উচ্চশিক্ষা ও বৃত্তিমূলক শিক্ষায় দিনটি শুভ। কর্মস্থলে বড় কোনও পরিবর্তন নেই। আর্থিক দিক অপেক্ষাকৃত শুভ। ... বিশদ
ভারতবর্ষের আধ্যাত্মিক গতিময়তা তাকে অবশিষ্ট বিশ্ব থেকে বিচ্ছিন্ন হতে দেয়নি। কলম্বোতে স্বামী বিবেকানন্দ জগতের কল্যাণের জন্য ভারতবর্ষের সেই দৈবনিদির্ষ্ট প্রেরণাদায়ক শক্তিটিকে পুনরায় ব্যাখ্যা করে বলেনঃ “এই সংসারে জাত প্রত্যেক ব্যক্তিরই একদিকে না একদিকে বিশেষ ঝোঁক থাকে; সেই পথে তাহাকে যেন চলিতেই হইবে; সেই ভাব অবলম্বন না করিলে সে বাঁচিতে পারিবে না। ব্যক্তি সম্বন্ধে যেমন, ব্যক্তির সমষ্টি ‘জাতি’ সম্বন্ধেও ঠিক তাহাই। প্রত্যেক জাতির যেন একটি বিশেষ ঝোঁক থাকে। প্রত্যেক জাতিরই জীবনের যেন একটি বিশেষ উদ্দেশ্য থাকে। সমগ্র মানবজাতির জীবনকে সর্বাঙ্গ-সম্পূর্ণ করিবার জন্য প্রত্যেক জাতিকেই যেন একটি বিশেষ ব্রত পালন করিতে হয়। নিজ নিজ জীবনের উদ্দেশ্য কার্যে পরিণত করিয়া প্রত্যেক জাতিকেই সেই সেই ব্রত উদ্যাপন করিতে হয়। রাজনীতিক বা সামরিক শ্রেষ্ঠতা কোনো কালে আমাদের জাতীয়-জীবনের উদ্দেশ্য নহে—কখনো ছিলও না, আর জানিয়া রাখুন, কখনো হইবেও না। তবে আমাদের জাতীয়-জীবনের অন্য উদ্দেশ্য আছে, তাহা এই—সমগ্র জাতির আধ্যাত্মিক শক্তি সংহত করিয়া যেন এক বিদ্যুদাধারে রক্ষা করা এবং যখনই সুযোগ উপস্থিত হয়, তখনই এই সমষ্টীভূত শক্তির বন্যায় সমগ্র পৃথিবী প্লাবিত করা। যখনই পারসিক, গ্রিক, রোমক, আরব বা ইংরেজরা তাহাদের অজেয় বাহিনীসহ দিগ্বিজয়ে বর্হিগত হইয়া বিভিন্ন জাতিকে একসূত্রে গ্রথিত করিয়াছে, তখনই ভারতের দর্শন ও অধ্যাত্মবিদ্যা এইসকল নূতন পথের মধ্য দিয়া জগতে বিভিন্ন জাতির শিরায় শিরায় প্রবাহিত হইয়াছে। সমগ্র মনুষ্যজাতির উন্নতিকল্পে শান্তিপ্রিয় হিন্দুরও কিছু দিবার আছে—আধ্যাত্মিক আলোকই পৃথিবীর কাছে ভারতের দান।
...যাঁহারা চক্ষু খুলিয়া আছেন, যাঁহারা পাশ্চাত্য জগতের বিভিন্ন জাতির মনের গতি বোঝেন, যাঁহারা চিন্তাশীল এবং বিভিন্ন জাতি সম্বন্ধে বিশেষ আলোচনা করেন, তাঁহারা দেখিবেন—ভারতীয় চিন্তার এই ধীর-অবিরাম প্রবাহের দ্বারা জগতের ভাবগতি, চালচলন ও সাহিত্যের কী গুরুতর পরিবর্তন সাধিত হইয়াছে! তবে ভারতীয় প্রচারের একটি বিশেষত্ব আছে। আমি সেই সম্বন্ধে আপনাদিগকে পূর্বেই কিঞ্চিৎ আভাস দিয়াছি। আমরা কখনো বন্দুক ও তরবারির সাহায্যে কোনো ভাবপ্রচার করি নাই। যদি ইংরেজি ভাষায় কোনো শব্দ থাকে, যাহা-দ্বারা জগতের নিকট ভারতের দান প্রকাশ করা যাইতে পারে—যদি ইংরেজি ভাষায় এমন কোনো শব্দ থাকে, যাহা-দ্বারা মানবজাতির উপর ভারতীয় সাহিত্যের প্রভাব প্রকাশ করা যাইতে পারে, তাহা হইতেছে—fascination(সম্মোহনী শক্তি)। ...লোকলোচনের অন্তরালে অবস্থিত, অশ্রুত অথচ মহাফলপ্রসূ, উষাকালীন শান্ত শিশির-সম্পাতের মতো এই ধীর সহিষ্ণু ‘সর্বংসহ’ ধর্মপ্রাণ জাতি চিন্তাজগতে নিজ প্রভাব বিস্তার করিতেছে।”
স্বামী তথাগতানন্দের ‘প্রাচ্যের আলো’ থেকে