বদমেজাজ ও কঠিন ব্যবহারে ঘরে-বাইরে অশান্তি ও শত্রুতা। পেট ও বুকের সংক্রমণে দেহসুখের অভাব। কর্মে ... বিশদ
কেন অস্কারের মঞ্চে গেল না ভিকি কৌশল অভিনীত ‘সর্দার উধম’? উত্তর দিয়েছেন ভারত থেকে অস্কারের ছবি বাছাইয়ের জন্য যে বিচারকমণ্ডলী ছিল, সেই দলের এক সদস্য। তিনি নিজেও চলচ্চিত্র পরিচালক, পেয়েছেন জাতীয় পুরস্কারও। তিনি ইন্দ্রদীপ দাশগুপ্ত। বলেছেন, ‘সর্দার উধম অসাধারণ ছবি, এর সিনেমাটোগ্রাফি বিশ্বমানের। ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের এক অবিসংবাদী নায়ককে দারুণভাবে তুলে ধরা হয়েছে।’ সবই যখন ভালো, তাহলে এই ছবি অস্কারে গেল না কেন? কোথায় সমস্যা? ‘এই ছবিতে ব্রিটিশদের প্রতি প্রচণ্ড ঘৃণা দেখানো হয়েছে। এই বিশ্বায়নের যুগে ঘৃণা ধরে রাখা ঠিক নয়,’ বক্তব্য ইন্দ্রদীপের।
কী রয়েছে এই ছবিতে? তৎকালীন ব্রিটিশ শাসকদের দ্বারা সংঘটিত জালিয়ানওয়ালাবাগ হত্যাকাণ্ডের মতো নারকীয় ঘটনা এই ছবিতে তুলে ধরা হয়েছে। স্বাধীনতা সংগ্রামী ভগত্ সিংয়ের একান্ত সহযোগী ছিলেন উধম সিং। যিনি জালিয়ানওয়ালাবাগের প্রতিশোধ নিতে পরবর্তীকালে ডায়ারকে হত্যা করেছিলেন, সেই বীরগাথা নিয়েই তৈরি ‘সর্দার উধম’।
এমন একটি ঐতিহাসিক ঘটনা নিয়ে তৈরি ছবি সম্বন্ধে ইন্দ্রদীপের এই মন্তব্যে সমালোচনার ঝড় উঠেছে। নেটিজেনদের বক্তব্য, ভুলে গেলে চলবে না, জালিয়ানওয়ালাবাগের ঘটনায় স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ‘নাইটহুড’ ফিরিয়ে দিয়েছিলেন। তাহলে এ ক্ষেত্রে ইন্দ্রদীপ কী বলতে চাইলেন? ভারতীয়দের উপর ইংরেজদের অকথ্য অত্যাচারের ইতিহাস কি নতুন প্রজন্মকে ‘কম করে’ দেখাতে হবে! বিশ্বায়ন এবং ব্যবসার দোহাই দিয়ে ইতিহাস ভুলে যেতে বলছেন এই টলিউড পরিচালক? বিষয়টি নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানার জন্য তাঁকে ফোন করা হলে তিনি বললেন, ‘এই নিয়ে কোনও মন্তব্য করব না।’ তাঁর কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল, আপনি কি আপনার মন্তব্যে অনড়? এই নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় তুমুল সমালোচনা হচ্ছে। এর জবাবে ইন্দ্রদীপ বলেন, ‘কোনও মন্তব্য করব না। ফিল্ম ফেডারেশন অব ইন্ডিয়া থেকে বারণ করা হয়েছে।’
এদিকে, ইন্দ্রদীপের বক্তব্য নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় ঝড় বইছে। কেউ লিখেছেন, ‘কোনও ভদ্র ব্রিটিশ নাগরিকও বোধহয় এই ছবিতে তাঁদের পূর্বপুরুষের লুঠ ও হত্যলীলা দেখে লজ্জায় পড়ে যাবেন।’ আবার কেউ লিখেছেন, ‘আমরা আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামীদের নিয়ে অনুষ্ঠান করতে পারি, মূর্তি গড়তে পারি। কিন্তু তাঁদের নিয়ে তৈরি একটি ছবি অস্কারে পাঠাতে পারি না। কারণ, ব্রিটিশদের খারাপ লাগবে।’
কোন ছবি এ দেশ থেকে অস্কারে যাবে তার নির্বাচন প্রক্রিয়া অনুষ্ঠিত হয় ফিল্ম ফেডারেশন অব ইন্ডিয়া’র তত্ত্বাবধানে। ফেডারেশনের ভাইস প্রেসিডেন্ট ফিরদৌসুল হাসানকে ফোন করা হলে তিনি বলছেন, ‘এটা ওঁর (ইন্দ্রদীপের) ব্যক্তিগত মত। এই বিষয়ে ওঁর সঙ্গে কথা বলে নিন। বিচারকমণ্ডলী নিরপেক্ষভাবে কাজ করে। এখানে ফেডারেশনের কোনও বক্তব্য নেই। ফেডারেশনের গাইডলাইন মেনে সকলে মিলে একটা ছবিকে নির্বাচন করা হয়েছে। তারপর কেউ মন্তব্য করলে, সেটা তাঁর ব্যক্তিগত বিষয়।’ কিন্তু বিষয়টা কি আর ব্যক্তিগত রইল? ইন্দ্রদীপের এই মন্তব্য তো ‘রাজনৈতিক দেউলিয়াপনা’কেই তুলে ধরল। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, এর আগে ভারত থেকে যে তিনটি ছবি অস্কার দৌড়ের শেষ ল্যাপে পৌঁছেছিল তার অন্যতম ‘লগান’। আমির খান অভিনীত সেই ছবিটিও ছিল পরাধীন ভারতে ব্রিটিশ শাসন বিরোধী।