সম্পত্তি সংক্রান্ত আইনি প্রচেষ্টায় সাফল্যের সম্ভাবনা। ন্যায্য অর্থ সঠিক সময়ে নাও পেতে পারেন। অর্থপ্রাপ্তির যোগ ... বিশদ
কিন্তু আজ তার সার্থকতা কেবল রোমন্থেই। কেননা, হালফিল রেলভ্রমণের অভিজ্ঞতা সামান্য সুখস্মৃতি উৎপাদনেও অপারগ। দূরপাল্লার রেল দুর্ঘটনার উপর্যুপরি ভয়াবহ দৃষ্টান্তগুলিই এর কারণ। মোদি সরকার তৈরি হওয়ার পর যাত্রীস্বাচ্ছন্দ্য ও সুরক্ষাকেই অগ্রাধিকার বলে ঘোষণা করেছিল। ইউপিএ জমানার ব্যবস্থাকে তারা তীব্র কটাক্ষে বিঁধেছে বারবার। কিন্তু নরেন্দ্র মোদির দেশশাসনের টানা দুটি টার্মে রেল প্রশাসন সর্বার্থে চরম ব্যর্থতা ও অপদার্থতার স্বাক্ষর রেখেছে। তৃতীয় মোদি সরকার সাক্ষ্য দিচ্ছে যে, স্বাচ্ছন্দ্য প্রদান এবং সুরক্ষা বলয় নির্মাণ—কোনওটাই তাদের কর্ম নয়, তারা অতীত আর অন্যের দোষ ধরতেই ওস্তাদ মাত্র! যে-হারে রেল দুর্ঘটনা বেড়ে চলেছে, সেখানে স্বাচ্ছন্দ্য নিয়ে আর তেমন মাথা ঘামাতে চান না যাত্রীরা, নিরাপদে গন্তব্যে পৌঁছনোই এখন তাঁদের এক ও একমাত্র লক্ষ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে।
দেশবাসীর মাথাব্যথার কারণ নিয়ে ভাবতে বসে রেল কর্তৃপক্ষই আবিষ্কার করেছে তাদের একের পর এক ব্যর্থতার কাহিনি। ২০২৩ সালের ৫ জুন থেকে গত ৯ সেপ্টেম্বরের মধ্যে দেশজুড়ে অন্তত ২৪ বার নাশকতার শিকার হয়েছে বিভিন্ন ট্রেন—হয় বেলাইন করার চেষ্টা হয়েছে অথবা হামলা হয়েছে ট্রেনের উপর। এর মধ্যে এই গতমাসেই এরকম ষড়যন্ত্র ঘটেছে ১৫টির মতো। চলতি মাসের প্রথম ন’দিনেই সংখ্যাটি ৩! রেলের সাধারণ কর্মী ও অফিসারদের মধ্যে ‘ইন্টার্নাল কমিউনিকেশন’ বা অভ্যন্তরীণ রিপোর্টে বলা হয়েছে, গাড়ি বেলাইন করে দিতে রেললাইনে সিমেন্টের চাঁই, কাঠের ‘লগ’, গ্যাস সিলিন্ডার প্রভৃতি ফেলে রাখা হচ্ছে। এই দুষ্কর্মেরই অংশ হিসেবে, এমনকী, এক স্টেশন মাস্টারকে হত্যারও চেষ্টা হয়েছে গুলি করে। গত ২২ আগস্ট শেষোক্ত ঘটনাটি ঘটেছে উত্তরপ্রদেশের হামিরপুর গ্রাম এলাকায়। অভ্যন্তরীণ রিপোর্টে কিছু জিনিস ঊহ্য রাখা হলেও এই প্রেক্ষিতে রেল সূত্রে সামনে এসেছে আরও একটি তত্ত্ব: ২০০২ সালে অক্ষরধাম মন্দিরে হামলা এবং সম্প্রতি বেঙ্গালুরুর রামেশ্বরম ক্যাফেতে বিস্ফোরণের অন্যতম মাস্টারমাইন্ড ফারহাতুল্লা গোরহিকে আরপিএফ গোয়েন্দারা এসবের নেপথ্যে সন্দেহ করছেন। তবে, এটাও ভেবে দেখতে হবে, রেল মন্ত্রকের ব্যর্থতা, অপদার্থতার সিরিজ ধামাচাপা দেওয়ার নয়া কৌশল নয়তো এই অভ্যন্তরীণ তত্ত্বটি? অন্য একাধিক ঘটনায় রেলের কর্মসংস্কৃতিও তো বড়সড় প্রশ্নের মুখে পড়ে গিয়েছে। অথচ, এই রেলই হল ব্রিটিশ ভারতের সেরা দান। বৈচিত্র্যের মধ্যে আশ্চর্য এক ঐক্য দেশভাগের পরেও যে অটুট রয়েছে, তার জন্য বিরাট কৃতিত্ব দাবি করতে পারে ভারতীয় রেল। রেলকে ঘিরেই অগ্রগতির বিরাট স্বপ্ন দেখেছে ভারত বরাবর। যে-প্রশাসনিক ব্যর্থতা সেই রেলকেই দুঃস্বপ্নের দোরগোড়ার দাঁড় করিয়ে দিয়েছে, তাদের জন্য কোনও নিন্দা, ভর্ৎসনাই বোধহয় যথেষ্ট নয়।