কর্মপ্রার্থীদের কর্মলাভ কিছু বিলম্ব হবে। প্রেম-ভালোবাসায় সাফল্য লাভ ঘটবে। বিবাহযোগ আছে। উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় থেকে ... বিশদ
আমিনিয়া ৯০
ভারতে যখন মোগল বাদশাদের রাজত্ব তখন থেকেই লখনউ আর আওয়াধি ঘরানার রান্নার রমরমা শুরু হয়। তবে সেই স্বাদ প্রাদেশিক সীমা পেরিয়ে উত্তর ভারত থেকে পুবে পাড়ি দিতে পারেনি। সেই কাণ্ডটা ঘটে আরও অনেক পরে। তখন মোগল রাজত্বের পড়ন্তবেলা। বিদেশি ব্যবসায়ীরা হানা দিয়েছে আমাদের দেশে। মোগল বাদশাদের রাজপাট উঠে গেলেও তাঁদের রান্নার ঘরানা কিন্তু ক্রমশই গ্রাস করল গোটা ভারতকে। এমনকি বিদেশি বণিকের দলও সেই রান্নার স্বাদে মগ্ন হয়ে পড়লেন। সেই সময়ই কলকাতায় মোগলাই স্বাদ নিয়ে এলেন আবদুল রহিম। রাজ পরিবারে রান্না করে হাত পাকিয়েছিলেন তিনি। পরে নবাব ওয়াজিদ আলি শাহর সঙ্গে কলকাতায় চলে আসেন। মোগলাই রান্নার স্বাদ বাঙালিদের মধ্যে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে তাঁর হাতের জাদুতে। সময়টা এই ১৯২৯ সাল। কলকাতার জাকারিয়া স্ট্রিটে একটি মোগলাই রেস্তরাঁই খুলে বসলে আবদুল রহিম। নাম দিলেন আমিনিয়া। সেখানে লখনউ আর আওয়াধি রান্না পরিবেশন করা হত। বাঙালি সেই প্রথম পরিচিত হল বিরিয়ানির সঙ্গে। মাংসের পোলাও তার আগেও বাঙালি জমিদার পরিবারে রাঁধা হত ঠিকই, কিন্তু এই দমে রান্না করা ভিন্ন মশলাযুক্ত পলান্ন এর আগে বাঙালিদের মধ্যে জনপ্রিয় ছিল না। মোগলাই বিরিয়ানিতে কিন্তু আলু দেওয়া হয় না। এদিকে রান্নার স্বাদ বাঙালি মহলে জনপ্রিয় করে তুলতে গেলে আলু একটু চাই-ই চাই। আবদুল রহিম তখন আওয়াধি মশলায় কষিয়ে নিয়ে বিরিয়ানিতে আলু দেওয়া শুরু করলেন। অল্পদিনের মধ্যেই অবদুল রহিমের হাতের তৈরি বিরিয়ানি কদর শুরু হল বাঙালি ভোজনরসিকদের মধ্যে। তারপর অনেকটা পথ পেরিয়ে এসেছে আমিনিয়া। দেখতে দেখতে ৯০টা বছর পেরিয়ে গিয়েছে। তবু আমিনিয়ার স্পেশাল মাটন বিরিয়ানি কদর কমেনি একফোঁটা। বরং দিনে দিনে জনপ্রিয়তা এতই বেড়েছে যে দেশ ছাড়িয়ে বিদেশেও আমিনিয়ার রেস্তরাঁ চালু হয়েছে। নিউ মার্কেটের রেস্তরাঁটা চালু হয়েছিল ১৯৪৭ সালের ১৫ আগস্ট। তারপর গোলপার্ক, শ্যামবাজার, জশোররোড, রাজারহাট একে একে অগুন্তি রেস্তরাঁ খুলেছে আমিনিয়া। আপাতত দুবাইয়েও এই রেস্তরাঁর রমরমা।
