পারিবারিক ঝামেলার সন্তোষজনক নিষ্পত্তি। প্রেম-প্রণয়ে শুভ। অতিরিক্ত উচ্চাভিলাষে মানসিক চাপ বৃদ্ধি। প্রতিকার: আজ দই খেয়ে ... বিশদ
ফতেপুর সিক্রির কেল্লার উপর শামের অন্ধকার নেমে আসার সঙ্গে সঙ্গে শুরু হয়ে গেল মগরিবের নামাজ-আস্সালাতো খয়রুম মিনন্ নওম—
বীরবর যাচ্ছিলেন অনুপ তালাওয়ের দিকে, নামাজের আওয়াজ কানে আসার মুহূর্তে থেমে রইলেন যেখানে ছিলেন। অনুপ তালাওয়ে আজ গুরু তানসেনের বিশেষ মেহফিল, বাদশাহের মর্জি অনুযায়ী আজ মল্লার গাইবেন গুরুজি। সকাল থেকেই কয়েকজন গোলামকে নিয়ে খান-ই-সামান বাদকুল্লা খান গেছেন অনুপ তালাওয়ে, মেহফিলের আসর সাজিয়ে তুলতে।
চবুতরায় দাঁড়িয়ে বীরবর তখন দেখতে পাচ্ছেন দরগার সামনে নামাজের কলিগুলো গানের মতো করে গাইছেন একজন ইমাম, হাই আলে অসসালা/ হাই আল্লেল ফলা—
পরের কলি বললেন, ‘আল্লাহু আকবর।’ আকবর! বীরবরের ভুরুতে কোঁচ, রোজ কি এই শব্দটা বলা হয়! গতকাল সন্ধেয় দরগার সামনে আকবরের ‘মহযরনামা’ পড়ার শেষে ফৈজির একটি কাসিদা ছিল যার শেষ শব্দ ছিল আল্লাহু আকবর। সেই শব্দটিই কি যুক্ত হল নামাজের শেষে, না কি আগে থেকে ছিল! আকবর শব্দের অর্থ মহান বা শ্রেষ্ঠ। অর্থাৎ ‘আল্লাহু আকবর’ শব্দের অর্থ আল্লাই শ্রেষ্ঠ।
বিষয়টি বিশদে ভাবার আগেই শেষ হয়ে গেছে নামাজের আজান। ভাবনায় যতি টেনে অনুপ তালাওয়ে গিয়ে দেখলেন বাদকুল্লা খান খুব যত্ন করে সাজিয়েছেন আসরের জায়গা। মাঝখানে গুরুজির বসার আসন, তার সামনে বিশাল তম্বুরা, তার চারদিকে ফুলের তোড়াগুলো রেখেছেন লতার মতো আঁকা-বাঁকা করে। রঙিন ফুলেই মাতিয়ে দেবে মেহফিলের জেল্লা। গুরুজি এসেছেন অনেক আগেই, আসর থেকে একটু দূরে চোখ বুজে তিনি নিচু গলায় রেয়াজ করছেন অন্য একটি তম্বুরা হাতে নিয়ে।
একজন-একজন করে ভরে উঠছে অনুপ তালাওয়ের চারপাশ। সন্ধে একটু গাঢ় হয়ে এলে একদিকে মনসবদার-আমির-উমরাহ থেকে আম-আদমির জমায়েত, অন্যদিকে বাদশাহের রিস্তেদাররা। একটু পরেই রাজকীয় সাজে বাদশাহ আকবর। তাঁর সাজগোজ অন্য দিনকার চেয়ে একটু বেশিই। গায়ে লাল টকটকে শেরওয়ানি, গলায় পাঁচথাক মণিমুক্তোর মালা, হলুদ পাগড়িতেও থরে থরে সাজানো নানা রত্ন।
বাদশাহ তাঁর আসনে বসতেই গুরু তানসেন এসে নিচু হয়ে অভিবাদন জানিয়ে বসলেন বড় তম্বুরার সামনে, সেটি হাতে তুলে নিয়ে আঙুল রাখতে টুং শব্দ, সেই টুং-এ এক অসাধারণ সুর ঝংকার তুলে চমকে দিল সবাইকে। বাদশাহও বসলেন সোজা হয়ে। আজ গুরুজির চোখে-মুখে এক অন্য তজল্লি।
বাদশাহ তাকালেন বীরবরের দিকে। বীরবর খেয়াল করছিলেন গতকাল মহযরনামা পাঠ করার পর বাদশাহের চাউনির ধরনটাই গেছে বদলে। মহযরনামা তাঁকে দিয়েছে হিন্দুস্তানের সেরা ইসলামি শরিয়তের নেতার স্থান।
মল্লারের সুর ধরতেই বেশ নড়ে-চড়ে বসলেন সবাই। বাদশাহ গলা নামিয়ে বললেন, বীরবরজি, মল্লার রাগ গাইলে নাকি বারিশ হয়?
