শরীর ও স্বাস্থ্য

হাওয়া বদলের স্বাস্থ্যগুণ

পরামর্শে সাইকিয়াট্রিস্ট ডাঃ ও পি সিং, ও মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডাঃ অংশুমান রায়

‘মহাবিশ্বে মহাকাশে মহাকাল-মাঝে
আমি মানব একাকী ভ্রমি, বিস্ময়ে

ভ্রমি বিস্ময়ে......’
চিত্র ১: সারা সপ্তাহ প্রচণ্ড পরিশ্রম করে রাহুল। সকাল থেকে রাত, শুধু অফিসের কাজ আর কাজ। কিন্তু সপ্তাহান্তে ছুটির দিনে তাঁকে ঘরে আটকে রাখা মুশকিল। বাইক নিয়েই কাছে পিঠে একটু ঘুরে আসেন তিনি। তাঁকে শত ফোন করলেও উত্তর পাওয়া যাবে না। 
চিত্র ২: রাহুলের অফিসেই কাজ করেন শৌভিক। বয়সও রাহুলের মতো। তিনিও প্রচণ্ড পরিশ্রম করেন। এমনকি ছুটির দিনেও তাঁকে যদি অফিসের কাজ করতে বলা হয়, তিনি তা হাসি মুখেই করে দেন। 
প্রশ্ন হল, রাহুল আর শৌভিকের মধ্যে কে বেশি ভালো কাজ করেন? বাহ্যিকভাবে দেখলে বলতে হয়, শৌভিক বেশি পরিশ্রমী। কারণ সে ছুটির দিনেও কাজ করে। কিন্তু আদতে দেখা যায়, রাহুলের কাজের গুনমান, ক্রিয়েটিভিটি অনেক বেশি। শুনতে অবাক লাগলেও এটাই সত্যি। রাহুল অনেক বেশি ভালো কাজ করেন কারণ তিনি ছুটি নেন, ঘুরতে যান। তাঁর মন, মস্তিষ্ককে নির্দিষ্ট সময়ান্তরে বিশ্রাম দেন। 
বর্তমান সময়ে সব মানুষ কেরিয়ার নিয়ে ভীষণ ব্যস্ত। প্রেসেন্টেশন, টার্গেট পূরণ – এসবই ঘুরছে মাথায়। কিন্তু এই সদাব্যস্ত জীবনে সকলের দরকার একটু ব্রেক। মাঝে মধ্যে একটু ছুটি নিয়ে ঘুরে আসা। একটু বিশ্রাম নেওয়া। এতে কাজের কোনও ক্ষতি হয় না। বরং কাজের গুণ আরও বাড়ে। শরীর আর মন দুই চাঙ্গা হয়। 

মনের উপর প্রভাব
নিত্যদিনের সেই এক রুটিন, ক্রমাগত কাজের চাপের ফলে আমাদের মন অবসন্ন হয়ে পরে। এর ফলে আমাদের একাগ্রতা নষ্ট হয়, স্মৃতিভ্রম বাড়ে, আমাদের সমস্যা সমাধানের ক্ষমতা কমে আসে, স্ট্রেস বাড়ে। তাই একটা নির্দিষ্ট সময় অন্তর ছুটি নেওয়া, ঘুরতে যাওয়া খুব প্রয়োজনীয়। এতে আমরা ঠিকঠাক বিশ্রাম পাই, আমাদের ভালো ঘুম হয়। ফলে মানসিকভাবে আমরা অনেক বেশি চাঙ্গা হয়ে উঠি। 
মন চাঙ্গা হলেই ক্রিয়েটিভিটি বাড়বে। কাজ আগের থেকে বেশি ভালো হবে। একটি গবেষণায় দেখা গিয়েছে, কাজের ফাঁকে একটু উঠে পাইচারি করা, এমনকি কোথাও ঘুরতে যাওয়ার প্ল্যানিং করলেও আমাদের মন বেশ খানিকটা সতেজ হয়ে ওঠে। আমাদের মস্তিষ্ক থেকে ডোপোমিনের মতো হ্যাপি হরমনের ক্ষরণ বাড়ে। 