আমিনিয়া স্পেশাল মাটন বিরিয়ানি
উপকরণ: ধাপ ১: মাটন ৫০০ গ্রাম, জল ঝরানো টক দই ২০০ গ্রাম, নুন স্বাদ মতো, মাঝারি মাপের পেঁয়াজ চাকা করে কাটা ২টো, আদা ও রসুনবাটা ২ টেবিল চামচ করে, শুকনো লঙ্কাগুঁড়ো ১ টেবিল চামচ, ছোট এলাচ ৪টে, বড় এলাচ ২টো, লবঙ্গ ৬টা, দারচিনি ২ কাঠি, তেজপাতা ২টো, আলুবখরা ৫টা, সাদা তেল ১২০ মিলি।
পদ্ধতি: ধাপ ১: একটা প্রেশার কুকারে তেল গরম করে তাতে পেঁয়াজ ভেজে নিন। তারপর মাংস দিয়ে অল্প ভেজে তাতে বাকি সব মশলা, দই দিয়ে কষিয়ে নিন। নুন ও দু’কাপ জল দিয়ে প্রেশার কুকারের ঢাকা বন্ধ করে মাংস সিদ্ধ করুন ও ঝোল থাকতেই নামিয়ে নিন।
উপকরণ: ধাপ ২: আলু খোসা ছাড়িয়ে নেওয়া ৪০০ গ্রাম, আদা ও রসুনবাটা ১ চামচ করে, তেল ২ টেবিল চামচ, ঘি ১ টেবিল চামচ।
পদ্ধতি: ধাপ ২: একটা পাত্রে ২ কাপ জল দিয়ে আলু সিদ্ধ করে নিন। তাতে আদা রসুনবাটা, নুন, ও তেল-ঘি দিন। পুরো আঁচে ১০ মিনিট রান্না করুন যতক্ষণ না জল শুকিয়ে যাচ্ছে। তারপর নামিয়ে নিন।
উপকরণ: ধাপ ৩: বাসমতি চাল কেজি, নুন ২ টেবিল চামচ, ছোট এলাচ ২টো, বড় এলাচ ২টো, দারচিনি ৩ কাঠি।
পদ্ধতি: ধাপ ৩: বাসমতি চাল জলে ভিজিয়ে রাখুন ২০ মিনিট। তারপর তা জল ঝরিয়ে আলাদা করে রাখুন। এবার একটা পাত্রে জল গরম করে তাতে মশলা ও নুন দিন। জল ফুটতে শুরু করলে চাল দিয়ে ঢিমে আঁচে রাঁধুন। চাল আধসিদ্ধ হলে আঁচ বন্ধ করে জল ঝরিয়ে নিন।
উপকরণ: ধাপ ৪: তৈরি করা আলু, তৈরি করা মাংস, তৈরি করা ভাত, জাফ্রান, গোলাপ ও কেওড়া জলে আলাদা আলাদা করে গোলা ৪ টেবিল চামচ, একটা মাঝারি মাপের পেঁয়াজ সরু করে কেটে ভেজে নেওয়া, ৩ টেবিল চামচ ঘি।
পদ্ধতি: ধাপ ৪: একটা তামার তলা মোটা ঢাকা দেওয়া হাঁড়িতে ঘি গরম করে তা গোটা হাঁড়িতে মাখিয়ে নিন। তার মধ্যে প্রথমে আলু সাজান। তার ওপর ঝোল থেকে তুলে মাংস সাজান। তার ওপর ভাজা পেঁয়াজ দিন। এরপর মাংসের ঝোল ঢেলে দিন। সবশেষে ভাত বিছিয়ে দিন যাতে আলু বা মাংস দেখা না যায়। তারপর ঘি দিন। একদম ওপর থেকে জাফ্রান মিক্স ঢেলে দিন। তারপর তামার পাত্রের ঢাকা আটা দিয়ে বন্ধ করে ঢিমে আঁচে হাঁড়িটা ১০ থেকে ১৫ মিনিট বসিয়ে রাখুন। আঁচ থেকে নামিয়ে পরিবেশন করুন আমিনিয়া স্পেশাল মাটন বিরিয়ানি।