অত্যধিক পরিশ্রমে শারীরিক দুর্বলতা। বাহন বিষয়ে সতর্কতা প্রয়োজন। সন্তানের বিদ্যা-শিক্ষায় অগ্রগতি বিষয়ে সংশয় বৃদ্ধি। আধ্যাত্মিক ... বিশদ
সকালে আবাসনের বাচ্চারা যে যার কাঁধে বইয়ের ব্যাগ নিয়ে স্কুলে যায়। কেউ যায় লাল-নীল সবুজ সব গাড়ি করে। কেউ বা স্কুল বাসে।
আর তখনই শুরু হয় আর এক স্কুল। পার্কের সবুজ ঘাসের মাঠে নেমে আসে কত পাখি। শালিক, চড়ুই, ঘুঘু, ফিঙে, বুলবুল, দোয়েল, কত তাদের নাম। তাদের তো আর গাড়ি নেই। নিজেদের ডানাগুলোই গাড়ির চাকা। আর খোলা আকাশ হল রাস্তা। বাতাস তাদের সহযোগিতা করে। তারা ডানা নাড়তে নাড়তে নেমে আসে ইস্কুল মাঠে।
এক ভারী মজার স্কুল। এখানে বাচ্চা বড় বলে কিছু নেই। সকলেই চলে আসে। অদ্ভুত ওদের বইপত্তর লাগে না। ধেড়ে কাকগুলো সবচেয়ে বুদ্ধিমান পাখি। তাই তারাই মাস্টারমশাই হয়ে ক্যা ক্যা করে পড়ায়। চেয়ার, বেঞ্চি, ঘর কিছুই লাগে না। ঘুরতে ঘুরতে, খেলতে খেলতে পড়াশুনা করে, আবার খিদে পেলে টিফিন খাবার মতো শস্যদানা, ছোট্ট ছোট্ট পোকা খুঁটে খায়।
যে ছোট্টুটা হাজির হল সেটা একটা পায়রা বাচ্চা। একেবারে পুঁচকে বয়স। সবে ডানায় পালক গজিয়েছে। একটু আধটু উড়তে পারে। ওর বাবা-মা অনেক করে ‘না’ করে গেছে। ঘরের বাইরে বেরিওনা। দুষ্টু চিলগুলো কখন ছোঁ মেরে নিয়ে পালাবে বুঝতেই পারবে না।
ও সবে পিক পিক করে কথা বলতে শিখেছে। কিন্তু কাঁহাতক ঘরে বসে থাকে! ঘাড় নেড়ে বলে। ‘ঠিক আছে, যাব না।’
কিন্তু মনে মনে জানে ওর আরও দু’জন ছোট্টু বন্ধু আছে। তাই বাবা-মাকে যেই দেখেছে আবাসনের নীল আকাশ ছাড়িয়ে অনেক দূরে চলে গেছে অমনি ঝুপ করে নেমে পড়েছে। ইতিমধ্যে ঝুপুস ঝাপুস করে অনেক পাখি নেমে এসেছে।
আর দ্বিতীয় ছোট্টু? সে এক বিচ্ছু কুকুর-ছানা। ছানা ঠিক নয়। একটু বড়। সাদা রঙের। মুখের কাছে হালকা গেরুয়া ছোপ! লেজটা বাঁকানো। ওর মা লালি। সকালের দিকে বাচ্চাকে মাঠে ছেড়ে কোথায় যে পালায় কে জানে? হয়তো খাদ্যের সন্ধানে। এই আবাসনে অনেক বিদেশি কুকুর আছে। ছোট-বড়-মাঝারি কত সাইজের, কত রঙের। বিভিন্ন বিদেশি নামের। যেমন দুধ সাদা এসকিমো ডগ, আমেরিকান ফক্সবাইন্ড, বুলডগ, শেফার্ড। তারা আবার ডাকে ঘেউ ঘেউ করে। আমাদের ছোট্টু ডাকে কেঁউ কেঁউ। সে ঘুরে বেড়ায়। প্রথম ছোট্টু এলে লেজ নাড়তে নাড়তে এগিয়ে যায়। খেলা করে। মাঝে মাঝে তো পায়রা ছানা ওর পিঠে উঠে পড়ে। সে এক মজার ব্যাপার। বাকি পাখিরা ঘাড় ঘুরিয়ে দেখে। বেশ মজা পায়।
