এরপর শবাসনে বিশ্রাম নেবেন।
 ভুজঙ্গাসনে পার্শ্বমোচন: এই আসনটা পেটের মেদ কমানোর জন্য খুবই ভালো। এক্ষেত্রে ভুজঙ্গাসনের ভঙ্গিতে শরীরটাকে নিয়ে কোমর থেকে টুইস্ট করে তা ডান দিকে নিয়ে যান। এইভাবে দশবার করুন। তারপর আবার সোজা হয়ে কোমর বেঁকিয়ে বাঁ দিকে নিয়ে যান। এইভাবে দশবার করুন। এক্ষেত্রে খেয়াল রাখবেন কোমরে যেন কোনওভাবেই চোট না লাগে। কোমর এমনভাবে মোচড়াবেন যাতে পা এবং বাকি শরীর না বেঁকে যায়। 
 উত্থানপদাসন: চিত হয়ে শুয়ে পড়ুন। হাত দুটো দু’পাশে রাখুন। এরপর শ্বাস নিতে নিতে দুটো পা একসঙ্গে মাটি থেকে তুলে নিন। তারপর তা মাটি থেকে পঁয়তাল্লিশ ডিগ্রি অ্যাঙ্গেলে রেখে শ্বাস আটকে দশ থেকে পনেরো গুনুন। এই সময় পেটটাকেও ভেতর দিকে টেনে নেওয়ার চেষ্টা করবেন। এরপর আবার শ্বাস ছাড়তে ছাড়তে পা নামিয়ে দিন। এইভাবে যতবার পারবেন অভ্যাস করুন। যদি হাত দু’পাশে রেখে এই আসন করতে কষ্ট হয়, তাহলে হাত দুটো থাইয়ের তলায় দিয়ে দিন। দেখবেন পা তুলতে খুব একটা অসুবিধে হবে না। 
 পশ্চাৎ অর্ধচন্দ্রাসন: এবার উঠে দাঁড়ান। পা দুটোকে সামান্য ফাঁক করে দাঁড়াবেন। এরপর শ্বাস নিতে নিতে হাত দুটো কানের দু’পাশে সোজা তুলে দিন। এবার হাত দুটো একে অপরের সঙ্গে লাগিয়ে নিন। আঙুল গলিয়ে দুটো হাত জোড়া করে নিন। তারপর পিছনদিকে যতটা সম্ভব হেলিয়ে দিন শরীরটা। এইভাবে শ্বাস টেনে রেখে দশ সেকেন্ড শরীরটাকে হোল্ড করুন। তারপর শ্বাস ছাড়তে ছাড়তে সোজা হয়ে যান। এইভাবে যতবার পারবেন অভ্যাস করুন। 
 পার্শ্ব অর্ধচন্দ্রাসন: দুটো পা ফাঁক করে দাঁড়ান। এবার শ্বাস নিতে নিতে হাত দুটো মাথার উপর তুলে তা জড়ো করে নিন। তারপর ওই অবস্থায় শ্বাস আটকে রেখে শরীরটা ডান দিকে হেলিয়ে দিন। এই অবস্থায় শরীরটাকে ধরে রাখুন দশ সেকেন্ড। তারপর সোজা হয়ে যান, শ্বাস ছাড়তে ছাড়তে। একই পদ্ধতিতে বাঁ দিকে হেলুন।
 দণ্ডায়মান পদহস্তাসন: সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে হাত দুটো উপর দিকে তুলে একে অপরের সঙ্গে আঙুলের সাহায্যে আটকে নিন। এবার শ্বাস নিতে নিতে সামনের দিকে ঝুঁকে পায়ের বুড়ো আঙুল ছুঁয়ে ফেলুন। হাঁটু যেন না ভাঙে সেদিকে খেয়াল রাখবেন। এরপর শ্বাস ছাড়তে ছাড়তে সোজা হয়ে দাঁড়ান। এইভাবে যতবার সম্ভব অভ্যাস করুন। এই আসনটা করার সময় পেটটাকে ভেতর দিকে টেনে রাখার চেষ্টা করুন।
 শয়নে পশ্চিমোত্তনাসন: চিত হয়ে শুয়ে পড়ুন। এরপর হাত দুটো মাথার পিছন দিকে পেতে দিন। তারপর পা দুটো হাঁটু থেকে ভাঁজ করে নিন। এবার শ্বাস ছাড়তে ছাড়তে শরীরটাকে কোমর থেকে তুলে কপালটা হাঁটুতে ঠেকান। তারপর শ্বাস নিতে নিতে আবারও চিত হয়ে শুয়ে পড়ুন। এইভাবে দশবার দিয়ে শুরু করে ক্রমশ বাড়িয়ে নিন।
 বজ্রাসনে বসে কপালভতি: বজ্রাসনে বসুন। এরপর শ্বাস নিতে নিতে পেটটাকে ভেতর দিকে টেনে নিন। তারপর শ্বাস ছাড়তে ছাড়তে তা রিল্যাক্স করুন। এইভাবে পাঁচ মিনিট দিয়ে শুরু করে ক্রমশ বাড়াতে থাকুন। 
এই আসনগুলো নিয়ম করে অভ্যাস করলে অবশ্যই পেটের মেদ কমবে। তবে সেই নিয়মের ত্রুটি হলে কিন্তু চলবে না। মনে রাখতে হবে, ওজন কমানো কোনও ম্যাজিক নয়। মুহূর্তে তা কমে না। দিনে অন্তত কুড়ি মিনিট থেকে আধ ঘণ্টা টানা আসনগুলো অভ্যাস করুন। ক্রমশ তা বাড়িয়ে পঁয়তাল্লিশ মিনিট থেকে এক ঘণ্টা পর্যন্ত করবেন। এছাড়াও যখনই সময় পাবেন তখনই একটু জোরে হাঁটবেন। হাঁটার মতো এক্সারসাইজ আর হয় না। নিয়ম ও সময় মেনে খাওয়াদাওয়া করুন। অভ্যাস মতো যোগাসন করুন আর রোজ অন্তত চল্লিশ মিনিট হাঁটুন। দেখবেন ভুঁড়ি গায়েব। 
4d ago
কলকাতা
রাজ্য
দেশ
বিদেশ
খেলা
বিনোদন
ব্ল্যাকবোর্ড
বিশেষ নিবন্ধ
সিনেমা
প্রচ্ছদ নিবন্ধ
আজকের দিনে
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
mesh

কর্মের প্রসার ও উপার্জন বৃদ্ধির যোগ। গৃহ পরিবেশে চাপা উত্তেজনা। পেশার প্রসার।...

বিশদ...

এখনকার দর
ক্রয়মূল্যবিক্রয়মূল্য
ডলার৮৩.০৭ টাকা৮৪.৮১ টাকা
পাউন্ড১০৮.৬৫ টাকা১১২.২০ টাকা
ইউরো৯১.৫৭ টাকা৯৪.৭৬ টাকা
[ স্টেট ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া থেকে পাওয়া দর ]
*১০ লক্ষ টাকা কম লেনদেনের ক্ষেত্রে
17th     September,   2024
দিন পঞ্জিকা