উচ্চশিক্ষা ও বৃত্তিমূলক শিক্ষায় দিনটি শুভ। কর্মস্থলে বড় কোনও পরিবর্তন নেই। আর্থিক দিক অপেক্ষাকৃত শুভ। ... বিশদ
শরীরের প্রতি অণু-পরমাণু হইতে যেন নবশক্তির নির্ঝর বহিতেছে, — ইহাই ত’ যৌবন। প্রতিটি ইন্দ্রিয় জগতের বিষয়াবলীকে নূতন দৃষ্টিতে দেখিতেছে। প্রত্যেকটি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে নূতন জাগরণ, নূতন শিহরণ তুমি অনুভব করিতেছ। এই সময়ে লক্ষ্য রাখিও, জীবনের শ্রেষ্ঠ আদর্শ যেন তোমার সঙ্গছাড়া না হয়। অভ্যাস, রীতিনীতি, আশা, বিশ্বাস, কর্ম্মভঙ্গী, রুচি—সবই ত’এখন তোমার অনুকরণীয় হওয়া উচিত। তুমি আজ যাহা, সুদূর ভবিষ্যতেও তোমাকে তাহাই থাকিতে হইবে, এই পণ লইয়া তুমি আত্মগঠন করিতে লাগিয়া যাও। যৌবনে যে বেহিসাবী, বার্দ্ধক্যে তাহার দুঃখ রুধিবে কে? আজ যখনি যাহা ভাল-মন্দ করিতেছ, সুদ শুদ্ধ তাহা যে তোমাকে পঁচিশ বৎসর পরে গণিতে হইবে। হিতকথা আজ কান দিয়া শোন, হিতবুদ্ধি আজ মন দিয়া গ্রহণ কর, হিতপথে আজ সর্ব্বশক্তি লইয়া চল। যৌবনের নবজাগ্রত উদ্বেল তরঙ্গ যেন তোমার চরিত্রের সৌধ না ভাঙ্গিতে পারে। ইহাই ত’সময়, যখন তোমাকে চপলতার কবল হইতে সযত্নে সতর্ক দৃষ্টিতে নিজের সম্পত্তি রক্ষা করিয়া চলিতে হইবে। যৌবনে অসংযমী হইয়া জীবনকে চিরকালের জন্য দুঃখ, দারিদ্র্য, ব্যাধি, অসাফল্য ও দুর্ব্বলতার কাছে বন্ধক রাখিও না। তোমার জীবনকে তুমি সর্ব্বশক্তি দিয়া সর্ব্বপ্রকার কলুষ হইতে রক্ষা করিয়া চল, কারণ, তাহা হইলেই জীবন সুদীর্ঘকাল উপভোগ্য থাকিবে। ক্ষণিকের ভোগ-সুখের ইন্ধন জ্বালাইয়া জীবনের সুচিরস্থায়ী ভোগ-সামর্থ্য ও অনন্ত ভোগের সুযোগকে চিতাভষ্মে উড়াইয়া দিও না। এমন সদভ্যাস-সমূহ আজ আয়ত্ত কর, যাহা পরিপক্ক বার্দ্ধক্যে হইবে তোমার জীবনের পরম সহায় ও একান্ত রক্ষক।
তোমার সর্ব্ব অঙ্গে জাগরণ আসিয়াছে। এমন সময়ে মনকে কি ঘুমন্ত থাকিতে দিবে? দেহের জাগরণ তোমার চক্ষে বক্ষে, চর্ম্মে, কর্ম্মে নানা উদ্দীপনার সৃষ্টি করিতেছে। এই সময়ে মনকেও কি উদ্দীপ্ত করিয়া তুলিবে না? শরীরের প্রতি অঙ্গে নিত্য-নূতন ক্ষুধা জাগিয়া উঠিতেছে, সেই ক্ষুধা তোমার মনে কত স্বপ্নের কুহেলী সৃষ্টি করিতেছে। মনকে কি সেই কুহেলিকার আবেষ্টন হইতে মুক্ত হইয়া সরল মেরুদণ্ডে দাঁড়াইতে দিবে না?
স্বামী স্বরূপানন্দ পরমহংসদেবের ‘প্রবুদ্ধ যৌবন’ থেকে