বিদ্যায় অধিক পরিশ্রম করতে হবে। ব্যবসায় যুক্ত ব্যক্তির পক্ষে দিনটি শুভ। প্রেম-প্রীতিতে আগ্রহ বাড়বে। নতুন ... বিশদ
পড়াশুনা ও গবেষণাস্তরে নৃবিজ্ঞানের চর্চা মূলত কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়কেন্দ্রিক হলেও উচ্চমাধ্যমিক স্তরে বহু বিদ্যালয়ে নৃবিজ্ঞান পড়ানো হয়। আমাদের দেশে বর্তমানে দিল্লি, পাঞ্জাব, এলাহাবাদ, লখনউ, গুয়াহাটি, রাঁচি, হায়দরাবাদ, মাদ্রাজ সহ প্রচুর বিশ্ববিদ্যালয়ে নৃবিজ্ঞানে উচ্চশিক্ষা লাভ ও গবেষণা করা যায়। পশ্চিমবঙ্গে বর্তমানে কলকাতা, বিশ্বভারতী, বিদ্যাসাগর, উত্তরবঙ্গ, সিধু কানো বিরসা এবং বারাসত রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে নৃবিজ্ঞানে এমএসসি ও পিএইচডি করার সুযোগ রয়েছে। এছাড়া বর্তমানে বিদ্যাসাগর ও বারাসত রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে এমফিল কোর্স চালু রয়েছে। এ রাজ্যে স্নাতকস্তরে অনার্স এবং জেনারেল বিষয় হিসাবে প্রায় পঞ্চাশটির অধিক কলেজে নৃবিজ্ঞান নিয়ে পড়া যায়। এর মধ্যে কয়েকটি উল্লেখযোগ্য কলেজ হল কলকাতার বঙ্গবাসী কলেজ, বনগাঁ দীনবন্ধু মহাবিদ্যালয়, হাবড়া শ্রীচৈতন্য কলেজ, নববারাকপুর আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র কলেজ, বিরাটি মৃণালিনী দত্ত মহাবিদ্যালয়, বিধাননগর কলেজ, হাওড়া নরসিংহ দত্ত কলেজ, মেদিনীপুর মহিষাদল গার্লস কলেজ, হলদিয়া গভর্নমেন্ট কলেজ, নন্দীগ্রাম সীতানন্দ কলেজ এবং কাপগারি সেবাভারতী মহাবিদ্যালয়।
নৃবিজ্ঞান নিয়ে পড়তে গেলে উচ্চমাধ্যমিক স্তরে নৃবিজ্ঞান বা জীববিদ্যা নিয়ে পড়া দরকার। তাহলে কলেজ স্তরে নৃবিজ্ঞান অনার্স নিয়ে ভর্তি হওয়া যায়। অনার্স কোর্স পাশ করার পরে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে মাস্টার ডিগ্রি ও পিএইচডি করা যায়। নৃবিজ্ঞান আন্তঃবিষয়ক হওয়ার ফলে নৃবিজ্ঞানে স্নাতক হওয়ার পর ছাত্রছাত্রীরা অন্যান্য সংশ্লিষ্ট কছিু বিষয়েও মাস্টার ডিগ্রি অর্জন করার সুযোগ পেয়ে থাকে। যেমন আর্কিওলজি, মিউজিওলজি, রুরাল ডেভেলপমেন্ট, সোশিওলজি, সোশ্যাল ওয়ার্ক, পপুলেশন স্টাডিজ, ফোকলোর স্টাডিস ইত্যাদি। জেনারেল ডিগ্রি কোর্সে নৃবিজ্ঞান নিয়ে উত্তীর্ণ ছাত্রছাত্রীরাও ভারতবর্ষের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে রেগুলার কোর্সে এবং ডিসট্যান্স কোর্সে মাস্টার ডিগ্রি ও উচ্চশিক্ষার সুযোগ পেয়ে থাকে। IGNOU-এর অধীনে কলকাতার পার্ক সার্কাসে অশ্বিনী দত্ত মেমোরিয়াল সেন্টারে নৃবিজ্ঞানে মাস্টার ডিগ্রি করা যায়।
