শরীর ও স্বাস্থ্য

সব বয়সেই ঘাড়ে ব্যথা বাড়ছে কেন?
ডাঃ ইন্দ্রজিত্‍ সর্দার

 

আজকাল কমবয়সি ছেলেমেয়েদের মধ্যে ঘাড়ে ব্যথার প্রকোপ বেড়ে গিয়েছে অনেকগুণ। চাকুরিরতরা তো বটেই, এমনকী যাঁরা সেভাবে ঘর থেকে বেরন না, তাঁদের মধ্যেও বেড়ে গিয়েছে ঘাড়ে ব্যথার প্রকোপ।
প্রশ্ন হল কেন হঠাত্‍ করে সার্ভাইক্যাল অংশে ব্যথার প্রকোপ গেল বেড়ে। সার্ভাইক্যাল স্পন্ডাইলোসিসের সমস্যা আগেও ছিল। তবে এত বাড়াবাড়ি রকমের প্রকোপ দেখা যায়নি।
এই কয়েকদিন আগেও বলা হতো, শুধুমাত্র আইটি সেক্টরের ছেলেমেয়েরাই সার্ভাইক্যাল স্পন্ডাইলোসিস রোগে আক্রান্ত হয়। তবে যত সময় এগচ্ছে, আমরা দেখতে পাচ্ছি সাধারণ ঘরের ছেলেমেয়েরাও আক্রান্ত হচ্ছে সার্ভাইক্যাল স্পন্ডাইলোসিস-এ। আসলে এখন আমরা বাইরের দুনিয়ার খবর রাখার জন্য শুধুমাত্র সংবাদপত্রের উপর নির্ভর করি না। মোবাইল, ল্যাপটপের উপর নির্ভরশীলতা বেড়েছে অনেকখানি।
আজকাল বাড়িতে সোফায় বসে ল্যাপটপে কাজ করাই হোক বা দেশ-দুনিয়ার খবর দেখাই হোক, দেহভঙ্গিমা জনিত ত্রুটির কবলে আমরা সকলেই পড়ি। কেউ কোলে ল্যাপটপ রেখে কাজ করেন ঘাড় ধনুকের মতো বাঁকিয়ে। কেউ সোফার হ্যান্ড রেস্ট-এ ল্যাপটপ রেখে ঘাড় বাঁকিয়ে কাজ করতে থাকেন। তাতেও সমস্যা হওয়ার আশঙ্কা থাকে।
কাজের সময়কালও গিয়েছে বেড়ে। শুধু আইটি সেক্টরই নয়, অন্য ধারার অফিস কাছারিতেও কাজ করার সময় বেড়ে গিয়েছে। ৮ ঘণ্টার বদলে ৯ ঘণ্টা কাজ করতে হচ্ছে নানা জায়গায়। কখনও কখনও সেই সময়কাল বেড়ে গিয়ে ১০-১১ ঘণ্টাও হয়ে যাচ্ছে! এই দীর্ঘসময় জুড়ে একজন ব্যক্তিকে বসে থাকতে হচ্ছে চেয়ারে। এই বিরাট সময়কাল চেয়ারে বসে কাজ করলে শরীরে কিছু না কিছু প্রভাব পড়বেই। বিশেষ করে ঘাড়ে বা মেরুদণ্ডের সার্ভাইক্যাল অংশে এমন প্রভাব পড়ার আশঙ্কা থাকে যথেষ্ট বেশি।
এখানেই শেষ নয়। টেবিলে কম্পিউটার মনিটরের অবস্থান, হাতের অবস্থান, কি-বোর্ডের অবস্থান সঠিক না হলে তার প্রভাব শিরদাঁড়ায় পড়বেই। বিশেষ করে কব্জির জন্য রেস্ট না থাকলে, কনুইয়ের জন্য হাতল না থাকলে বিপদ। এছাড়া বসার সময় মেরুদণ্ড সোজা রাখা দরকার। কম্পিউটারের মনিটর থাকা দরকার চোখের সোজাসুজি। এই সমস্ত বিষয়গুলির মেলবন্ধন না হলেই একটা সময় ঘাড়ে ব্যথার প্রকোপ প্রকাশ পেতে বাধ্য। 
ঘাড়ে ব্যথা বৃদ্ধি পাওয়ার আরও একটা বড় কারণ হল অবৈজ্ঞানিক উপায়ে মোবাইল ব্যবহার বেড়ে যাওয়া। ঘরে বসে, বাসে ট্রেনে, গাড়িতে যাতায়াতের সময় ঘণ্টার পর ঘণ্টা ধরে ছেলে-মেয়ে, বাচ্চা-বুড়ো সকলে ঘাড় নিচু করে দেখে যায় মোবাইলের স্ক্রিনে ভেসে থাকা রিলস! এমনকী শুয়ে থাকার সময়েও মোবাইলেই থাকে চোখ। কত মানুষ রাত জেগে দেখেন এপিসোডের পর এপিসোড। সেই সময় মোবাইল ব্যবহারের ভঙ্গি সঠিক থাকে না। কেউ বিছানায় উপুড় হয়ে শুয়ে স্মার্টফোন দেখেন, কেউ ঘাড় বাঁকিয়ে রাখেন দীর্ঘসময়। ভঙ্গিমা বিজ্ঞানসম্মত হয় না সবসময়। ঘাড়ের উপর চাপ পড়ে।
এছাড়া আগে মেয়েদের তুলনায় ছেলেদের মধ্যে সার্ভাইক্যাল স্পন্ডাইলোসিসের সংখ্যা কম ছিল। এখন ছেলেদের মধ্যে সার্ভাইক্যাল স্পন্ডাইলোসিসের সংখ্যা বেড়েছে। 
কারণ অস্টিওপোরোসিসের মাত্রাও বেড়েছে আগের তুলনায়। রোদে বেরিয়ে কাজ করার প্রবণতা কমেছে মানুষের। বিশেষ করে ওয়ার্ক ফ্রম হোম চালু থাকায় একটানা বেশ কয়েকদিন বাড়িতে বসে কাজ করে কেটে যাচ্ছে দিন। গায়ে রোদ লাগছে না। হচ্ছে ভিটামিন ডি-এর ঘাটতি। হাড় নরম হচ্ছে। আর তার উপর যে সমস্ত কার্যকলাপ আমরা মোবাইল, ল্যাপটপ নিয়ে করছি, তার প্রভাব পড়ছে ঘাড়ের হাড়ে বা সার্ভাইক্যাল অংশে। হা়ড়ের উপর হাড় চেপে বসছে। আর আমরা জানি এই মেরুদণ্ডের মধ্যে দিয়েই গিয়েছে স্পাইনাল কর্ড। এই স্পাইনাল কর্ড থেকেই স্নায়ুর অন্যান্য শাখাগুলি বেরয় শরীরের অন্যান্য অঙ্গে। তাই ঘাড়ের অংশের হাড়ের অবস্থানের বদল ঘটলে বা ক্ষয়প্রাপ্ত হলে সন্নিহিত নার্ভের উপর চাপ পড়ে ও তার ফলে ঘাড়ের সঙ্গে কাঁধ, হাতেও ব্যথা হতে থাকে। কারও কারও প্রবল মাথা ঘোরার মতো লক্ষণও প্রকাশ পায়। 
অনেকসময় এই ব্যথা এতখানিই মারাত্মক আকার ধারণ করে যে নার্ভগুলি কাজও করতে পারে না। কেউ কেউ শয্যাশায়ী হয়ে পড়েন।  

