কর্মে ও ব্যবসায়ে উল্লেখযোগ্য সাফল্য। কৃষিপন্ন বিক্রেতা ও ডাক্তারদের অর্থকড়ি প্রাপ্তি হবে সর্বাধিক। বন্ধুকে টাকা ... বিশদ
ভারতের। ১৯৭৮ সালের তীব্র আর্থিক দুর্দশার দিনে ফিরে গিয়েছে একবিংশ শতকের তৃতীয় দশকের ভারত। একটি গবেষণা সংস্থা দেখিয়েছে, মোদি জমানায় দরিদ্র মানুষের সংখ্যা দ্বিগুণ হয়েছে। অথচ ২০১৪ সালে নরেন্দ্র মোদি বাকি ভারতের মন জয় করেছিলেন ‘গুজরাত মডেল’ আমদানি করে। এই মডেল কতখানি কসমেটিক ছিল তা দেশবাসীকে প্রত্যক্ষ করতে হয়েছে জীবনের দাম দিয়ে। এই প্রসঙ্গে নোট বাতিল, ত্রুটিপূর্ণ জিএসটির ধাক্কা এবং করোনা মোকাবিলায় বহুবিধ ব্যর্থতার প্রসঙ্গ স্মরণ করতে হবে।
ব্যাপারটা গোড়া থেকেই ভালোভাবে নেননি অর্থনীতির পণ্ডিতরা, এমনকী মোদির ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত মুষ্টিমেয় যে-ক’জন, তাঁরাও। শুরুতেই সংঘাত বেধেছিল রঘুরাম রাজনের সঙ্গে। মনমোহন জমানার শেষদিকে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের দায়িত্ব নিয়েছিলেন রঘুরাম। মোদি জমানায় ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বরে তিনি দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি নেন। মোদির উপদেষ্টাদের কথামতো রিজার্ভ ব্যাঙ্কের সর্বোচ্চ পদে আনা হয়েছিল উর্জিৎ প্যাটেলকে। কিন্তু তিনিও টিকতে পারেননি বেশিদিন। দু’বছর পার করতেই তাঁর ছেড়ে দে মা কেঁদে বাঁচি অবস্থা হয়। সংঘাত বাধে সরকারের মুখ্য অর্থনৈতিক উপদেষ্টা অরবিন্দ সুব্রহ্মণ্যমের সঙ্গেও। নীতি আয়োগের প্রথম ভাইস চেয়ারম্যান অরবিন্দ পানাগড়িয়া পদত্যাগ করেন ২০১৭ সালের আগস্টে। ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে প্রধামন্ত্রীর ইকনমিক অ্যাডভাসরি কাউন্সিল থেকে বেরিয়ে যান সরকারের ‘চিয়ার লিডার’ হিসেবে পরিচিত হয়ে ওঠা অর্থনীতিবিদ সুরজিৎ ভাল্লা। ন্যাশনাল স্ট্যাটিসটিকস কমিশনের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান পি সি মোহনান এবং জে ভি মীনাক্ষী একযোগে তাঁদের গুরুত্বপূর্ণ পদ থেকে অব্যাহতি নেন। পিরিয়ডিক লেবার ফোর্স সার্ভে রিপোর্ট প্রকাশ না-করার প্রতিবাদে ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে তাঁরা এত বড় সিদ্ধান্ত নেন। ২০১৯-এর জানুয়ারিতে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের ডেপুটি গভর্নর পদ ছেড়ে দেন বিরল আচার্য।
মোদি জমানায় সর্বশেষ সংযোজন কৃষ্ণমূর্তি সুব্রহ্মণ্যম। কিছুদিন আগেই মোদি সরকারের বর্তমান মুখ্য অর্থনৈতিক উপদেষ্টা কৃষ্ণমূর্তি সুব্রহ্মণ্যম ঘোষণা করেছেন, তিনি আর ওই পদে থাকছেন না। ডিসেম্বর মাসেই সরে যাচ্ছেন। মোদি সরকারের সংস্রব ত্যাগের কারণ সরকারিভাবে সকলে খোলসা করেননি। বেশিরভাগই ‘ব্যক্তিগত’ কারণ দেখিয়ে সরকারের মুখরক্ষা করলেও সংশ্লিষ্ট মহল জানে, আসল কারণ সরকারের সঙ্গে বনিবনা হয়নি তাঁদের। যেমন নোট বাতিলের মতো হঠকারিতা কোনও সুস্থ মস্তিষ্কের অর্থনীতির পণ্ডিতের পক্ষে মেনে নেওয়া সম্ভব ছিল না। তেমনি সরকারের গুরুত্বপূর্ণ কিছু আর্থিক বা উন্নয়ন সংক্রান্ত রিপোর্ট শুধুমাত্র নেতিবাচক বলেই চেপে যাওয়ার ফতোয়া মানতে পারেননি কেউ কেউ। তাঁরা এই কালচারে অভ্যস্ত নন। তাঁরা জানেন, সত্য চেপে যাওয়ার অর্থ সংশোধনের পথ রুদ্ধ করে ফেলা। আসলে এই সরকারের কাছে অগ্রাধিকার শুধুই চমক—কাজ নয়, উন্নয়ন সবসময়ই বাহ্য! এই নীতি নিয়েই ২০২২ সালের বাজেট পেশ করার জন্য প্রস্তুত হতে হবে মোদি সরকারের অর্থমন্ত্রককে। ৫ ট্রিলিয়ন ডলার অর্থনীতি অর্জনের ভবিষ্যৎ বছরে ২ কোটি চাকরির মতোই ‘জুমলা’ ঠেকছে ক্রমশ। আর কবে বাস্তবের মাটিতে পা রাখবেন মোদি? এই বিলাসিতা দেশ আর সইতে পারছে না।