ব্যবসায়িক ক্ষেত্রে বাধায় চিন্তা ও উদ্বেগ। বেকারদের ভালো প্রতিষ্ঠানে কর্মপ্রাপ্তির প্রবল যোগ। ... বিশদ
এখন এই নারদ কে ছিলেন এ নিয়ে গবেষণা করার প্রয়োজন নেই। মনে হয়, আমরা এটা ধরে নিলে ভুল করব না যে, ‘নারদীয় ভক্তিসূত্রের’ কথা মনে রেখেই ঠাকুর এ কথা বলেছেন। এই গ্রন্থের দ্বিতীয় সূত্রে আছে—‘সা ত্বস্মিন্ পরমপ্রেমরূপা। পার্থিবপ্রেমের সর্বোচ্চ শিখরে নারদ ভক্তিকে স্থান দিলেও, নারদের মতে ভগবদ্ প্রেম তারও উপরে। ভগবদ্ প্রেমের স্বরূপই তাই। ভক্তির ধর্ম ব্যাখ্যা প্রসঙ্গে নারদ লিখেছেন, পরাশরনন্দন ব্যাসের মতে পূজাদি ও তদনুরূপ কর্মের প্রতি অনুরাগই ভক্তি; ঋষি গর্গের মতে ভক্তি হল, ঈশ্বরীয় কথা ও তাঁর নাম কীর্তনাদিতে অনুরাগ এবং ঋষি শাণ্ডিল্যের মতে, আত্মরতির অবিরোধী অনুরাগই ভক্তি। কিন্তু নারদের মতে, ভগবানে আত্মনিবেদন ও সর্বকর্মসমর্পণ এবং তাঁর বিস্মরণে একান্ত ব্যাকুলতাই ভক্তির লক্ষণ।
উপরোক্ত অনুচ্ছেদে একটু অসুবিধা দেখা যাচ্ছে—কারণ, শ্রীরামকৃষ্ণ যদিও বলেছেন, এ যুগের পক্ষে কর্মযোগ কঠিন, এবং তিনি নারদীয় ভক্তিপথ অবলম্বনের উপদেশ দিয়েছেন। কিন্তু এই পথেও কর্মের ভূমিকা আছে। বেশি কিছু বলার পূর্বে দেখা যাক্ ‘তদর্পিতাখিলাচারতা’র সম্যক্ অর্থ কি? কেউ এর অর্থ করেছেন—‘কর্মতত্ত্ব’ (activism) বা ‘কর্মবিষয়ে মানসিক ভাবনা’ তাঁতে নিবেদন। কেউ আবার অর্থ করেন,—তাঁতে সর্বকর্মসমর্পণ (activities)। দ্বিতীয় স্থলে ‘তা’ প্রত্যয়টির প্রকৃত অর্থ আমরা পাই না; ‘তা’ প্রত্যয় ভাববাচক বিশেষ্য নির্দেশ করে। ‘কর্ম’ বলতে সর্বপ্রকার ক্রিয়াই বোঝায়, কিন্তু কর্মতত্ত্ব হচ্ছে, কর্মবিষয়ে একটি বিশেষ মানসিক দৃষ্টিভঙ্গি, যা সকল কর্মের ভিত্তিস্বরূপ। অতএব কর্মতত্ত্ব সমর্পণের অর্থ—সাধক ভগবানের কাছে নিজেকে সম্পূর্ণ বিলিয়ে দিয়েছেন। শ্রীরামকৃষ্ণ বলতেন—‘আমি-যন্ত্র, আমার মা-যন্ত্রী।’ তাছাড়া, এই ভাবটিতে সাধকের সমস্ত কর্ম ভগবানলাভের সাধনায় পরিণত হয়।
উদাহরণস্বরূপ, রামপ্রসাদ সেনের একটি গানে এই ভাবটি পরিস্ফুট।
মন বলি ভজ কালী ইচ্ছা হয় তোর যে আচারে।
গুরুদত্ত মহামন্ত্র দিবানিশি জপ করে।।
শয়নে প্রণাম জ্ঞান, নিদ্রায় কর মাকে ধ্যান,
আহার কর মনে কর আহুতি দিই শ্যামা মারে।।
যত শোন কর্ণপুটে, সবই মায়ের মন্ত্র বটে,
কালীপঞ্চাশৎ বর্ণময়ী বর্ণে বর্ণে নাম ধরে।।
আনন্দে রামপ্রসাদ রটে,মা বিরাজেন সর্বঘটে,
নগর ফের মনে কর প্রদক্ষিণ শ্যামা মারে।।
ঠিক একই ভাবের প্রকাশ দেখা যায় শিবমানস পূজন স্তোত্রে।