শিশুদেরও ঘাড়ে ব্যথা!
বাচ্চাদের মধ্যেও আজকাল ঘাড়ে ব্যথার সমস্যা খুব বেশি মাত্রায় প্রকাশ পাচ্ছে। একটা কারণ অবশ্যই স্কুল ব্যাগ। তবে আধুনিক সময়ে কোনও শিশু ঘাড়ে ব্যথা হচ্ছে বললে বুঝতে হবে সম্ভবত তার মূল কারণ হল, ছোটদের মধ্যে মোবাইল ব্যবহারের অভ্যেস বহুগুণ বেড়েছে! খুদেগুলোর হাড় এমনিই নরম। তার উপর ভুল পদ্ধতিতে মোবাইল ব্যবহারের কারণে ঘাড়ে ব্যথার সমস্যা বাড়ছে।

বয়স্কদের জটিলতা
আজকাল বয়স্কদের মধ্যে স্পন্ডাইলোসিসের সংখ্যা বাড়ছে দ্রুত হারে। আর তার পিছনে কারণও আছে। আগে বয়স্কদের বিনোদন বলতে ছিল পাড়ায় বেরিয়ে পরিচিতদের সঙ্গে আড্ডা দেওয়া। আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে অযাচিতভাবেই ঢুকে পড়া! সেসব সংস্কৃতি এখন উধাও। বয়স্করাও এখন বাড়িতে বসে ল্যাপটপ, মোবাইলে ভিডিও দেখছেন, খবর দেখছেন, সঙ্গীত প্রতিযোগিতা সংক্রান্ত নানা অনুষ্ঠান দেখছেন! দেখছেন ঘণ্টার পর ঘণ্টা টেলিভিশন। বয়স্কদের এমনিতেই অস্টিওপোরোসিস হওয়ার একটা প্রবণতা থাকে। ফলে তাঁরাও পড়ছেন সার্ভাইক্যাল স্পন্ডাইলোসিসের সমস্যায়।

