কর্মে ও ব্যবসায়ে উল্লেখযোগ্য সাফল্য। কৃষিপন্ন বিক্রেতা ও ডাক্তারদের অর্থকড়ি প্রাপ্তি হবে সর্বাধিক। বন্ধুকে টাকা ... বিশদ
সরকারের কাছে বস্তুত কোনও জবাব নেই। মুখরক্ষার জন্য কেন্দ্রীয় সরকার নতুন এক কৌশল নিল। নাম দিল আনলক। ১ জুন, ২০২০ থেকে শুরু হল আনলক ১.০। এইভাবে ১ অক্টোবর, ২০২১ তারিখে দেশ প্রবেশ করেছে আনলক ১৭.০-তে। আনলক পর্বেই, এ বছরের ১৬ জানুয়ারি টিকাকরণের সূচনা হয়। ইতিমধ্যে ১০০ কোটি ডোজের সীমা অতিক্রম করেছে ভারত। তা নিয়ে মোদি সরকার ব্যাপক ঢক্কানিনাদ শুরু করে দিয়েছে। কিন্তু বাস্তবটা মোটেই উজ্জ্বল নয়। সম্পূর্ণ ডোজ পেয়েছে মাত্র ২২ শতাংশের বেশি কিছু মানুষ। অর্থাৎ সকলের পূর্ণ টিকাকরণ থেকে এখনও বহু দূরেই অবস্থান করছে ভারত। সম্পূর্ণ টিকাকরণের বিচারে জাপান, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন, ফ্রান্স, ইতালি, ব্রাজিল, চীন প্রভৃতি দেশের অনেক পিছনেই পড়ে রয়েছে ভারত। আগামী ডিসেম্বরের ভিতরে সব প্রাপ্তবয়স্ক ভারতবাসীর টিকাকরণের অঙ্গীকার কীভাবে রক্ষিত হবে সরকার তার রূপরেখা দেয়নি। এর মধ্যেও দেশজুড়ে সব ধরনের ধর্মীয় সমাবেশ থেকে রাজনৈতিক কর্মসূচির মধ্যে কোনও খামতি নেই। শুধু বন্ধ স্কুল থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত সব ধরনের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। পঠনপাঠন থেকে পরীক্ষাগ্রহণ দু’বছর যাবৎ কোনওটাই আর স্বাভাবিক নেই। অনলাইনে অথবা অন্যকোনও বিকল্প উপায়ে এগুলি নামমাত্র উতরে যাওয়ার প্রয়াস নেওয়া হচ্ছে।
কিন্তু অর্থসঙ্কট আর প্রযুক্তি নাগালে না-থাকার কারণে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে প্রান্তিক ও গরিব পরিবারের ছেলেমেয়েরা। শিক্ষাবিদদের আশঙ্কা, এই জিনিস আর চলতে দেওয়া ঠিক নয়। ইতিমধ্যেই যে ক্ষতি হয়ে গিয়েছে সেটাই অপূরণীয়। বহু ছেলেমেয়ে সামান্য বইপড়া (রিডিং দেওয়া) এবং যোগ-বিয়োগের অঙ্ককষাও ভুলে গিয়েছে! স্থায়ীভাবে স্কুলছুট হয়ে গিয়েছে হাজার হাজার ছেলেমেয়ে। মনে রাখতে হবে, স্কুলছুট ঠেকানোর জন্যই মিড ডে মিল-সহ নানা ধরনের উৎসাহদানের কর্মসূচি গৃহীত হয়। তাতে অনেক কাজও হয়েছে। কিন্তু করোনাকালে এসব যে অনেকাংশে জলে গিয়েছে তা শিক্ষামহলের চোখ এড়ায়নি। তাই অবিলম্বে স্কুল-কলেজ খুলে দেওয়ার উপরেই গুরুত্ব আরোপ করেছেন শিক্ষাবিদরা। বাস্তবটা উপলব্ধি করেছেন মুখ্যমন্ত্রীও। ১৬ নভেম্বর থেকে রাজ্যে খুলে দেওয়া হচ্ছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলি। স্কুলের ক্ষেত্রে চালু হচ্ছে আপাতত নবম-দ্বাদশ শ্রেণি। মুখ্যমন্ত্রীর এই উদ্যোগ সাধু। এবছরের গোড়ার দিকেও একবার স্কুল-কলেজ খোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়। উঁচু ক্লাসের পঠনপাঠন অল্প কিছুদিন চলার পরই তা বন্ধ করে দিতে হয়েছিল—করোনার দ্বিতীয় ঢেউ রুখতে দেশ ব্যর্থ হওয়ার কারণে। অতএব, এবার সমস্ত ধরনের সাবধানতা অবলম্বন করেই পদক্ষেপ করতে হবে। মাস্ক পরা, স্যানিটাইজার ব্যবহার, দূরত্ববিধি রক্ষা প্রভৃতি বাধ্যতামূলক করতে হবে। অতি দ্রুত টিকাকরণের আওতায় আনতেই হবে সব বয়সি ছাত্রছাত্রীকে। এই দায়িত্ব পালনে মোদি সরকার যত আন্তরিকতা ও দক্ষতার পরিচয় দেবে শিক্ষা ক্ষেত্রের এই সঙ্কট তত দ্রুত কাটিয়ে উঠতে পারবে দেশ। মনে রাখতে হবে, শিক্ষার সঙ্কটের প্রভাব দীর্ঘ মেয়াদে বৃদ্ধি বা আর্থিক সঙ্কটের থেকে অনেক অনেক বেশি।