কোনও কিছুতে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে ভাববেন। শত্রুতার অবসান হবে। গুরুজনদের কথা মানা দরকার। প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় সুফল ... বিশদ
মিথ্যাজ্ঞানের নিবৃত্তি হইলে জীবের অন্তরতম আত্মাই যে নিত্যশুদ্ধ ব্রহ্ম, ইহা প্রত্যক্ষরূপে অনুভূত হয়। এই কারণে সম্যগ্রূপে বিচারের দ্বারা আত্মাতে আরোপিত অন্তঃকরণাদি-অনিত্যবস্তুসমূহের নিরাস করা অবশ্য কর্তব্য। পূর্বে যেসকল যুক্তি দেওয়া হইয়াছে সেইসকল-অনুসারে বিজ্ঞানময়কোশ চিদাত্মা হইতে পারে না। এই বিজ্ঞান ময়-কোশ বিকারশীল (কাম, সংকল্প প্রভৃতি বিকার ইহাতে উৎপন্ন হয়)। ইহা জড়, দেশকালের দ্বারা সীমাবদ্ধ, দৃশ্যবস্তু এবং ব্যভিচারী (সর্বকালে একরূপ থাকে না—যেমন সুষুপ্তিকালে ইহা প্রকাশ পায় না)। এই প্রকার অনিত্য বস্তু কখনও নিত্য আত্মার সহিত অভিন্ন হইতে পারে না।
বাঞ্ছিত বস্তুর লাভে প্রকাশপ্রাপ্ত, প্রিয়-মোদ-প্রমোদরূপে পরিণত, স্থিরীভূত এবং অন্তর্মুখ-তমোবৃত্তি আনন্দ-স্বরূপ আত্মার দ্বারা প্রতিবিম্বিত হইয়া আনন্দময়-কোশরূপে পরিণত হয়। সৌভাগ্যশালী ব্যক্তিগণের পুণ্যকর্মের অনুভবের সময় এই আনন্দময় কোশ স্বতঃ প্রকাশ পায়। দেহধারী জীব-মাত্র বিনা চেষ্টায় এই আনন্দময়-কোশে সুখানুভব করে।
সুষুপ্তিকালে আনন্দময়-কোশের বিশেষ প্রকাশ হয়। স্বপ্নদর্শনের সময় বা জাগ্রৎকালে বাঞ্ছিত বস্তুসমূহের দর্শন-শ্রবণাদির ফলে ইহার অল্প প্রকাশ দেখা যায়। তমোগুণরূপ উপাধিযুক্ত বলিয়া, প্রকৃতির পরিণাম বলিয়া, পূর্বকৃত পুণ্যকর্মসমূহের ফলে উৎপন্ন বলিয়া এবং অন্নময়াদি বিকারসমূহের মধ্যে বর্তমান বলিয়া এই আনন্দময় কোশও পরমাত্মা হইতে পারে না।
যুক্তির দ্বারা এবং শ্রুতিপ্রমাণের সহায়ে অন্নময়াদি পাঁচটি কোশ আত্মা নয় ইহা প্রমাণিত হইলে মিথ্যা বলিয়া প্রমাণিত এই কোশসমূহ যাঁহার আশ্রয়ে প্রকাশিত হয়, সেই স্বয়ংপ্রকাশ চৈতন্যস্বরূপ আত্মা অবশিষ্ট থাকেন।
পঞ্চকোশ হইতে ভিন্ন স্বপ্রকাশ এই যে আত্মা, তিনিই অবস্থাত্রয়ের সাক্ষী, তিনি নির্বিকার, নিরঞ্জন এবং আনন্দস্বরূপ। বিদ্বান্ ব্যক্তি (শ্রুতি, যুক্তি ও অনুভবসহায়ে) এই শুদ্ধ আত্মাকে স্বীয় আত্মার সহিত অভিন্ন বলিয়া জানিবেন।
শিষ্য বলিলেন—হে গুরো, পাঁচটি কোশই মিথ্যা বলিয়া প্রমাণিত এবং সেইগুলি আত্মা নয় বলিয়া স্থিরীকৃত হওয়ার ফলে, নিজের মধ্যে এবং স্থূল ও সূক্ষ্ম জগতের মধ্যে সবকিছুর অভাব ব্যতীত অন্য কিছু দেখিতে পাই না।
স্বামী বেদান্তানন্দ অনুদিত ‘বিবেকচূড়ামণি’ থেকে