করণীয় কী
• সবসময় ঘরে আটকে থাকলে চলবে না। বাইরে বেরতে হবে। অন্তত প্রতিদিন ১০ মিনিট রোদে কাটাতে হবে। কারণ আমরা সকলেই জানি ত্বকে রোদ পড়লে তবেই ভিটামিন তৈরি হয়। শুধু ওষুধ খেয়ে লাভ হবে না।
• মোবাইল ব্যবহার নিয়ে সত্যিই সতর্ক হওয়ার সময় চলে এসেছে। দীর্ঘসময় ধরে মোবাইল, ল্যাপটপ ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকুন। এমনকী দীর্ঘ সময় ডেস্কে বসে কাজ করা থেকেও বিরত থাকা দরকার। অন্তত ঘণ্টাখানেক অন্তর চেয়ার ছেড়ে করিডোরে হেঁটে আসুন।

জটিলতা
অনেকের দীর্ঘদিনের কুঅভ্যাসের কারণে সার্ভাইক্যাল অংশের হাড়ে ক্ষয় হলে নার্ভগুলির উপর এমনই চাপ পড়ে যে শেষ পর্যন্ত অপারেশন ছাড়া গতি থাকে না। এখন কেউই সার্জারি চান না। তাই রোগ হওয়ার আগে প্রতিরোধ করা অনেক জরুরি।

জানতে হবে রোগ প্রতিরোধের উপায়
• প্রথমত মোবাইল দেখতে হলে ঘাড় গুঁজে মোবাইল দেখবেন না। হাত উপরে তুলুন। চোখের সামনে রাখুন মোবাইলের স্ক্রিন। এবার যতটুকু দরকার ততটুকু কাজ সেরে মোবাইল পকেটে পুরে নিন। মোবাইলে খবর দেখা, রিলস দেখার জন্য নির্দিষ্ট সময় করে নিন। ওই সময়টুকু বাদে হাতে মোবাইল রাখবেন না। 
• বাড়িতে দীর্ঘসময় ল্যাপটপ ব্যবহার করতে হলে আর কোলে মেশিন বসিয়ে কাজ করবেন না। বরং একটা সঠিক উচ্চতা সম্পন্ন চেয়ার ও টেবিলে ল্যাপটপ বসিয়ে কাজ করুন। কব্জি ও কনুই রাখার জন্য চেয়ার হাতল আছে কি না তাও দেখে নিন। হাঁটু থাক ৯০ ডিগ্রি কোণে। 
পা ঠেকে থাক মাটিতে। শিরদাঁড়া থাক সোজা। মনিটর থাক একেবারে চোখের সামনে। 
• বিনোদনের জন্য বই পড়ার সংখ্যা বাড়ান। 
• প্রতিদিন এক্সারসাইজ করুন। যে কোনও ফ্রি হ্যান্ড এক্সারসাইজ করুন। 
পরামর্শদাতা বিশিষ্ট অর্থোপেডিক সার্জেন
অনুলিখন: সুপ্রিয় নায়েক
4d ago
কলকাতা
রাজ্য
দেশ
বিদেশ
খেলা
বিনোদন
ব্ল্যাকবোর্ড
বিশেষ নিবন্ধ
সিনেমা
প্রচ্ছদ নিবন্ধ
আজকের দিনে
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
mesh

কর্মের প্রসার ও উপার্জন বৃদ্ধির যোগ। গৃহ পরিবেশে চাপা উত্তেজনা। পেশার প্রসার।...

বিশদ...

এখনকার দর
ক্রয়মূল্যবিক্রয়মূল্য
ডলার৮৩.০৭ টাকা৮৪.৮১ টাকা
পাউন্ড১০৮.৬৫ টাকা১১২.২০ টাকা
ইউরো৯১.৫৭ টাকা৯৪.৭৬ টাকা
[ স্টেট ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া থেকে পাওয়া দর ]
*১০ লক্ষ টাকা কম লেনদেনের ক্ষেত্রে
17th     September,   2024
দিন পঞ্জিকা