সম্পত্তি সংক্রান্ত আইনি প্রচেষ্টায় সাফল্যের সম্ভাবনা। ন্যায্য অর্থ সঠিক সময়ে নাও পেতে পারেন। অর্থপ্রাপ্তির যোগ ... বিশদ
বিলকিস বানো নামটা বারবার সংবাদের শিরোনামে উঠে এসেছে। ২০০২ সালে গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী মোদির রাজত্বেই পাঁচ মাসের অন্তঃসত্ত্বা গৃহবধূকে গণধর্ষণ করেছিল দুষ্কৃতীরা। তাঁর চোখের সামনেই প্রায় গোটা পরিবারকে নিকেশ করে দেওয়া হয়। এই ঘটনায় ১১ জনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়। কিন্তু ২০২২ সালের ১৫ আগস্ট গুজরাতের বিজেপি সরকার ‘জেলে ভালো ব্যবহার’-এর তকমা দিয়ে ১১ জনকেই মুক্তি দেয়। জেলমুক্তির পরেই এই ঘৃণ্য অপরাধীদের সংবর্ধনা দেয় উগ্রহিন্দুত্ববাদীরা। এদের ‘ব্রাহ্মণ ও সংস্কারি’ বলে গর্বিত প্রচার হয়। এনিয়ে দেশ তোলপাড় হওয়ায় শেষমেশ সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে ফের জেলে ঠাঁই হয় ওই ১১ জনেরই। গুজরাত মোদির মাতৃভূমি হলে বারাণসী তাঁর নির্বাচনী কেন্দ্র। উত্তরপ্রদেশের যোগীরাজ্যের এই মন্দির শহরের গর্ব আইআইটি’র বেনারস হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসের মধ্যেই ২০২৩ সালের নভেম্বরে ঘটে যায় দলবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনা। সেই সন্ধ্যায় ক্যাম্পাসের মধ্যে নির্জন ও অন্ধকারাচ্ছন্ন জায়গায় ২০ বছরের বিটেক ছাত্রীকে তুলে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণ করেছিল যে ‘পশুরা’ তারা তিনজনই বিজেপি’র আইটি সেলের অন্যতম মাথা। পুলিস তাদের গ্রেপ্তার করে। বাইক-ফোন বাজেয়াপ্ত করে। অভিযুক্তরা নাকি অপরাধের কথা স্বীকারও করে। তবু দেখা যায়, আগস্ট মাসের শুনানিতে দু’জনকে জামিনে মুক্তি দিয়েছে ইলাহাবাদ হাইকোর্ট। আরেকজনের ক্ষেত্রে শুনানি হবে চলতি মাসের শেষে। একাধিক আইনজীবী জানিয়েছেন, এই মামলায় সরকারের আইনজীবী নাকি ধর্ষণের উপযুক্ত প্রমাণই দিতে পারেননি। তাঁর সওয়ালেও কোনও ঝাঁঝ ছিল না। এই অভিযুক্তরা কতটা প্রভাবশালী তা বোঝা যায় যখন দেখা যায় প্রধানমন্ত্রী, উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী কিংবা জেপি নাড্ডার মতো বিজেপি’র সর্বভারতীয় নেতাদের সঙ্গে একফ্রেমে তাদের ছবি ছড়িয়ে পড়ে! মধ্যপ্রদেশের গত বিধানসভা ভোটে তাদের প্রচার করতেও দেখা গিয়েছিল।
আসলে অবিজেপি শাসিত রাজ্যগুলিতে কোনও ন্যক্কারজনক ঘটনা ঘটলে দেখা যায় কেন্দ্রের শাসক দল তা ইস্যু করতে মরিয়া হয়ে ওঠে। আর ডাবল ইঞ্জিনের রাজ্যগুলির ক্ষেত্রে থাকে নীরব। জম্মু-কাশ্মীরের কাঠুয়া থেকে গুজরাত, মণিপুর থেকে উত্তরপ্রদেশের উন্নাও, হাতরাস— দেশে একের পর এক নারী নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে। সোনার মেয়ে মহিলা কুস্তিগীরদের কেউ কেউ হয়েছেন বিজেপির এক গুণধর সাংসদের লালসার শিকার। স্বঘোষিত ‘ধর্মগুরু’ আশারাম বাপু, রাম-রহিমের কুকীর্তির কথা কারও অজানা নয়। এসব ক্ষেত্রে অবশ্য প্রধানমন্ত্রীর মুখে মহিলাদের সুরক্ষা নিয়ে এমন উদ্বেগ ধরা পড়েনি। আর জি করের ঘটনার পর এখন মেয়েদের নিরাপত্তা, ন্যায়বিচার, কড়া আইন, দ্রুত সাজা, কঠোরতম শাস্তি—প্রধানমন্ত্রীর মুখে গত কয়েকদিন এইসব শব্দবন্ধ শুনে তাই মনে হতেই পারে তিনি কি এসব কথা বলছেন শুধুই বিরোধীশাসিত রাজ্যগুলির ঘটনার দিকে তাকিয়ে? মোদি রাজত্বে ‘বেটি বাঁচাও, বেটি পড়াও’-এর গালভরা স্লোগান থাকলেও একের পর এক ঘটনা প্রমাণ করছে এই জমানায় ‘বেটিরা’ সুরক্ষিত নয়। আর বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলিতে নারী নির্যাতনের ঘটনা ঘটলে নীরব থেকে মোদির সরকার কার্যত ঘটনাকে আড়াল করার চেষ্টাই করেছে। তাই প্রশ্ন, শাসকের দৃষ্টিতে নিরপেক্ষতা কই? কোথায় ন্যায়বিচার, নিরাপত্তা!