পেশা ও ব্যবসায় অর্থাগমের যোগটি অনুকূল। বিপরীত লিঙ্গের প্রতি আকর্ষণ বৃদ্ধি পেতে পারে। ... বিশদ
পুরনো ঐতিহ্য ধারণ করে নতুনকে গ্রহণ করার এই যে আকুলতা, তার শুরু আকবরের আমল থেকে। মুঘল সম্রাট আকবর ফসল কাটার মরশুমের উপর ভিত্তি করে একটি নতুন কর ব্যবস্থা চালু করেন। এটি বাংলা নববর্ষের সঙ্গে মিলে যায়। তৎকালীন সময়ে হিন্দু ও ইসলামিক ক্যালেন্ডারের সমন্বয়ে একটি মুঘল ক্যালেন্ডার তৈরি করেন তিনি। এই ক্যালেন্ডারই ইতিহাসখ্যাত ‘তারিখ-ই-ইলাহি’। সেই সময়পঞ্জি অনুযায়ী, চৈত্র মাসের শেষ দিন ছিল খাজনা জমা দেওয়ার অন্তিম সময়সীমা। ওই দিনের মধ্যে অধিবাসীরা তাঁদের ভূস্বামী, জায়গিরদার, কর্জদাতা বা মহাজনদের কাছে খাজনা, মাশুল ও শুল্ক পরিশোধ করতে বাধ্য থাকতেন। এর পর দিন, বৈশাখের ১ তারিখ ভূস্বামীরা নিজ অঞ্চলের অধিবাসীদের ফুল ও মিষ্টি দিয়ে শুভেচ্ছা পাঠাতেন। আপ্যায়নের বহর ছিল দেখার মতো। পরবর্তীকালে এই দিনে ক্রেতা বা খদ্দেরকে মিষ্টান্ন দিয়ে বরণ ও ব্যবসায় নতুন হালখাতা বাঙালি জীবনের অঙ্গ হয়ে ওঠে।
তবে এই বিষয়ে সকল ইতিহাসবিদ একমত নন। ‘পহেলা বৈশাখ’-এর শিকড় খুঁজতে যোগেশচন্দ্র রায় বিদ্যানিধি ও চিন্তাহরণ চক্রবর্তীর
মতো পণ্ডিতও নানা সূত্র খুঁজেছেন। কিন্তু মধ্যযুগের স্মৃতিশাস্ত্রে পহেলা বৈশাখের কোনও নামগন্ধ খুঁজে পাওয়া যায়নি। একটা সময় বাংলার সব নতুন বই পয়লা বৈশাখে বেরত। তখনও বইমেলা ছিল না। কলেজ স্ট্রিটের বইপাড়া লেখক, পাঠক ও শুভানুধ্যায়ীদের ভিড়ে জমজমাট হয়ে পড়ত। সেই ট্র্যাডিশন বইপাড়ায় আজও আছে। উনিশ শতকের সময় বাংলার ঘরে এই সময় ভগবতী দুর্গার পুজো হতো। একদল বলেন তখন থেকে বাংলার গ্রাম, গঞ্জ ও শহরে ব্যবসায়ীদের দোকানেই পয়লা বৈশাখের জাঁকজমক শুরু হয়। তখন থেকেই গৃহস্থ ঘর সাফসুতরো
করে সাজিয়ে তোলে এই সময়টায়। এই দিনে ব্যবসায়ীরা গণেশ পূজার
মাধ্যমে নতুন হিসাবের খাতার পত্তন করেন। কাজেই লোকমত ভেদে এই উৎসব করে কোন রীতির হাত ধরে বঙ্গজীবনে চলে এল, তা নিয়ে ধোঁয়াশা বিস্তর।
তবে সূচনা-মুখ নিয়ে জট থাকলেও পয়লা বৈশাখের দিনমাহাত্ম্যের কদর কমেনি। বাঙালি ঘরে উৎসবের পর্যায়ে পৌঁছে গিয়েছে এই অনুষ্ঠান। নিজের সঙ্গে ঘরবাড়িরও সেজে ওঠার দিনে আপনিই বা বাদ থাকেন কেন? এই সময় আবহাওয়ার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে ঘরে আনুন দেশীয় ছোঁয়া। মাটি, বাঁশ বা বেতের তৈরি ট্রে, বাটি, মাটির কুঁজো, বিভিন্ন খেলনা, হাতপাখা, শীতলপাটি, নানা ধরনের মুখোশ, টেরাকোটার কাজ শতরঞ্চি ইত্যাদির ব্যবহার করে ঘরে দেশীয় মেজাজ ফেরাতে পারেন। খুব কম খরচেও একটা নতুন রূপ তৈরি হতে পারে আপনার গৃহকোণে।
রং বাছুন বুঝে: বৈশাখে নিশ্চয় কেনাকাটার তালিকায় বিছানার চাদর, পর্দা এসব রয়েছে? স্বস্তিক চিহ্ন ও কাঁচা হলুদের অনুষঙ্গে এই উৎসব কিন্তু লাল-হলুদের। তাই বিছানার চাদরে আনুন লাল-হলুদের সমাহার। খুব চোখে লাগে এমন শেড না