নৃবিজ্ঞান নিয়ে পড়ার পরে পেশাগত জীবনে সরকারি ও বেসরকারি স্তরে রয়েছে নানারকম কাজের সুযোগ। একদিকে যেমন স্কুল সার্ভিস কমিশন ও মাদ্রাসা কমিশনের মাধ্যমে মাধ্যমিকস্তরে জীবনবিজ্ঞান বিষয়ে এবং উচ্চমাধ্যমিকস্তরে নৃবিজ্ঞান বিষয়ে শিক্ষকতা করা যায়। অন্যদিকে মাস্টার ডিগ্রির পরে নেট বা সেট উত্তীর্ণ হয়ে কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে স্তরে অধ্যাপনা করার সুযোগ রয়েছে। এছাড়াও কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান যেমন অ্যানথ্রোপলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়া, কালচারাল রিসার্চ ইনস্টিটিউট ইন্ডিয়ান স্ট্যাটিসটিকাল ইনস্টিটিউট, ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট, ইন্ডিয়ান স্ট্যাটিসটিকাল ইনস্টিটিউট, ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ নিউট্রিশন, ফরেনসিক সায়েন্স ল্যাবরেটরিতে প্রচুর কর্মসংস্থান রয়েছে। তবে নৃবিজ্ঞানের ছাত্রছাত্রীদের সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন উন্নয়নমূলক প্রকল্পে বিশেষ করে এনজিও-তে প্রচুর চাহিদা রয়েছে। কারণ নৃবিজ্ঞান পাঠক্রমে যেহেতু আদিবাসী, অনুন্নত শ্রেণী ও গ্রামাঞ্চলের জীবনযাত্রা ও সামাজিক সমস্যা নিয়ে ফিল্ড ওয়ার্কের মাধ্যমে সরাসরি হাতে কলমে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয় ও বাস্তব অভিজ্ঞতা অর্জনের সুযোগ থাকে তাই নৃবিজ্ঞানের ছাত্রছাত্রীরা এই অভিজ্ঞতার নিরিখে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কাজের ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার পেতে পারে। মানবকেন্দ্রিক বিষয় হবার সুবাদে সরকারি সিভিল সার্ভিস পরীক্ষাতে ঐচ্ছিক বিষয় হিসাবে নৃবিজ্ঞান বা অ্যানথ্রোপলজি খুবই জনপ্রিয় একটি বিষয়। অন্যান্য বিষয়ে স্নাতক চাকরিপ্রার্থীদের মধ্যে নৃবিজ্ঞানকে ঐচ্ছিক পেপার হিসাবে বেছে নেওয়ার প্রবণতা দেখা যায় কারণ সিভিল সার্ভিসে নৃবিজ্ঞানের সাফল্যের হার খুবই সন্তোষজনক। ফরেনসিক অ্যানথ্রোপলজি, পপুলেশন বায়োলজি, অ্যানথ্রোপলজিকাল জেনেটিক্স, ফিজিওলজিকাল অ্যানথ্রোপলজি, নিউট্রিশনাল অ্যানথ্রোপলজি এই সব শাখাগুলিতে দেশে ও বিদেশে প্রচুর কর্মসংস্থান ও গবেষণার সুযোগ রয়েছে।
বর্তমান প্রজন্মের ছাত্রছাত্রীদের কাছে নৃবিজ্ঞান খুব জনপ্রিয় একটি বিষয়। প্রথাগত পেশার বাইরে গিয়ে মানব কল্যাণ তথা সমাজ উন্নয়নের চিন্তাধারায় উদ্বুদ্ধ প্রচুর ছাত্রছাত্রী শুধুমাত্র ভালোবাসার টানে নৃবিজ্ঞানকে তাদের পছন্দের বিষয় ও কেরিয়ার হিসাবে বেছে নেয়। এই সকল কারণে নৃবিজ্ঞানের কাজের পরিধির ব্যাপ্তি এবং এর প্রায়োগিক দিকগুলি অনস্বীকার্য।
লেখক: নববারাকপুর আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র কলেজ
নৃবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক
বিশিষ্ট গবেষক ও প্রাবন্ধিক