প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় সাফল্য আসবে। প্রেম-প্রণয়ে আগ্রহ বাড়বে। তবে তা বাস্তবায়িত হওয়াতে সমস্যা আছে। লৌহ ও ... বিশদ
২০২০ বছরটা জুড়ে অসংখ্য মানুষ করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। সেই সংক্রমণের গ্রাফ এখন কিছুটা নিম্নমুখী হলেও নতুন বছরেও মানুষ এই অসুখে আক্রান্ত হয়ে চলেছেন। তবে আপাতদৃষ্টিতে লক্ষ করলে সহজেই বোঝা যাবে যে, বেশিরভাগ মানুষই এই রোগ থেকে সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে উঠছেন। বহু মানুষের তো রোগের কোনও উপসর্গই দেখা দিচ্ছে না। কিন্তু মুদ্রার অপর পিঠও রয়েছে। কিছু মানুষ করোনা আক্রান্ত হয়ে সুস্বাস্থ্য হারাচ্ছেন। সংক্রমণের কবলে পড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ। এই ধরনের সমস্যা দীর্ঘমেয়াদি। এক্ষেত্রে সঠিক চিকিৎসা এবং জীবনযাপনের সমন্বয়ই মানুষকে স্বাভাবিক জীবনে ফেরাতে সক্ষম। কোভিড পরবর্তী এমনই কিছু গুরুতর সমস্যা থেকে বেরিয়ে আসার পথ জানা যাক—
ফাইব্রোসিস—করোনা সংক্রমণ থেকে ফুসফুসে ফাইব্রোসিস অসুখটি হচ্ছে। এই রোগটিতে আক্রান্ত হলে ফুসফুসে বায়ুর আদানপ্রদানে সমস্যা দেখা দেয়। ফলে শরীরে অক্সিজেনের মাত্রা স্বাভাবিকের তুলনায় কমে যায়। চলতে ফিরতে সমস্যা, অল্প চললেই হাঁপ ধরা, সিঁড়ি দিয়ে উঠতে গিয়ে হাঁপ ধরা, শ্বাসকষ্ট, কাশি ইত্যাদি এই রোগের প্রধান লক্ষণ। এই সমস্যায় আক্রান্ত রোগীকে দীর্ঘদিন অক্সিজেন দিতে হতে (অক্সিজেন থেরাপি) পারে। পাশাপাশি রোগীকে সম্পূর্ণ বিশ্রামে থাকতে হবে। বাড়িতেই চলবে ফিজিওথেরাপি। রোগীকে বিভিন্ন ব্রিদিং এক্সারসাইজ করতে হবে। খাদ্যাভ্যাসেও বদল আনা জরুরি। পেশির সক্ষমতা ফেরাতে চিকিৎসকের পরামর্শ মতো প্রোটিন গ্রহণ বাড়াতে হবে। এছাড়া ফুসফুসের উন্নতির স্বার্থে বিভিন্ন ওষুধ খেতে হবে।
থ্রম্বোসিস— রক্তবাহী নালীর মধ্যে রক্ত জমাট বাঁধার (ক্লট) ঘটনাকে থ্রম্বোসিস বলে। কোভিডে আক্রান্ত হয়ে এই সমস্যাতেও বহু মানুষ ভুগছেন। থ্রম্বোসিস যে কোনও রক্তবাহী নালীতে হতে পারে। তবে পালমোনারি আর্টারি, অর্থাৎ হৃৎপিণ্ড এবং ফুসফুসের সংযোগকারী ধমনীতে এই সমস্যা বেশি হতে দেখা গিয়েছে। এক্ষেত্রে সমস্যার বহিঃপ্রকাশ হল শ্বাসকষ্ট। ইকোকার্ডিওগ্রাম পরীক্ষা করে রোগ সম্বন্ধে ধারণা করা হয়ে থাকে। তারপর নির্দিষ্ট উপায়ে চিকিৎসা চলে। রোগীকে সম্পূর্ণ বিশ্রামে থাকতে হয়।
অনেক সময় মস্তিষ্কের রক্তনালীতেও থ্রম্বোসিস হয়ে মানুষ স্ট্রোকে আক্রান্ত হন। স্ট্রোকের মতো মারাত্মক অসুখে আক্রান্ত হলে রোগীর বিশেষ পর্যবেক্ষণ জরুরি। এক্ষেত্রে রোগীকে অ্যান্টিকোয়াগুলেন্ট ওষুধ ইঞ্জেকশনের মাধ্যমে দিতে হয়। রোগী হাসপাতাল থেকে বাড়িতে চলে এলে ওর্যাল অ্যান্টিকোয়াগুলেন্ট ওষুধ খেতে হয়। পাশাপাশি আক্রান্তের অন্যান্য অসুখ থাকলে সেই ওষুধও চলে। স্ট্রোক থেকে প্যারালিসিস বা অন্য সমস্যা হলে রিহ্যাবিলিটেশন থেরাপি করতে হয়।
কিছু ক্ষেত্রে হার্টের করোনারি আর্টারিতে থ্রম্বোসিস হয়ে হার্ট অ্যাটাক হচ্ছে। এই অবস্থায় জরুরি পরিস্থিতিতে চিকিৎসা চালানো হয়। তারপর বাড়ি গিয়ে বিশ্রামে থাকতে বলা হয়। এক্ষেত্রে তেল, ঘি, মশলা, রেডমিট ইত্যাদি খাবারে নিষেধাজ্ঞা থাকে।
কোভিড এনকেফেলোপ্যাথি— করোনা সংক্রমণ মাথায় প্রদাহ সৃষ্টি করলে কোভিড এনকেফেলোপ্যাথি হয়। কথা জড়িয়ে যাওয়া, সংজ্ঞা হারানো, কিছু বুঝতে না পারা, খিঁচুনি ইত্যাদি এই রোগের উপসর্গ। অত্যন্ত জটিল এই রোগের চিকিৎসায় স্টেরয়েড ব্যবহার করতে হয়। মোটামুটি দুই-তিন সপ্তাহ পর থেকে প্রদাহ কমতে শুরু করে। এক্ষেত্রেও রোগীকে একদমই বিশ্রামে থাকতে হয়। দীর্ঘমেয়াদে ওষুধ চলে।
দুর্বলতা— করোনা থেকে সুস্থ হয়ে ওঠার পরও বহু মানুষকে দীর্ঘদিন দুর্বলতা গ্রাস করে রাখে। এক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিয়ে প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার, ভিটামিন ট্যাবলেট ইত্যাদি খেতে হবে। থাকতে হবে বিশ্রামে। প্রয়োজনে ফিজিওথেরাপিও করাতে হবে।
মনে রাখবেন—
১. কোভিড থেকে সেরে ওঠার পর সমস্যা হলে তড়িঘড়ি চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
২. করোনা থেকে কোনও অঙ্গ ক্ষতিগ্রস্ত হলে একজন ফিজিশিয়ানের পরামর্শ নেওয়ার পাশাপাশি প্রয়োজনে সেই অঙ্গের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
৩. চিকিৎসকের পরামর্শ মতো ওষুধ খাওয়া ও টেস্ট করা জরুরি।
৪. পুষ্টিকর খাদ্য খেতে হবে।
৫. শরীরে সমস্যা থাকলে আগ বাড়িয়ে পরিশ্রম করতে যাবেন না। ফল হতে পারে মারাত্মক। নির্ভেজাল বিশ্রাম নিতে হবে। এমনকী চিকিৎসকের পরামর্শ না নিয়ে হুট করে ব্যায়াম শুরু করাও যাবে না।