তৃতীয় ছোট্টুটি এখানকার মালিককাকুর ছেলে। ওর স্কুল নেই। বাড়িতে ওর মা কাজে যায়। দেখার কেউ নেই। তাই বাবার সঙ্গে চলে আসে। বাবার গাছের গোড়ায় কাটা ঘাসগুলো ও এক জায়গায় জমা করে, তাও ইচ্ছে হলে করে। না হলে সারাক্ষণ পার্কে স্লিপে চড়ে। খেলে বেড়ায়। কোথায় পাখি বাসা বেঁধেছে তাই দেখে। ভাবে বাসা বাঁধা মানেই পাখির বাচ্চা হওয়া, ও নিজে ছোট বলে বাচ্চা পাখি দেখতে বা খেলতে পছন্দ করে। ওকে দেখলে দুই ছোট্টু ছুটে আসে। ও তখন দুটোকে খুব আদর করে। কুকুর ছানাটি মাঠে শুয়ে পড়ে। পা দুটো ওপরে তুলে কেঁউ কেঁউ করে আরও আদর খেতে চায়। আর পায়রা বাচ্চা ওর কাঁধে বসে থাকে। সেই অবস্থায় ও দোলনা চড়ে। তিন ছোট্টুর সে কী আনন্দ! পায়রাছানা ডানা ঝাপটিয়ে কিছুটা উড়ে ধপাস করে বসে পড়ে। সেটাও একটা খেলা।
এইভাবে চলছিল তিন ছোট্টুর খেলা-জীবন।
একদিন একটা কাণ্ড ঘটল। সেদিন মালিককাকুর ছেলে মানে তৃতীয় ছোট্টু বেশ কিছুটা দূরে। পুকুরপাড়ে একটা লাল ফড়িং বাচ্চাকে ধরবে বলে ব্যস্ত ছিল। বাকি দুই ছোট্টু খেলছিল। বোধহয় লুকোচুরি? বারবার কেউ না কেউ ঝোপের আড়ালে চলে যাচ্ছিল।
হঠাৎ দেখা গেল কুকুর-শাবকটি রেগে গেল বোধহয়। দৌড়ে গিয়ে পায়রা বাচ্চাটাকে দুটো ছোট্ট ছোট্ট থাবা দিয়ে চেপে ধরেছে। আর পায়রা বাচ্চা চিঁচিঁ করে চেঁচাচ্ছে। তাই দেখে কুকুর শাবক ছোট্ট কামড় দিতে যাচ্ছে।
মালিকাকুর ছেলে দেখতে পেয়েই এক পেল্লাই দৌড় লাগাল। ‘আরে নিজেদের মধ্যে এইভাবে ঝগড়া করতে আছে? পায়রা বাচ্চাটা তো মরেই যাবে!’ কুকুর শাবক ঘুক ঘুক করে ডাকে। চোখ গোল গোল করে দেখতে থাকে। একবার আকাশের দিকে একবার তৃতীয় ছোট্টুর দিকে।
ছোট্টু দৌড়তে থাকে। মাঝে বাগান বলে একটু সাবধানে দৌড়তে হচ্ছে। যত কাছে এগয় তত দু’জনের ভীত সন্ত্রস্ত চোখগুলি দেখতে পায়। তখনই দেখতে পেল একটা বড় ডানার পাখির ছানা। বড় থেকে ক্রমশ বড় হচ্ছে। মাটির কাছে নেমে আসছে। তার শিকার তখন পায়রা বাচ্চা। হ্যাঁ একটা বিশাল চিল! কুকুর শাবক ঘুক ঘুক করে ডাকতে থাকে। সবে ছোঁ মারতে যাবে, তখনই মালিকাকুর ছেলেটি ঠিক গোলকিপারের মতো একটা বড় ঝাঁপ দিল।
হঠাৎ আক্রমণে, চিলটা ঘাবড়ে গেল। তারপরেই পালিয়ে গেল!
মালিককাকুর ছেলে, ওদের কোলে তুলে নেয়। দেখে দু’জনের বুক তখনও ধুকপুক করছে। ও বলল, ভয় নেই, আমি আছি না... হি হি।
তিনটিতে মিলে তখন ডাক ছাড়ে— হুররে... ঘুক ঘুক ঘুউক... চিঁচিঁ... ই।