এখন ঘোর বর্ষাকাল, তবু ক’দিন ধরে আকাশে মেঘের আনাগোনা নেই। মনেই হচ্ছে না বর্ষার আকাশ। বাদশাহের কথায় বীরবরের মনে অস্বস্তি, কেননা লোকমুখে প্রচারিত তানসেন দীপক রাগ গাইলে জ্বলে ওঠে আগুন, মল্লার গাইলে নীল আকাশ ফুঁড়ে মেঘের সৃষ্টি হয়, বৃষ্টিতে ভেসে যায় দেশ। সেই প্রবাদ কি আজ বাস্তব হবে!
তানসেন তখন সুরের ঢেউয়ে ভাসছেন, এক-একবার আঙুল ছোঁয়াচ্ছেন তম্বুরার তারে, শব্দগুলো যেন নাচের ভঙ্গিতে ঘুরে বেড়াচ্ছে অনুপ তালাওয়ের সর্বত্র। তার সঙ্গে তানসেনের ভরাট কণ্ঠের জাদু ছুঁয়ে ছুঁয়ে যাচ্ছে প্রত্যেক ইনসানের দিল। চার তুকের গান— স্থায়ী হয়ে অন্তরায়, অন্তরা হয়ে সঞ্চারীতে, সঞ্চারী হয়ে আভোগে পৌঁছচ্ছেন গানের বাদশাহ।
বীরবরের শরীরে যেন কাঁটা দিয়ে উঠল গুরুজির কণ্ঠের কারুকাজে। সুরের সাত স্বর কীভাবে যেন রূপান্তরিত হচ্ছে আট স্বর, নয় স্বরে, সে এমন সুর যা শরীরে শিহরন ধরাচ্ছে শ্রোতাদের, সে এমন গায়ন যা কাঁপন ধরাচ্ছে ভিতর-শরীরে। ধ্রুপদ গান সম্পর্কে যাদের বিন্দুমাত্র ধারণা নেই, তারাও যেন ভুলে যাচ্ছে নিঃশ্বাস ফেলতে। আর কী আশ্চর্য, সবাই অবাক হয়ে খেয়াল করছিল অনুপ তালাওয়ের উপরের অন্ধকারে যেন ঘোর লেগেছে আরও। তবে কি সত্যিই গুরু তানসেনের গানের জাদুতে আকাশে মেঘ করেছে! তবে কি এখনই আকাশ ভেঙে বৃষ্টি নামবে!
তানসেন সেই গানে যতি টানলেন প্রায় মধ্যরাতে। গান শেষ হওয়ার অনেকক্ষণ পর পর্যন্ত কথা বলতে পারছিলেন না কেউই। অনেক পরে নৈঃশব্দ্য ভেঙে বাদশাহ বলে উঠলেন, তহ্ফা, তহ্ফা। এ কেয়া গানা, এ কেয়া গানা! বীরবরজি, এরকম গান আগে কখনও শুনিনি, এরকম গান গুরুজিও আগে কখনও গেয়ে শোনাননি আমাদের!
