উচ্চশিক্ষা ও বৃত্তিমূলক শিক্ষায় দিনটি শুভ। কর্মস্থলে বড় কোনও পরিবর্তন নেই। আর্থিক দিক অপেক্ষাকৃত শুভ। ... বিশদ
পরম আনন্দে, উল্লাসে, বিস্ময়ে অভিভূত হইয়া বলিয়া উঠিলেন–‘অহো’! যাহা দেখিয়াছেন ও শুনিয়াছেন তাহাতে উদ্ধবের অন্তরের যে অবস্থা হইয়াছে তাহার উত্তম বাহক “অহো” এই শব্দটিই। অক্ষর দুইটির মধ্যে যেন ভাবরাজ্যের গভীর ইতিহাস। যেন অন্তস্থলের নিরুপম উচ্ছ্বাস। বিস্ময়ের স্তব্ধতা ও আনন্দের মুগ্ধতা—এই দুই বহন করিয়া যেন উদ্ধবের কণ্ঠ হইতে বাহির হইয়া আসিলে “অ-হো” এই দ্ব্যক্ষর অব্যয় শব্দটি।
রোরুদ্যমান ব্যক্তিকে সান্ত্বনাবাক্য বলা কর্ত্তব্য। কিন্তু সান্ত্বনার কোন ভাষাই পাইতেছেন না উদ্ধব মহাশয়, সারা বিশ্ব খুঁজিয়া। জগতের লোক কোন প্রিয়জনের অভাবে কাতর হইলে তাহাকে বলা চলে, এই জগতের সম্বন্ধ মিথ্যা এবং পরমপুরুষের সঙ্গে সম্বন্ধই সত্য ও আনন্দময়। এই কথা দিয়া যদি তাহাকে ব্যবহারিক জগতের সম্বন্ধে কিছুটা ভুলাইয়া দেওয়া যায়, তাহা হইলে শোকাত্তের শোকশান্তি কতকটা সম্ভব হয়। কিন্তু ঐ জাতীয় সান্ত্বনা তো ওখানে অচল। এত তীব্র ব্যাকুলতা যাঁহাদের কৃষ্ণের জন্য, তাঁহাদিগকে কী করিয়া বলা চলিবে, আপনারা কৃষ্ণের জন্য কাঁদিবেন না। এ কথা বলিলে মহা অপরাধের কার্য্য হইবে। কারণ শ্রীকৃষ্ণের জন্য আর্ত্তিই জীবের জীবনে চরম পুরুষার্থ। সেই পুরুষার্থ এই ব্রজাঙ্গনারা লাভ করিয়াছেন, আমি উদ্ধব করি নাই। ইহাদিগকে দেখিয়া আমার ধিক্কার আসে। কি প্রকারে আমি বলিব ইহাদিগকে–কাঁদিবেন না। আমার বলিতে সাধ হয় আরও কাঁদুন, দেখি নয়ন ভরিয়া, শুনি শ্রবণ তৃপ্ত করিয়া–এই দুলর্ভ ভাব ও ভাষা অনন্ত বিশ্বে আর কোথাও মিলিবে না।
উদ্ধব বলিলেন, আপনারা আপনারাই, আপনারা নিরুপমা, আপনাদের ভাবের তুলনা নাই। আপনারা “পুর্ণার্থা”। নিখিল পুরুষার্থ শিরোমণি কৃষ্ণপ্রেম। সেই প্রেমস্বরূপে আপনারা পরিপূর্ণা। অন্যেরা এই সম্পদ অর্জ্জন করিবার জন্য কত সাধনা করে, আর আপনাদের ঐ সম্পদ নিজস্ব। কৃষ্ণপ্রেমধনের সার নির্য্যাস দিয়াই আপনাদের সত্তা গড়া। তাই আপনারা “লোকপূজিতা”, আপনাদের এই প্রেমকে সকলে পুজা করে; কিন্তু সহসা কেহ লাভ করিতে পারে না।
সর্ব্বাশ্রয় বাসুদেবে আপনাদের মন সর্ব্বতোভাবে অর্পিত হইয়াছে। এই পরিপূর্ণ সমর্পণ আর দেখি নাই। সংসারে যত প্রকারের সাধনা আছে সকল সাধনার চরম লক্ষ্য—কৃষ্ণ-ভক্তি।