গৌতম মুখোপাধ্যায়: পকেটে স্মার্টফোন নেই, শহরে এমন লোক পাওয়া এখন বেশ কঠিন হয়ে পড়েছে। আর স্মার্টফোন আছে, অথচ ক্যান্ডি ক্রাশ বা পোকেমন গো-এর মতো ভিডিও গেম খেলছেন না, এমন কাউকে খুঁজে পাওয়া আরও দুষ্কর। আয়ের হিসেবে গত আট বছর ধরেই ভিডিও গেমের বাজার বিশ্বের মোট সিনেমা এবং মিউজিক-এর বাজারকে ছাপিয়ে যাচ্ছে। ২০১৯ সালে বিশ্বে ভিডিও গেমের মোট বাজার ১৫০ বিলিয়ন ডলারের বেশি হবে বলে অনুমান।
বুঝতে অসুবিধা হয় না, ক্রমবর্ধমান এই শিল্পে চাকরির সুযোগও বাড়ছে। তবে এখানে চাকরির দু’টি দিক রয়েছে। একটি কম্পিউটার সফটওয়্যারের দিক, যেটি দেখেন সফটওয়্যার বিশেষজ্ঞরা। অপর একটি দিক হল গেম-এর কুশীলব, পরিবেশ ইত্যাদির নকশা বা ডিজাইন তৈরি করা। চাহিদার সঙ্গে তাল মিলিয়ে এই ডিজিটাল গেম ডিজাইন-এর পাঠক্রম দিতে নেমে পড়েছে বিশ্বের তাবড় সংস্থা। এমন পরিস্থিতিতে ফরাসি সংস্থা ইকোল ইনটুইট ল্যাব-এর সঙ্গে একযোগে একগুচ্ছ ডিজিটাল ডিজাইন কোর্স নিয়ে এল টেকনো ইন্ডিয়া ইউনিভার্সিটি। বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষে মেঘদূত রায়চৌধুরী বললেন, ‘শুধু ভিডিও গেমই নয়, ডিজিটাল ডিজাইনের প্রয়োগ করা হয়, এমন কয়েকটি আন্তর্জাতিক মানের পাঠক্রম নিয়ে এলাম আমরা। এখন আর আন্তর্জাতিক মানের ডিজাইন কোর্স করার জন্য কলকাতার বাইরে যেতে হবে না। তা পাওয়া যাবে সেক্টর ফাইভেই। ইনটুইট ল্যাব ফ্রান্সে বা মুম্বইয়ে তাদের সেন্টারে যে কোর্স পড়াচ্ছে, সেটাই এখন কলকাতাতেও মিলবে।’
সংস্থার হেড অব দ্য ডিপার্টমেন্ট মধু আমোদিয়া বললেন, প্রাথমিকভাবে ২০২০-র জুলাইয়ে ডিজাইনের তিনটি গ্র্যাজুয়েট ডিগ্রি কোর্স এবং একটি পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ডিপ্লোমা কোর্স শুরু করছি আমরা। তিন থেকে চার বছরের গ্র্যাজুয়েট ডিগ্রি কোর্সগুলির মধ্যে রয়েছে ‘ভিস্যুয়াল কমিউনিকেশন অ্যান্ড ডিজিটাল ডিজাইন’, ‘গেম আর্ট অ্যান্ড ডিজাইন’ এবং ‘ফাইন আর্টস’। কোর্সগুলি পড়তে খরচ হবে তিন লক্ষ টাকা করে। এছাড়া রয়েছে ১৮ মাসের পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ডিপ্লোমা ইন ‘ডিজাইন অ্যান্ড ডিজিটাল কমিউনিকেশন’। এটা পড়তে খরচ হবে সাড়ে চার লাখ টাকা। এর মধ্যে ‘ফাইন আর্টস’-এর উপর কোর্সটি শুধুমাত্র কলকাতার কথা মাথায় রেখে, শিল্পের প্রতি এই শহরের ভালোবাসার কথা চিন্তা করে তৈরি করেছি আমরা। মুম্বইয়েও আমাদের নিজস্ব একটি কেন্দ্র রয়েছে। কিন্তু সেখানে শুধুমাত্র ডিপ্লোমা দেওয়া হয়। কলকাতার কেন্দ্র থেকে ডিগ্রিও পাওয়া যাবে। প্রথম বছরে প্রতিটি কোর্সে ৩০ জন করে নিয়ে ১২০ জনের ব্যাচ হবে বলে ভেবেছিলাম আমরা। কিন্তু এর মধ্যেই যে উৎসাহ দেখছি, যেভাবে পড়ুয়ারা এই কোর্সের সম্পর্কে খোঁজ নিচ্ছেন, তাতে সংখ্যাটা দেড়শো ছাপিয়ে যাবে বলে মনে হচ্ছে।
আলাপচারিতায় ইনটুইট ল্যাবের পক্ষে ক্লেমঁ ডিরক বললেন, ‘শুধু এই চারটি কোর্সই নয়। আগামী দিনে ইন্ডাস্ট্রিয়াল ডিজাইন বা প্রোডাক্ট ডিজাইনের কোর্সও আমরা শুরু করতে চলেছি। ভারত সহ এশিয়াতে এখন এর চাহিদা হু হু করে বাড়ছে। আমি নিজে আর্কিটেকচারের ছাত্র। অ্যারো স্পেস ডিজাইনে যুক্ত ছিলাম। সেখান থেকে প্রোডাক্ট ডিজাইনে চলে এসেছি। কোনও নির্মাণ বা যান্ত্রিক পদ্ধতিতে অনেক ক্ষেত্রে সহজে বিশেষ কোনও জায়গায় হাত বা কোনও যন্ত্র রাখা যায় না। কিন্তু ভিস্যুয়াল বা অ্যানিমেটেড ডিজাইনের সুবিধা হল, অ্যানিমেশনের ক্যামেরাটিকে তেমন জায়গায় সহজেই বসানো চলে। ফলে সেই জায়গায় নির্মাণ বা যন্ত্র কীভাবে চলবে বা চলছে, সে সম্পর্কে একটি ধারণা করে নিতে পারেন বিশেষজ্ঞরা। তবে এই ধরনের কোর্সের গুরুত্বপূর্ণ পূর্বশর্ত হল, শিল্প কী চায়, সেটা বোঝা।
শুধুমাত্র শিক্ষাবিদরা যদি কোর্স ডিজাইন করেন, তাহলে সেখানে অসুবিধা হতে পারে। আমাদের সুবিধা হল, এখানে প্রায় সকলেই ইন্ডাস্ট্রির সঙ্গে যুক্ত।
বিশ্বের অন্যতম সেরা ভিডিও গেম সংস্থা ইউবিসফট আমাদের ক্লায়েন্ট। ফলে পড়ুয়ারা ইউবিসফট সহ একগুচ্ছ সেরা সংস্থায় ইন্টার্নশিপের সুযোগ পাবেন।