শরীর ও স্বাস্থ্য

স্টেরয়েড কখন উপকারী কখন ক্ষতিকর?

স্টেরয়েড নিয়ে আমাদের ভীষণ আতঙ্ক। সকলের ধারণা যে এটি একটি ভয়ঙ্কর ওষুধ! অথচ এই ভয়ংকর ওষুধেই দিনের পর দিন লক্ষ লক্ষ লোকের প্রাণ বেঁচে যাচ্ছে সারা পৃথিবীতে। করোনা মহামারীর কথাই ধরা যাক। কত ধরনের অ্যান্টিবায়োটিক, কত রকম ভাইরাস নিধনকারী ওষুধের নাম আমরা এই সময় শুনলাম। বহু টাকার ব্যবসাও হল। ডক্সিসাইক্লিন, এজিথ্রোমাইসিন, এমনকী নানা ধরনের ভিটামিন অবধি করোনার সময় বাজার থেকে হাওয়া হয়ে গেল। রেমসিডিভির বলে একটি ওষুধ তো কোটি কোটি টাকার ব্যবসা করে ফেলল। বছর দেড়েক এমন চলার পরে বিশ্ব  স্বাস্থ্য সংস্থা পরিষ্কার জানিয়ে দিল, করোনা নিরাময়ে এগুলো সেই অর্থে কোনও কার্যকরী ওষুধ নয়। সেরা কার্যকরী ওষুধ হল স্টেরয়েড গ্রুপের ওষুধ। নিজের কথাই বলি। করোনা আক্রান্ত হওয়ার পর প্রবল বাড়াবাড়ির সময়ে প্রথম পাঁচ দিন আমাকে স্টেরয়েডেই চুবিয়ে রাখা হয়েছিল। অর্থাৎ  ইন্ট্রাভেনাস স্টেরয়েড, যা দিনে প্রায় চার পাঁচ ঘন্টা ধরে চলত। সঙ্গে চলত অন্যান্য নানা ধরনের ওষুধও। তবে আমি মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে এসেছিলাম।
চিকিৎসা বিজ্ঞানে বহুনিন্দিত এবং বহুবন্দিত ওষুধ হলো স্টেরয়েড। কখনও জীবন দায়ী, কখনও জীবন সংহারক। কাকে বলে স্টেরয়েড?এটা আসলে এক ধরনের হরমোন। রাসায়নিক দিক থেকে হরমোনকে প্রোটিন এবং স্টেরয়েড, এই দুই ভাগে ভাগ করা যায়। প্রোটিন হলো গ্রোথ হরমোন, থাইরয়েড গ্ল্যান্ড ও অগ্ন্যাশয়ের গ্ল্যান্ডের হরমোন ইত্যাদি। আর স্টেরয়েড হরমোন হল আমাদের দুই কিডনির উপরে অবস্থিত দুটো অ্যাড্রিনাল গ্ল্যান্ড  নিঃসৃত হরমোন।
স্টেরয়েড লাইফ সেভিং ড্রাগ, কিন্তু অপপ্রয়োগ হলে লাইফ কিলিং ড্রাগও বটে! নানা ধরনের প্রদাহ  বা ইনফ্ল্যামেশন, অ্যালার্জি, চর্মরোগ, চোখের অসুখ, বাতরোগ, বিভিন্ন ধরনের ক্যান্সার, হঠাৎ শক, জ্ঞানলোপ, রক্তচাপ কমে যাওয়া, হাঁপানি সহ নানা রোগে স্টেরয়েড দারুণ কাজ করে। সঠিক রোগ নির্বাচন করে সঠিক মাত্রায় নির্দিষ্ট দিন ধরে প্রয়োগ করলে ভালো কাজ করে স্টরয়েড। প্রায় ক্ষেত্রেই ম্যাজিকের মতো। প্রচণ্ড শ্বাসকষ্টের রোগীকে একটি মাত্র স্টেরয়েড ইনজেকশন দিয়ে ডাক্তারবাবু তার শ্বাসকষ্ট ভ্যানিশ করে দিতে পারেন। মুশকিল হল, পরবর্তীকালে সঠিক চিকিৎসা না করিয়ে ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া আকছার স্টেরয়েড খেয়ে যান অনেক রোগীই, বিশেষ করে হাঁপানি এবং বাতের রোগীরা। এর ফল প্রায় ক্ষেত্রেই মারাত্মক হয়।