বীরবর আস্তে আস্তে বললেন, জাহাঁপনা, কাল দরগার সামনে যে মহযরনামা পাঠ করা হল তাতে ইসলামের তরক্কির দায়িত্ব এখন আপনার উপর। আপনি এখন সারা হিন্দুস্তানের সব উলেমার উপরে। আপনি এখন ইসলামের শেষ কথা। আল্লার সমস্ত বাণী এখন প্রচারিত হবে আপনার মাধ্যমে। অনুপ তালাওয়ে হিন্দুস্তানের গানের বাদশা আজ আপনার উদ্দেশে উপহার দিলেন তাঁর শ্রেষ্ঠ সঙ্গীত।
বাদশাহের মুখে ফুটে উঠল এক আশ্চর্য জেল্লা। যেন নুরের তজল্লি জ্বলছে তাঁর শরীরের ভাষায়। বেশ উঁচু গলায় বললেন, গুরু তানসেন আজ যা গাইলেন তাঁকে আমরা বলতে ‘মিয়া কি মল্লার’। এই মল্লার গুরুজি ছাড়া আর কেউ গাইতে পারবেন না। গুরুজিকে আমি মিয়া উপাধিতে ভূষিত করলাম।
বীরবর বললেন, জাহাঁপনা, গুরু তানসেন আপনার শাহানশাহির শ্রেষ্ঠ রত্ন।
সমস্ত আসর তখন গানের রেশ ধরে বুঁদ। গুরু তানসেনকে নিয়ে যে-আলোচনা হচ্ছে তা শুনে মাথা নাড়ছেন সবাই। বলছেন তহ্ফা, তহ্ফা।
বাদশাহ বলে উঠলেন সহি বাত। সহি বাত। গুরুজি আমার শাহানশাহির রত্ন। কিন্তু আমার শাহানশাহিতে রত্ন আরও কত। বীরবরজি, আপনিও আমার শাহানশাহির এক বড়িয়া রত্ন। আপনি না-থাকলে কি তানসেনকে আমি পেতাম! আপনি না-থাকলে কি আমি মহাভারত-রামায়ণ-হরিবংশ-যোগাবাশিষ্ঠ-নল দয়মন্তী পড়তে পারতাম! আপনি না-থাকলে কি মকতবখানা হতো! তসবিরখানা হতো! আপনি না-থাকলে কি—
বীরবরের তখন আরও অস্বস্তি, বললেন, অনেক রাত হয়েছে, জাহাঁপনা।
বীরবরজি, আমার শাহানশাহিতে আরও কত রত্ন। ওই যে বসে আছে আবদুর রহিম, তাকে আমি খান-ই-খানা উপাধি দিয়েছি। কী সব কাসিদা লিখেছে এই লেড়কা! আবুল ফজলের নাম তো সারা হিন্দুস্তানে খোদাই করা থাকবে। ওই যে বসে আছে ফৈজি, কী দানাদার আদমি! কত মসনবি লিখছে তা তো আপনি জানেন। ওই যে বসে আছেন টোডরমল। আমার শাহানশাহির এক দানেশমন্দ, সে না-থাকলে আমার শাহানশাহির খাজনা এত বেড়ে যেত কী! সারা হিন্দুস্তানের জমিজিরেত মাপজোক করে ফেলল এই ক’সালের মধ্যে। সব বুজরুক জায়গিরদারকে হঠিয়ে এখন নিয়ে এসেছে মনসবদার। তাতে আমার ফৌজে এখন কত তাগদ! ওই যে বসে আছেন মানসিংহ, শের কা আওলাদ। মানসিংহ ছিল বলে কত খতরনাক জং ফতে করতে পেরেছি।
হঠাৎ বাইরে বৃষ্টির ঝিরঝির শব্দ। যাঁরা শুনছিলেন বাদশাহের উল্লাস ধ্বনি, তাঁরা চঞ্চল হয়ে উঠতে বাদশাহ বললেন, তাহলে আজ এই পর্যন্ত থাক।
সে রাতে বীরবরের চোখে নিদ আসছিল না। সম্রাট আকবর যে-কথাগুলো বললেন, তাতে তার মনে যেমন খুশির হাওয়া, একই সঙ্গে লক্ষ করছিলেন কেল্লার অন্য তাগদঅলা আদমিদের চোখে আগুনের ফুলকি। পরদিন থেকে ফুলকি আরও জোরদার অন্যদের চোখে। তসবিরখানায় যাঁরা দিবারাত তসবির আঁকছেন, মকতবখানায় যাঁরা তরজমার কাজে প্রাণপাত করছেন— তাঁরা সবাই গম্ভীর হয়ে আছেন। তাঁরা কেউ বাদশাহের কথার উপর কিছু বলতে পারছেন না, কিন্তু সবারই ধারণা হয়েছে বীরবরই হলেন সেই আদমি যিনি সম্রাটকে প্রভাবিত করছেন। তাঁর তাছিরের কারণেই সবাই রত্ন হতে পারেনি।
সেদিন তসবিরখানায় কী কারণে যেন কাজিয়া ঘটল দুই দানাদার তসবিরওয়ালা দাসোয়ান আর বাসোয়ানের মধ্যে, তার পরিণামে দাসোয়ান রাগত মুখে বেরিয়ে গেলেন তসবিরখানা থেকে।
সবচেয়ে খুনশি দেখাচ্ছিল বদায়ুনকে, কেল্লার এক কোণে তাঁর সঙ্গে মুলাকাত হতে তিনি বললেন, বীরবলজি, আপনি আমাকে খুব মছলার মধ্যে ফেললেন। আবার বীরবল! শুনে বীরবর গম্ভীর হয়ে জানতে চাইলেন, কী সমস্যা?