দিয়ে বরং উষ্ণ রঙের শেড বাছুন। ফ্যাব্রিক হিসেবে অবশ্যই সুতি বা লিনেন। সুতির চাদরের উপর হালকা রান সেলাইয়ের কাঁথা নকশাও এই দিনের জন্য বেশ ভালো। পর্দার বেলায় বাছতে পারেন হালকা কোনও রং। যা রোদ কম শোষণ করবে ও ঘরকে ঠান্ডা রাখবে। জানালার সাজে পুরনো দিনের মতো খড়খড়িও ব্যবহার করতে পারেন। ইদানীং বেতের তৈরি খড়খড়ি নানা ঘর সাজানোর দোকানে মেলে।
বদলে দিন ডাইনিংয়ের সাজ: এই সময় বাড়িতে নানা অতিথি আসেন, তাঁদের জন্য আলাদা করে ডাইনিং রুমকে প্রস্তুত করুন। পাটের তৈরি টেবিল ম্যাট ও টেরাকোটার কোস্টার সেট ব্যবহার করতে পারেন।
ডাইনিংয়ের চেয়ারে স্ট্রাইপড নকশার সুতির কুশন ব্যবহার করুন। চারধারে লেস বসানো হাতে তৈরি কুশনও মন্দ হবে না। ডাইনিং টেবিলের উপর সাদা ফুলে ভরা রেকাবি রাখুন। ঘরে থাক নানা ধরনের ইন্ডোর প্ল্যান্ট। অতিথি ও নিজেরা সেদিন খাওয়াদাওয়া করুন মাটির তৈজসপত্রে।
বসার ঘরের রূপ: এই ঘর আড্ডার। তাই বৈঠকি মেজাজ বজায় রাখুন। একফালি জায়গা হোক বা বেশ বিস্তৃত ঘর, সাজে যেন বাঙালিয়ানাই থাকে। এদিন এই ঘরের মেঝেয় কার্পেটের বদলে পেতে দিন শীতলপাটি বা নকশাদার মাদুর। ছোট-ছোট বেতের মোড়া বা চেয়ার রাখুন একটু ছড়িয়ে ছিটিয়ে। ডিভান রাখলে তার কভারেও বাঙালি আমেজ রাখুন। ছোট ছোট পাশবালিশ ও কুশনে রাখুন বাঙালিয়ানার ছাপ। আজ হাতে একটু সময় থাকলে পুরনো সিল্কের অব্যবহৃত শাড়ি কেটে, রান সেলাই দিয়ে জুড়েও বানিয়ে ফেলতে পারেন রঙিন পর্দা। অত সময় না পেলে ভরসা রাখুন দোকান থেকে কিনে আনা হ্যান্ডমেড পর্দায়। ঘরের কোণে থাক গাছ। আলোর জন্য ভরসা রাখুন হাতে আঁকা ল্যাম্পশেডের নকশায়। গণেশ, মাটির নানা মূর্তি এমন নানা মডেলের উপর ছোট টেবিল ল্যাম্পও বাজারে মেলে।
সবুজ স্বস্তি: কম খরচে হাতের কাছে থাকা গাছ দিয়েও ঘরের রূপ এদিক ওদিক করে ফেলা যায়। কিছু অর্কিড, পাতাবাহার ও মানিপ্ল্যান্ট ঘর সাজানোর ভালো উপকরণ। এছাড়া জায়গা বুঝে সাদা ফুলও রাখতে পারেন। একটি রেকাবিতে জল রেখে তার উপর পদ্ম ফুটিয়ে সেটাও রেখে দিতে পারেন প্রবেশদ্বারের কাছে। এতে ঘরের রূপ খোলতাইয়ের সঙ্গে কিছু বিশুদ্ধ অক্সিজেনও মিলবে। উৎসবের সুর বেঁধে দেওয়ার জন্য দরজার উপরে বিডস ও বোতাম দিয়ে তৈরি উইন্ড চাইমও ঝুলিয়ে দিতে পারেন। এগুলিতে পকেটেও খুব বেশি চাপ পড়ে না, তবে নান্দনিকতায় জোটে ফুল মার্কস!
কোথায় পাবেন: বাড়ি কলকাতায় হলে হাতিবাগান, গড়িয়াহাট, নিউ মার্কেট, উত্তরাপণ, দক্ষিণাপণ কেনাকাটার ভালো বিকল্প হতে পারে। জেলা ও শহরতলির জন্য ওই অঞ্চলের নির্দিষ্ট কিছু বাজার এলাকায় আজকাল সব জিনিসই কমবেশি মেলে। তাঁরা সেসব জায়গা থেকেও সারতে পারেন কেনাকাটা।
বছরের প্রথম দিন নতুন চোখে নিজে প্রথম দেখুন ঘরটিকে! নতুনের হাত ধরার শুরুটিও হোক অন্দরের অন্তরমহল থেকেই।