বর্ণালী ঘোষ: মানুষের সেবা করার জন্য প্রথমেই এগিয়ে আসেন নার্সিং স্টাফরা। তাঁদের যেসব জায়গায় কাজ করতে হয়, তার মধ্যে অন্যতম হাসপাতাল, লন টার্ম কেয়ার ফেসিলিটিজ, পাবলিক হেলথ ডিপার্টমেন্টস, পাবলিক স্কুল বা মেন্টাল হেলথ। অন্যান্য পেশার মতোই জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে নার্সিং। পেশাদারী মনোভাব নিয়ে অনেকেই পড়তে আসছেন বিষয়টি নিয়ে। আবার জিএনএম নার্সিংয়ে পুরুষদের প্রবেশাধিকার হয়েছে। ফলে নার্সিং নিয়ে এখন পুরষরাও পড়তে পারছেন। এ রাজ্যে প্রতিবছর বহু সংখ্যক ছাত্র-ছাত্রী নার্সিং এর বিভিন্ন কোর্স করে থাকেন। তাতেও পেশার জগতে চাহিদা রয়েই যাচ্ছে।
রা‌জ্যে অনেকগুলি সরকারি কলেজের পাশাপাশি বেসরকারি কলেজ, প্রতিষ্ঠান থেকেও পড়ে নেওয়া যাচ্ছে নার্সিং এর বিভিন্ন বিষয়।
কোর্সগুলির মধ্যে রয়েছে—
 ডিপ্লোমা ইন জেনারেল নার্সিং মিডওয়াইফরি
তিন বছরের এই কোর্সটি করার জন্য উচ্চমাধ্যমিক বা সমতুল পরীক্ষার শতকরা নম্বর বিবেচ্য। পরীক্ষা নেওয়া হয় ওয়েস্টবেঙ্গল নার্সিং কাউন্সিল থেকে।
 অক্সিলারি নার্সিং অ্যান্ড মিডওয়াইফারি (এএনএম)
 এই কোর্সটি দু’বছরের। উচ্চমাধ্যমিক পাশ করে পড়ে নেওয়া যায় এএনএম। ইন্ডিয়ান নার্সিং কাউন্সিলের অনুমোদন নিয়ে এটি পড়ানো হয়। পড়ার জন্য বয়স হতে হবে ১৭ বছর থেকে ৩৫ বছরের মধ্যে। পরীক্ষা নেওয়া হয় ওয়েস্টবেঙ্গল নার্সিং কাউন্সিল থেকে।
 জেনারেল নার্সিং অ্যান্ড মিডওয়াইফারি (জিএনএম নার্সিং)
 তিন বছর ৬ মাসের কোর্সটি করার জন্য যে কোনও স্ট্রিমে উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় পাশ হতে হবে। ইংরেজি বাধ্যতামূলক। এছাড়া পরিবেশবিদ্যা বাদ দিয়ে মোট নম্বরের উপর মেধা তালিকা তৈরি করা হবে। ভোকেশনাল শাখার প্রার্থীদের আবেদন গ্রহণযোগ্য নয়। বয়স হতে হবে ১৭ বছর থেকে ২৭ বছরের মধ্যে। ওয়েস্ট বেঙ্গল নার্সিং কাউন্সিলের অনুমোদন নিয়ে পড়ানো হয়। সরকারি এবং বেসরকারি কলেজ থেকে পড়ে নেওয়া যায়।
 বিএসসি নার্সিং
 এটি চার বছরের কোর্স। ইংরেজি, পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন এবং জীববিদ্যা নিয়ে উচ্চমাধ্যমিক পাশ করলে আবেদন করা যায়। উচ্চমাধ্যমিকে ৫০ শতাংশ নম্বর নিয়ে এবং প্রতিটি বিষয়ে আলাদাভাবে পাশ করতে হবে। ভর্তির জন্য প্রবেশিকা পরীক্ষায় বসতে হয়। ওয়েস্ট বেঙ্গল জয়েন্ট এন্ট্রান্স বোর্ড এই পরীক্ষা নিয়ে থাকে। সরকারি কলেজে ভর্তির জন্য প্রার্থীকে বা তার অবিভাভবকে এ রাজ্যের ১০ বছরের বাসিন্দা হতে হবে। বাইরের রাজ্যের প্রার্থীরা কেবলমাত্র বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হতে পারবেন। বয়স ন্যূনতম ১৭ বছর হতে হবে।