—আমি ইসলামের রীতি-নীতি মেনে চলি। কাফেরদের ধর্মগ্রন্থ ‘রামায়ণ’ কী করে তরজমা করি?
বীরবর আন্দাজ করলেন তাঁর মছলা, বললেন, রামায়ণকে ধর্মগ্রন্থ না-ভেবে কিস্সা ভাবুন। মসনবি ভাবুন। আমি গোটা রামায়ণ, গোটা মহাভারত, আরও অনেক কিস্সার প্রতিটি শ্লোক বাদশাহকে তরজমা করে শুনিয়েছি। বাদশাহ রামায়ণ পড়েছেন এক বছর ধরে। মহাভারত পড়েছেন দু’বছরে। বাদশাহ কোনও আপত্তি তো করেনইনি, উপরন্তু ফারসিতে তরজমা করার জন্য চাপ দিচ্ছেন আমাকে।
—তাহলে আপনিই করুন না তরজমা।
—একশোবার করতে পারি, রামায়ণ আমার কণ্ঠস্থ। কিন্তু তাতে বাদশাহ আপনাকে যে-হুকুম দিলেন তার কী হবে! বাদশাহের কোনও হুকুম তামিল না করলে কী শাস্তি হতে পারে তা নিশ্চয় আপনার অজানা নয়! আপনি নিজেই সম্রাটকে বলুন না আপনার মছলার কথা।
সম্রাটের নাম শুনেই মিইয়ে গেলেন বদায়ুন। বললেন, আমি আপনার মতো বাদশাহের শাগরেদ হয়ে পিছু ঘুরতে পারব না। আমার এরকম রুচি নেই। আমি একজন দানাদার আদমি। আপনিই বলুন আমার হয়ে। বীরবর চোরাহাসি হেসে বললেন, ও, এবার আন্দাজ করেছি। দানাদার আদমি হয়ে বাদশাহের পিছু ঘুরতে পারবেন না, অথচ তাঁর কাছে আর্জি পেশ করার জন্য আমাকে মুরুব্বি ধরতে আপনার রুচিতে বাধে না!
বদায়ুন কিছুক্ষণ তাজ্জব হয়ে চুপ, ঘোর বাদামি হয়ে উঠল তাঁর মুখ, দু’চোখে নার জ্বেলে বিকৃত মুখভঙ্গি করে বললেন, বাদশাহ আপনাকে লাই দিয়ে-দিয়ে অনেক উপরে তুলে দিয়েছেন, তাই আপনি আমার মতো দানাদার আদমিকেও অপমান করার সাহস পান!
