সম্পত্তি সংক্রান্ত আইনি প্রচেষ্টায় সাফল্যের সম্ভাবনা। ন্যায্য অর্থ সঠিক সময়ে নাও পেতে পারেন। অর্থপ্রাপ্তির যোগ ... বিশদ
আমরা জানি, ধর্ষণ-হত্যা মামলার কিনারায় কেন্দ্রীয় এজেন্সি তখনও বিশ বাঁও জলে। তবে নতুন দায়িত্ব নিয়ে পরদিন, ২৫ আগস্ট সকালেই ডাঃ ঘোষের বাড়ি হানা দেয় সিবিআই টিম। সেখান থেকেই উদ্ধার হয় বেআইনি আর্থিক লেনদেনের বহু নথি। কেন্দ্রীয় এজেন্সির দাবি অনুযায়ী, ওইসঙ্গে মেলে বরাতপ্রাপ্ত বিভিন্ন কোম্পানির কাগজপত্র ও সরকারি তথ্য। একইসঙ্গে দুটি মামলায়—ধর্ষণ-হত্যা এবং দুর্নীতি, ডাঃ ঘোষকে জেরা শুরু করে সিবিআই। খুনের তথ্য-প্রমাণ লোপাট এবং বিপুল সম্পদের মালিক হওয়ার রহস্য সন্ধানে নামেন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দারা। বিচারপ্রার্থী কোটি কোটি মানুষ ভাবলেন কিনারা হয়তো সময়ের অপেক্ষা মাত্র। অন্যদিকে, বহু মানুষের ধৈর্য হারাবার অবস্থা। আর জি করে তো বটেই, রাজ্যের নানা স্থানে জারি রয়েছে ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’ স্লোগান তুলে বিচারের সমবেত দাবি। তাতে জায়গায় জায়গায় জনজীবন ব্যাহত হচ্ছে প্রায়ই। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বড় সরকারি হাসপাতালগুলিতে চিকিৎসা পরিষেবা। বিষয়টি পর্যালোচনার জন্য সোমবারই রাজ্যের স্বাস্থ্যসচিবের সঙ্গে বৈঠক করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। নারায়ণস্বরূপ নিগম মুখ্যমন্ত্রীকে জানান, সাম্প্রতিক ডামাডোলে চিকিৎসা না-পেয়ে রাজ্যে আট-ন’জনের মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া চিকিৎসা-বঞ্চিত মোট মানুষের সংখ্যা লাখ ছয়! বলার অপেক্ষা রাখে না যে, এই মানুষগুলির বেশিরভাগই গরিব, কেননা তাঁরা সরকারি হাসপাতালের বিনামূল্যের চিকিৎসার উপরেই ভরসা করেন। কিন্তু এই লেখা পর্যন্ত উপর্যুক্ত দুই প্রশ্নেই থমকে রয়েছে নামভারী সিবিআইয়ের তদন্ত। ‘ডেভেলপেমন্ট’ বলতে—ডাঃ ঘোষকে রোজ সিবিআই দপ্তরে হাজিরা দিতে হচ্ছিল, সোমবার তাঁকে সরকারিভাবে ‘গ্রেপ্তার’ দেখানো হয়েছে। দুর্নীতি দমন আইনে সন্দীপ ঘোষের পাশাপাশি দুটি কোম্পানির বিরুদ্ধেও এফআইআর করে সিবিআই। সেই মামলায় ডাঃ ঘোষের সঙ্গে তাঁর ঘনিষ্ঠ তিনজনকেও ওইদিন গ্রেপ্তার করেছে সিবিআই। শেষোক্ত ধৃতরা হলেন—ঠিকাদার বিপ্লব সিংহ, সুমন হাজরা এবং আফসর আলি। সন্দীপের বিরুদ্ধে রয়েছে হাসপাতাল বর্জ্য নিয়ে অনিয়ম, টেন্ডার দুর্নীতি, অঙ্গপাচার, এমনকী মর্গের মৃতদেহ পাচারের মতো ভয়াবহ সব অভিযোগও।
সিবিআই সূত্রের দাবি, ডাঃ ঘোষের বয়ানে বিস্তর অসঙ্গতি পেয়েই তাঁকে এবং তাঁর ঘনিষ্ঠ তিন ব্যক্তিকে পাকড়াও করা হয়েছে। দুর্নীতির তদন্ত অবশ্যই হোক, তারও নিষ্পত্তি চাই দ্রুত। তবে, সিবিআই যেন কোনওভাবেই এখানে আটকে না-থাকে। ধর্ষণ-হত্যা মামলার রহস্য তাদের দ্রুত ভেদ করতেই হবে। দোষী বা দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেখার জন্য মানুষ সত্যিই অধীর এখন। এ নিছক একটি ঘটনায় জঘন্য অপরাধীদের সাজার বিষয় নয়, এর সঙ্গে আসলে জড়িয়ে রয়েছে সমাজকে একটি ঐতিহাসিক বার্তা প্রেরণেরই বাধ্যবাধকতা। বিশেষত নারী এবং তৃতীয় লিঙ্গের মানুষের ব্যক্তিস্বাধীনতার সামনে যে জগদ্দল প্রাচীর খাড়া রয়েছে, এটা আসলে সেটাকেই ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়ার একটি দায়িত্বশীল প্রয়াস। বাংলার দরদি জননেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মুখ্যমন্ত্রীর কুর্সি থেকেই এই আন্দোলনে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। তিনি সর্বান্তঃকরণে চাইছেন, ফাঁসিই হবে ধর্ষণের সাজা। এর জন্য তাঁর তরফে উপযুক্ত পরিষদীয় উদ্যোগও গৃহীত হয়েছে। গতকাল, মঙ্গলবারই রাজ্য বিধানসভায় সর্বসম্মতিতে পাশ হয়েছে ‘অপরাজিতা’ বিল। বল এখন রাজভবনের কোর্টে। দ্রুত সুবিচারের দাবিসহ সিবিআই এবং রাজভবনের উপর চাপ অবশ্যই রাখতে হবে। একইসঙ্গে জনজীবনও স্বাভাবিক হওয়া কাম্য। বিশেষ করে রাজ্যবাসীর চিকিৎসার অধিকার কোনওমতেই নস্যাৎ হতে দেওয়া যায় না। অন্যদিকে, অর্থনীতির স্বার্থে সমস্ত অচলাবস্থাও কাটিয়ে উঠতে হবে এখন। মন সবারই ভারাক্রান্ত। সেই বাস্তব মাথায় রেখেও দুর্গোৎসব বানচাল হতে দেওয়া বুদ্ধিমানের কাজ নয়। এই বৃহত্তম মরশুমি বাজারটি আসলে বাংলার অর্থনীতির একটি বড় চালিকাশক্তি।