অপর একজনের প্রশ্নের উত্তরে শ্রীশ্রীবাবামণি বলিলেন,—সাধু-সন্তদের মধ্যে যে কত রকমের শ্রেণী আছে, তার ইয়ত্তা নেই। এক হিসাবে একথা বলা চলে যে, যত জন সাধু, ততগুলি সাধুর শ্রেণী এই জগতে আছে। তোমার হাতের পাঁচটী আঙ্গুল যেমন এক রকম নয়, একই মঠের পাঁচটী সাধুও ঠিক তেমনি এক রকম নন। প্রত্যেকের রুচি আলাদা, প্রকৃতি আলাদা, দৃষ্টিভঙ্গী আলাদা, সুতরাং মানুষের সম্পর্কে তাঁদের সম্পর্ক-বোধ বা কর্ত্তব্যের দায়ও আলাদা। অনেক সাধুই অল্পবিস্তর পরোপকার করেন। একজন ডাক্তার বা কবিরাজ নিতান্ত কৃপণ-স্বভাবের হ’লেও যেমন নিজের অজ্ঞাতে অনেক লোকের উপকার করেন, ঠিক তেমনি একজন সাধুও নিজের অজ্ঞাতসারে মানুষের অনেক উপকার ক’রে থাকেন। সাধু নামে যাঁরা পরিচিত নন, এমন লোকেরাও অনেক সময়ে তা’ করেন। করেন তাঁরা নিজেরা মানুষ ব’লেই, মানবিকতা তাঁদের অনেক সৎকাজ করিয়ে নেয়। সাধু নামে যাঁরা পরিচিত, তাঁরা সবাই অপদার্থ, বর্ব্বর, একথা বলাও যেমন ভুল হবে, তেমন যত সাধু যত স্থানে আছেন, তাঁদের প্রত্যেকেই পরোপকারী মহাজন, কেউ আত্মসেবার সুযোগ পাবার জন্য সাধু হন নি, একথা বলাও তেমন ভুল হবে। কোথাও একজন সাধু নামে পরিচিত ব্যক্তি ঘোরতর দুষ্কর্ম করেছেন ব’লে সমগ্র সাধু-সমাজকে তুমি গাল দিতে পার না। কেউ একজন সাধুদের মত চলেন বা বলেন ব’লেই তাঁকে তোমাদের শ্মশান-সৎকার সমিতির গাড়ী ঠেলতে হবে, এই জিদ্ ভাল নয়। বিশ্বজনের প্রতি যার মমতা এসেছে, সে নিজের শক্তি-সামর্থ্য-রুচি অনুযায়ী জীবসেবা করুক, এই স্বাধীনতা তাকে নিশ্চয়ই দিতে হবে।
কুমারীর নিকট প্রেমপত্র
অপর একজনের প্রশ্নের উত্তরে শ্রীশ্রীবাবামণি বলিলেন,—মেয়েটী বুদ্ধিমতী নিশ্চয়ই এবং খুব সম্ভবত মহৎ ভাবে অনুপ্রাণিতা। নতুবা তুমি তার প্রতি আকৃষ্ট হ’তে পাত্তে না। কিন্তু অন্তরের প্রেম নিবেদন ক’রে একটী কুমারী মেয়েকে তুমি পত্র লিখবে, আর সেই কথাটী আমি প্রশ্রয়ের দৃষ্টিতে বিচার কর্ব্ব, এটা কখনো হ’তে পারে না। কুমারী তার প্রাগ্বিবাহিত জীবন-কালটুকু একান্ত ভাবেই তার পিতামাতার আশ্রিতা, রক্ষণীয়া ও প্রতিপাল্যা। তার কাছে প্রেমের ডালি নিয়ে তুমি সোজাসুজি হাজির হবে, এটা এদেশের সজ্জন-সম্মত রীতি নয়। তুমি অন্য দশ দিকে যথেষ্ট প্রশংসনীয় ব্যক্তি হ’তে পার কিন্তু তোমার এই কাজকে আমি কদাচ প্রশংসা ত’ কত্তে পার্ব্বই না, এমনকি বরদাস্ত কত্তেও আমি অক্ষম। তুমি কি এর ভবিষ্যৎ ফলাফল ভেবে দেখেছ? হয়ত এই মেয়েটীর বিবাহ ভবিষ্যতে অন্য স্থানেই হল। তোমার সঙ্গে হ’য়ে উঠলো না।
শ্রীশ্রী স্বামী স্বরূপানন্দ পরমহংসদেবের অখণ্ড সংহিতা থেকে