গৃহসুখ বৃদ্ধি ও সপরিবারে আনন্দ উপভোগ। অন্যের দোষের দায়বহন করতে হতে পারে। ... বিশদ
কঠোরতম সাজার আইন দেশে আছে। কিন্তু তা কার্যকর করার সামনে আইনি জটিলতা এত বেশি যে, নৃশংসতম দোষীকেও ফাঁসিকাঠে ঝোলানো ভয়ানক কঠিন এবং অত্যন্ত সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। মানবিক মুখ্যমন্ত্রী এই দীর্ঘসূত্রতার বিপক্ষে, তিনি চান দোষীর ঘাড়ে শাস্তির খাঁড়া অতিদ্রুত নামিয়ে আনতে। এজন্য ইতিমধ্যেই ‘অপরাজিতা’ নামে একটি ধর্ষণ-বিরোধী বিলও পাস করা হয়েছে রাজ্য বিধানসভায়। বিশেষ করে নারীর জীবন ও সম্ভ্রম এবং ব্যক্তিস্বাধীনতা নিয়ে যে-সমাজ নিত্য খেলা করতে অভ্যস্ত, তাকে একটি সোজাসুজি বার্তা দিতে চান তিনি। উচ্চ আদালত যখন বাংলার পুলিসের চেয়ে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার উপরেই অধিক আস্থা রেখেছে, তখন মুখ্যমন্ত্রী সেই সিদ্ধান্তকে স্বাগতই জানান। কোর্টের আগেই, তিনি নিজেও জানিয়ে দেন, তাঁর পুলিস নির্দিষ্ট দিনের মধ্যে আশার আলো দেখাতে না-পারলে তদন্ত সিবিআইকেই তুলে দেবেন। মমতার সিদ্ধান্তটি মৃতার পরিবারের দাবির সঙ্গেও সামঞ্জস্যপূর্ণ ছিল। অপরাধের কিনারা করার প্রশ্নে সিবিআইয়ের সাম্প্রতিক রেকর্ড অতিশয় করুণ হওয়া সত্ত্বেও রাজ্যের বহু মানুষও এই তদন্তকে ঘিরে বড় আশায় বুক বেঁধেছিলেন। এমনকী, সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত এই মামলায় স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে হস্তক্ষেপ করে। শীর্ষ আদালতে হাই প্রোফাইল মামলাটির শুনানি হল ৯ সেপ্টেম্বর। এজন্য বসেছিল প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়ের নেতৃত্বে তিন বিচারপতির বেঞ্চ। কিন্তু সেদিন সর্বোচ্চ আদালতে কী দেখলাম আমরা? আদালতকে কোনওভাবেই সন্তুষ্ট করতে পারেনি সিবিআই। কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা জানায় যে, তাদের তদন্ত শেষ হয়নি, চলছে। আদালতের নির্দেশে সেদিন যে ‘স্টেটাস রিপোর্ট’ তারা পেশ করেছে তাও অসম্পূর্ণ। তবে, ময়নাতদন্ত রিপোর্টে কিছু বেনিয়ম ও গুরুতর ত্রুটির দিকে তারা বিচারপতিদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। সব মিলিয়ে সিবিআইয়ের ভূমিকায় অসন্তুষ্ট আদালত ‘ফ্রেশ স্টেটাস রিপোর্ট’ পেশের নির্দেশ জারি করেছে এবং সেটি জমা করতে হবে ১৮ সেপ্টেম্বরের ভিতরে।
ওই দিনটির জন্য আদালত অবশ্যই অপেক্ষা করবে। কিন্তু সাধারণ মানুষের ধৈর্যের বাঁধ যে ভেঙে যাচ্ছে! সহকর্মী-সহপাঠীর উপর সংঘটিত অবিচারের প্রতিকার ইস্যুতে জুনিয়র ডাক্তার তথা গোটা ডাক্তার কমিউনিটি এখনও রীতিমতো ক্ষুব্ধ। আর জি কর কাণ্ডে যে জটিলতার সৃষ্টি হয়েছে, তাতে সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগে পড়েছেন রোগীরা, বিশেষত গরিব ও মধ্যবিত্ত পরিবারগুলি, সরকারি হাসপাতালের বিনামূল্যের সেরা চিকিৎসাই যাদের একমাত্র ভরসা। ডাক্তারদের একাংশের কর্মবিরতি প্রত্যাহারে প্রশাসনিক উদ্যোগ একাধিকবার ব্যর্থ হয়েছে। অর্থাৎ বল এখনও সিবিআইয়ের কোর্টে। কিন্তু ধর্ষণ-হত্যা মামলার জট কবে খুলবে সেটি তারা এখনও পর্যন্ত মৌখিকভাবেও আশ্বস্ত করতে পারেনি। যত দিন যাচ্ছে, সিবিআই তদন্তের অগ্রাধিকার ও অভিমুখ তত যেন ভিন্ন দিক অনুসরণ করছে! তাদের অভিনিবেশ এখন বড্ড বেশি আর জি করের প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষের ‘দুর্নীতি’ মামলা কেন্দ্রিক। সন্দীপ-জমানায় আর জি করে কি কিডনি পাচার চক্র চলত? এই রহস্য উদ্ঘাটনে এবার সেখানে কিডনি বাদ পড়া ১৭৪ জনের নথি সংগ্রহ করার পাশাপাশি তাঁদের যাবতীয় প্যাথোলজি রিপোর্টও চেয়েছেন অফিসাররা। কিন্তু সেই সম্ভাবনার বিপরীতেও উঠে এসেছে একাধিক প্রাসঙ্গিক তথ্য। তার মধ্যে সবিশেষ গুরুত্বপূর্ণ হল—আর জি করে কিডনি প্রতিস্থাপনের পরিকাঠামোই নেই। এমনকী, এক্ষেত্রে সার্জারি এবং ইউরোলজি বিভাগের ডাক্তারদের একটি মিলিত চক্রের অস্তিত্ব এবং তার অতিসক্রিয়তা জরুরি। তাই এই কাণ্ড হওয়া বেশ কঠিন। তবে, ‘দুনিয়ায় কিছুই অসম্ভব নয়’ ধরে নিয়ে সিবিআই এই সন্দেহের নিরসনে অবশ্যই এগবে। কিন্তু ধর্ষণ-হত্যা কাণ্ড, যে-রহস্যের দ্রুত উন্মোচনের দিকেই বিশ্বজুড়ে মানুষ অধীর আগ্রহে রয়েছেন, সেটি কোনওভাবে অগ্রাধিকার ও গুরুত্ব হারাচ্ছে না তো?