উচ্চশিক্ষা ও বৃত্তিমূলক শিক্ষায় দিনটি শুভ। কর্মস্থলে বড় কোনও পরিবর্তন নেই। আর্থিক দিক অপেক্ষাকৃত শুভ। ... বিশদ
“যোগ্যতা অর্জন হলে কেউ কাউকে বন্ধন-দশায় ফেলে রাখতে পারে না। সন্ন্যাসের মাঝে ব্যক্তিত্বকেই উচ্চস্থান দেওয়া হয়েছে। নিজকে জান্তে পারলে কোন বিধি-নিষেধ, নিয়মকানুন থাকে না। তখন তুমি ‘পিঞ্জরাদিব কেশরী’র মত মুক্ত হয়ে গেলে! কিন্তু নিজকে জানা, নিজকে সত্য করে পাওয়া, এ অত্যন্ত কঠিন কথা। আমরা আমাদের আসল স্বরূপের সন্ধান পাই বহু কষ্টের ভিতর দিয়ে, বহু কৃচ্ছ্র সাধনার ভিতর দিয়ে। নিজের ভেতরকার মালিন্য নিঃশেষে ধুয়ে-মুছে না গেলে স্বরূপের সন্ধান মিলে না। আসল কথা, নিজের ভিতরকার ময়লাকে দূর করা। গা-বাঁচিয়ে চলাতে নিজের উন্নতি হয় না। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দেখি, নিজের আলস্য-জড়তাকে প্রশ্রয় দিয়ে ধর্মানুভূতি লাভের দরুন তোমরা ব্যাকুল হয়ে ওঠ, কিন্তু এ ব্যাকুলতায় কোন ফল নেই। কৃপা লাভ করে কয়জন তোমরা সে কৃপার তাৎপর্য হৃদয়ঙ্গম কর্তে পেরেছ? এমন অনেকবার দেখেছি, আমি যাকে ভাল বলে একবার সার্টিফিকেট দিয়ে যাই, এরপর থেকেই সে আমার ভাল বলার মর্য্যাদা সুদে-আসলে আদায় করে সাঙ্গ করে দেয়। এর কারণ কি? এ কি আমার দোষ? একটু নিবিষ্টচিত্তে চিন্তা করে দেখলেই বুঝতে পারবে, তোমাদের মাঝে কত অভিমান, কত পুঞ্জীভূত কুসংস্কারের পুঁজি রয়েছে। আমি ভাল বল্লে তখন আর তোমাদের ভাল হবার চেষ্টাটা আগের মতন থাকে না, তখন কেবল তোমরা আমার সার্টিফিকেট নিয়েই গর্ব করে বেড়াও। আমার ভাল বলার উদ্দেশ্য— তোমরা আরও ভাল হও, উন্নত হও। কিন্তু ভাল বলার ফল অধিকাংশ ক্ষেত্রেই উলটো দাঁড়িয়ে যায়।
“আমি স্বাধীনতার পক্ষপাতী। ভিক্ষা করতে গিয়ে কত জায়গায় যে অপদস্থ হয়েছি আমি, তা আর তোমাদের কি বলব? নিজে ভুক্তভোগী বলেই তোমাদের আর সে-পথে চল্তে না হয় তারই আপ্রাণ চেষ্টা রয়েছে আমার। আমি চাই, তোমরা সব দিকে স্বাধীন হয়ে ধর্মপথে উন্নত হও। তোমাদের যা প্রয়োজন, তা তোমরা নিজেরা করে নাও। কারও কাছে যেন তোমাদের হাত পাত্তে না হয়। এইজন্যেই তোমাদের কর্ম করা। কিন্তু এই কর্মের মাঝেও অভিমান এসে পড়ত, যদি তোমরা আমাকে সব সমর্পণ না করে দিতে। একবার ভেবে দেখ তো, কর্ম করানো কি আমার কোন উদ্দেশ্যসিদ্ধি বা স্বার্থের দরুন, না তোমাদেরই সুযোগ-সুবিধা-উন্নতির দরুন?
“কোনদিক দিয়ে আমি তোমাদের দুর্বলতা দেখতে চায় না। ভিক্ষাটাকে সবাই হীনচক্ষে দেখে। কেন,— তোমরা যুবক, তোমাদের শক্তি-সামর্থ্য রয়েছে, পরের দুয়ারে তোমরা ভিক্ষা কর্তে যাবে কেন? পরের সাহায্য নিয়ে আধ্যাত্মিক পথেও স্বাধীনভাবে চলা যায় না। এর চেয়ে নিজের শ্রমদ্বারা অর্জিত যা, তা নিয়ে সগৌরবে সাধন-পথে উন্নত হওয়া যায়! আমি তোমাদের সব দিক থেকে স্বাধীন দেখতে চায়।
“আমি টাকা-পয়সা দিয়ে সাহায্য করে তোমাদের দালান তুলে দিতে পারি, কিন্তু এতে হবে কি? এর চেয়ে আস্তে আস্তে অতি ধীরে ধীরে নিজের চেষ্টার ভিতর দিয়ে তোমরা সফলতা লাভ কর। তোমরা নিজেরা কৃষি কর। ক্ষেতের বড় বড় বেগুন, কুমড়ো, লাউ ইত্যাদি তরি-তরকারি দেখে আমার যে কি আনন্দ হয়, তা আর বলবার নয়। অথচ ইচ্ছা কর্লে পয়সা দিয়ে কিনেও যাতে এসব জিনিস তোমরা আনতে পার, তার ব্যবস্থা করে দিতে পারি আমি। কিন্তু এই প্রশ্রয়টুকু দিলে তোমরা নিজেরা আর কিছু করতে না।
‘শ্রীশ্রীনিগমানন্দ উপদেশামৃত’ থেকে