স্টেরয়েডের দীর্ঘ এবং অনিয়মিত ব্যবহার থেকে নানা সমস্যা দেখা দিতে পারে। অতিরিক্ত সোডিয়াম থেকে বেড়ে যেতে পারে রক্তের চাপ। ফুলে যেতে পারে হাত-পা-মুখ। ক্যালশিয়াম ও ফসফরাস লবণ কমে গিয়ে দেখা দিতে পারে মাংসপেশির দুর্বলতা, হাড়ের ক্ষয়। এছাড়া ডায়াবেটিস, পেপটিক আলসার, ঘা শুকোতে দেরি, পুরনো রোগ নতুন করে ফিরে আসা, মহিলাদের দাড়ি-গোঁফ গজানো সহ নানা উপসর্গ দেখা দিতে পারে দীর্ঘদিন স্টেরয়েড ব্যবহারে। দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও ধীরে ধীরে ভেঙে পড়ে। সামান্য সর্দি কাশি হলেও সারতে চায় না। এত সাইড এফেক্ট সত্ত্বেও এমন কিছু জটিল রোগ আছে, যেখানে স্টেরয়েড না খেলে বেঁচে থাকাই মুশকিল! তবে মোটা হওয়ার জন্য বা বিশেষ ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য যারা স্টেরয়েড খান, তারা সাবধান! ম্যাজিক প্রত্যাশা করতে গিয়ে ট্রাজিক পরিণতি হতে পারে।
স্টেরয়েড কিন্তু সত্যিই লাইফ সেভিং ড্রাগ, যেখানে রোগীর প্রেসার-পালস ভীষণ কমে গেছে, ঘাম হচ্ছে, শ্বাসকষ্ট হচ্ছে অর্থাৎ রোগীর জীবন সংশয় দেখা দিয়েছে– সে ক্ষেত্রে স্টেরয়েড নিশ্চিত মৃত্যুর হাত থেকে রোগীকে ফিরিয়ে আনতে পারে। হাঁপানি, বাতরোগ, লিম্ফোমা অর্থাৎ লিম্ফ গ্ল্যান্ডের ক্যান্সার, সোরিয়াসিস ইত্যাদি রোগে ডাক্তারের পরামর্শমতো দীর্ঘদিন স্টেরয়েড খেতে হয়। মুখে যে স্টেরয়েড খেতে দেওয়া হয়, সেটার ডোজ ডাক্তার বাবুরা ধীরে ধীরে কমিয়ে আনেন। ধরা যাক, প্রথম সপ্তাহে তিনটে করে, তারপর দুটো করে ,তারপর একটা করে–এইভাবে। ডাক্তারের পরামর্শমতো স্টেরয়েড গ্রহণ করলে কখনওই কোনও বিপত্তি দেখা দেয় না। মুখে খাওয়া স্টেরয়েডের থেকে যেগুলো ইনহেলার বা নেজাল স্প্রে-র মাধ্যমে শরীরে নেওয়া হয়,সেগুলো অনেক অনেক বেশি নিরাপদ। দীর্ঘদিন ধরে, বছরের বছর পর নিয়ে গেলেও তেমন কোনও সাইডএফেক্টের কথা শোনা যায় না। তবে যাই করুন, ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া কখনও স্টেরয়েড ব্যবহার করবেন না।
লিখেছেন ডাঃ অমিতাভ ভট্টাচার্য
22d ago
কলকাতা
রাজ্য
দেশ
বিদেশ
খেলা
বিনোদন
ব্ল্যাকবোর্ড
বিশেষ নিবন্ধ
সিনেমা
প্রচ্ছদ নিবন্ধ
আজকের দিনে
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
mesh

বহু প্রচেষ্টার পর আটকে থাকা কাজের জটিলতা মুক্তি। কৃষিজ পণ্যের ব্যবসায় বিশেষ উন্নতি। আয় বাড়বে।...

বিশদ...

এখনকার দর
ক্রয়মূল্যবিক্রয়মূল্য
ডলার৮৩.১৫ টাকা৮৪.৮৯ টাকা
পাউন্ড১০৭.৭৯ টাকা১১১.৩৩ টাকা
ইউরো৯০.৯৫ টাকা৯৪.১৩ টাকা
[ স্টেট ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া থেকে পাওয়া দর ]
*১০ লক্ষ টাকা কম লেনদেনের ক্ষেত্রে
দিন পঞ্জিকা