শরীরের ওপর প্রভাব
স্ট্রেস আমাদের শরীরের জন্য একেবারেই ভালো নয়। স্ট্রেসের কারণে করটিসল ও এপিনেফ্রিনের মতো হরমোন ক্ষরিত হয়। এতে ব্লাড প্রেশার বাড়ে। সেই সঙ্গে বাড়ে হৃদযন্ত্রের নানা রোগের ঝুঁকিও। স্ট্রেসের ফলে আমাদের ঘুম কম হয়। এতে শরীর খুব তাড়াতাড়ি অবসন্ন হয়ে পরে। এছাড়া এক নাগাড়ে বসে কাজ করার ফলে আমাদের মেদও বাড়ে। দুর্বল হয়ে পরে আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা। আমেরিকায় একটা সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, যে সকল ব্যক্তি ছ’বছরের মধ্যে খুব কম সময়ের জন্য ঘুরতে গিয়েছেন, তাঁদের হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেড়েছে প্রায় আট গুণ। একটা নির্দিষ্ট সময় অন্তর ঘুরতে গেলে স্ট্রেস অনেক কমে যায়। ফলে অনুষাঙ্গিক রোগের ঝুঁকিও কমে।  

বছরে কবার ছুটি নেওয়া দরকার?
একটা সময় ছিল, দ্রুত রোগমুক্তির জন্য চিকিৎসকরা একটু হাওয়া বদল করে আসতে বলতেন। বর্তমানে কোনও রোগের চিকিৎসা হিসেবে তা আর বলা হয় না ঠিকই। তবে শরীরকে নীরোগ রাখতে ঘুরতে যাওয়াটা খুব দরকার। আগে হাওয়া বদল করতে মানুষ বেশ কয়েকমাসের জন্য যেতেন। এতে শহরের বিষাক্ত বায়ু থেকে মুক্তি মিলত। তুলনামূলক নির্মল বাতাসে শ্বাস নেওয়ার ফলে ফুসফুস ভালো থাকত। খ্যাদ্যাভ্যাস, জল পরিবর্তনের ফলে পেটও ভালো হতো। কিন্তু এখনও তো কারও পক্ষে মাসের পর মাস সব ছেড়ে বাইরে গিয়ে থাকা সম্ভব নয়। তবে একটা নির্দিষ্ট সময় অন্তর ঘুরতে যাওয়া আবশ্যক। চার পাঁচ মাস অন্তর বা বছরে দুবার দিন সাতেক করে ছুটি নিলে ভালো। এছাড়া সপ্তাহান্তেও যদি কাছাকাছি কোথাও বেরিয়ে আসতে পারলে আরও উত্তম। 
তবে ছুটি মানে ছুটিই। অনেকেই ঘুরতে গিয়েও ফোন বা ল্যাপটপে অফিসের কাজ নিয়ে বসেন। অধিকাংশ আবার সোশ্যাল মিডিয়ায় মজে থাকেন। এসব করলে কোনও লাভ হবে না। ঘুরতে গিয়ে পরিবেশ উপভোগ করুন। ফোন, ল্যাপটপও সেই সময় ছুটিতে থাক না। আবার অনেকে ঘুরতে গিয়ে চরকিপাকের মতো আজ এখান, কাল সেখান করে বেরান। এতে অনেক নতুন জায়গা দেখা হয় ঠিকই, কিন্তু বিশ্রাম নেওয়ার উদ্দেশ্যটাই পূরণ হয় না। অল্প সাইড সিয়িং হোক, কিন্তু রেস্ট হোক আরও বেশি।
লিখেছেন সায়ন মজুমদার
22d ago
কলকাতা
রাজ্য
দেশ
বিদেশ
খেলা
বিনোদন
ব্ল্যাকবোর্ড
বিশেষ নিবন্ধ
সিনেমা
প্রচ্ছদ নিবন্ধ
আজকের দিনে
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
mesh

বহু প্রচেষ্টার পর আটকে থাকা কাজের জটিলতা মুক্তি। কৃষিজ পণ্যের ব্যবসায় বিশেষ উন্নতি। আয় বাড়বে।...

বিশদ...

এখনকার দর
ক্রয়মূল্যবিক্রয়মূল্য
ডলার৮৩.১৫ টাকা৮৪.৮৯ টাকা
পাউন্ড১০৭.৭৯ টাকা১১১.৩৩ টাকা
ইউরো৯০.৯৫ টাকা৯৪.১৩ টাকা
[ স্টেট ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া থেকে পাওয়া দর ]
*১০ লক্ষ টাকা কম লেনদেনের ক্ষেত্রে
দিন পঞ্জিকা