বলে আর দাঁড়ালেন না, হনহন করে চললেন মকতবখানার দিকে। বীরবর হা হা করে হাসেন একা-একা। দানাদার আদমি এখন বুঝতে পারছেন রামায়ণ তরজমা করার হ্যাপা।
সম্রাটের কানে অবশ্য এই কাজিয়ার কাহিনী পৌঁছল না, তিনি নতুন দায়িত্ব পেয়ে এতটাই মশগুল যে, ঠিক করলেন আবার পয়দলে আজমির গিয়ে আল্লার কাছে দোয়া চাইবেন।
সম্রাটের আজমির যাওয়ার অবকাশে কেল্লায় ঘনিয়ে উঠল প্রবল ফিসফিসানি। কিছুকাল ধরে বাগি হয়ে উঠেছে বাংলা ও বিহারের সুলতানরা। সম্রাট ইসলামের অবমাননা করছেন এই অপবাদ দিয়ে কেল্লার মধ্যে শুরু হল ষড়যন্ত্র। শেখ মনসুরকে দেওয়ানের পদ থেকে বরখাস্ত করা হয়েছিল, কিন্তু আকবর যেমন শাস্তি দেন কাউকে, দ্রুত মাফও করতে পারেন।
মনসুরকে স্বপদে ফিরিয়ে আনাটাই বিপদ-সংকেতের সূচনা। তিনি একদিকে উস্কাচ্ছিলেন বাংলা-বিহারের সুলতানকে, অন্যদিকে বাদশাহ আকবরের দুধ-শরিক ভাই কাবুলের সুলতান মির্জা হাকিমকে জানানো হল বাদশাহ আকবর ধ্বংস করতে চাইছেন ইসলামের রীতি-নীতি। তাঁকে এখনই মসনদ থেকে সরাতে না-পারলে সমূহ বিপদ।
মির্জা হাকিম প্রস্তুত হলেন হিন্দুস্তান আক্রমণ করতে।
আজমির থেকে ফিরে বাদশাহ আকবর আন্দাজ করলেন ষড়যন্ত্র, হাতে পেলেন মনসুরকে লেখা মির্জা হাকিমের একটি চিরকুট, তাকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠিয়ে দিয়ে নিজে চললেন কাবুল আক্রমণ করতে। সঙ্গে নিলেন পঞ্চাশ হাজার ঘোড়সওয়ার, পাঁচশো লড়াকু হাতি, বেশুমার পাইকসৈন্য। বহু পথ ঘোড়ায় ছুটে পৌঁছলেন কাবুল।
দুধ-শরিক ভাইয়ের সঙ্গে লড়াই দিতে শাহেনশাহের সব মনসবদার, কেল্লার সব আমির-উমরাহ, সঙ্গে দুই খুদে শাহজাদা— সেলিম আর মুরাদও চলেছে। রওয়ানা দেওয়ার আগে বীরবরকে বললেন, বীরবরজি, আপনি কেল্লায় থাকবেন, খেয়াল রাখবেন অন্য কেউ ষড়যন্ত্র করছে কিনা! খতরনাক শেখ মনসুরকেও নিয়ে যাচ্ছি। মনসুরকে বন্দি করে রেখেছিলাম, কিন্তু মাগ্ফেরাত চেয়ে বলেছে আর কখনও করবে না। তাকে আর একটা সুযোগ দিলাম। কবে ফিরব জানি না। সঙ্গে বিবি আর অন্য আওরতরাও যাচ্ছে। মির্জা হাকিমকে কব্জা করার পর কিছুদিন কাবুলে থাকার খায়েস হচ্ছে।
—জাহাঁপনা, আপনি আমাকেও নিয়ে যেতে পারতেন।
—পারতাম। কিন্তু আপনি ক’দিনের জন্য এখন যাবেন আকবরপুরে। ওখানে আপনাকে যে জায়গির দেওয়া হয়েছিল, সেখানে আপনি ক’দিন থাকবেন। আমি কাবুল যাওয়ার পথে আপনার জায়গিরে যাব। আপনার মেহমান হিসেবে থাকব।
বীরবর তাজ্জব হয়ে বললেন, সত্যিই থাকবেন, জাহাঁপনা। তা হবে আমার শরিফ— আমার সম্মান! আমি কালই রওয়ানা হচ্ছি দেশুয়ায়। কিন্তু জাহাঁপনা, কেল্লার মধ্যে বলাবলি চলছে যে, জাহাঁপনা বীরবরকে কোনও জংয়ে পাঠান না। বীরবর কেল্লায় বসে আরাম করে।
—বলছে নাকি! ঠিক আছে, পরে যদি কোনও জং হয় আপনাকেই পাঠাব। বীরবরজি, আপনি নিশ্চয় শুনেছেন, কেল্লায় আপনার নাম নিয়ে মশকরা হয়। কেউ কেউ আপনাকে বলে বীরবল।
বীরবর হাসিমুখে বললেন, জানি, জাহাঁপনা। আমি এগুলো মশকরা বলে মনে করি না। বল অর্থে তাগদ। বীরবল— যে বীরের তাগদ আছে।
সহি বাত। সহি বাত, সম্রাট হা হা করে হেসে উঠলেন কেল্লার হাওয়া কাঁপিয়ে, বললেন, যখন আপনি জংয়ে যাবেন, দেখিয়ে দেবেন আপনার কত তাগদ!
(ক্রমশ)
অলংকরণ : সুব্রত মাজী