এই কোর্সটি ওয়েস্ট বেঙ্গল ইউনিভার্সিটি অব হেলথ সায়েন্সেস এর স্বীকৃতি নিয়ে এবং ওয়েস্ট বেঙ্গল নার্সিং কাউন্সিলিং এবং ইন্ডিয়ান নার্সিং কাউন্সিলের অনুমোদন নিয়ে পড়ানো হয়।
 প্র্যাক্টিক্যাল নার্সিং (ভোকেশনাল)
 মাধ্যমিক বা সমতুল পরীক্ষায় পাশ করলে এবং ন্যূনতম ১৭ বছর বয়স হলে বেসরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে এই কোর্সটি করা যায়। সংস্থা থেকে শংসাপত্র পাওয়া যায়।
 পোস্ট বেসিক ডিপ্লোমা ইন নার্সিং
 .বিএসসি নার্সিং বা জিএনএম ছাড়াও এই কোর্সটির চাহিদা রয়েছে। এই কোর্সটি বিএসসি নার্সিং করার সঙ্গে সঙ্গে পড়ে নেওয়া যায়। কোর্সটি এক বছরের। ডিপ্লোমা কোর্সটির মধ্যে রয়েছে নিওনেটাল নার্সিং, নার্স প্র্যাক্টিশনার ইন মিডওয়াইফারি, কার্ডিও ভাসকুলার নার্সিং, নিউরো সায়েন্স ইন নার্সিং, ক্রিটিক্যাল কেয়ার নার্সিং, সাইকিয়াট্রিক নার্সিং, ডিসিএইচএনইএ। কোর্সগুলি সবই এক বছরের।
 এমএসসি নার্সিং
 এই কোর্সটি কেবলমাত্র বিএসসি নার্সিং পড়ে করে নেওয়া যায়। যে প্রতিষ্ঠানটি থেকে পড়া হবে তা যেন ইন্ডিয়ান কাউন্সিল এবং ওয়েস্ট বেঙ্গল ইউনিভার্সিটি অব হেলথ সায়েন্সের অনুমোদিত হয়। এছাড়া আইএনসি ক্রাইটেরিয়া অনুযায়ী দু’বছরের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। স্পেশালাইজেশনের মধ্যে রয়েছে- মেডিক্যাল সার্জিক্যাল নার্সিং, চাইল্ড হেলথ নার্সিং, মেটারনিটি নার্সিং বা অবস্টেটিক নার্সিং, কমিউনিটি হেলথ নার্সিং, মেন্টাল হেলথ নার্সিং।
দু’বছরের কোর্সটি পড়ার জন্য প্রবেশিকা পরীক্ষায় বসতে হয়। ইউনিভার্সিটি অব হেলথ সায়েন্সেস জয়েন্ট এন্ট্রান্স পরীক্ষাটি নিয়ে থাকে।
বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে তাঁদের যেসব কাজ করতে হয়, সেগুলি হল— ওষুধ দেওয়া, ইন্ট্রাভেনাস ওষুধ দেওয়া, দেহের তাপমাত্রা মাপা, পালস-প্রেশার দেখা, রোগীর পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার দিক দেখা, খাওয়া দাওয়ার দিকটি দেখা, অপারেশনের সময় অ্যানেস্থিয়া দেওয়ার ইনস্ট্রুমেন্ট প্রস্তুত রাখা, বিভিন্ন প্রয়োজনীয় গ্যাস প্রস্তুত রাখা, প্রত্যেকটি ইনস্ট্রুমেন্ট জীবাণুমুক্ত করে রাখা, মেডিক্যাল রেকর্ড রাখা প্রভৃতি। কাজের ভাগের মধ্যে রয়েছে ওয়ার্ডসিস্টারের কাজ, লেবার রুমের কাজ, শিশুদের জন্য বিশেষ কাজ, আইসিসিইউ, বার্ন ইউনিট-এর মতো জায়গায় বিশেষ কাজ।
বিস্তারিত তথ্যের জন্য লগ অন করা যায়-
http://www.wbnursingcouncil.org/examination.php, www.wbhealth.gov.in, www.wbuhs.ac.in