কর্মপ্রার্থীদের কর্মলাভ কিছু বিলম্ব হবে। প্রেম-ভালোবাসায় সাফল্য লাভ ঘটবে। বিবাহযোগ আছে। উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় থেকে ... বিশদ
গোতাবায়া দীর্ঘ কুড়ি বছর সেনাবাহিনীতে কাটিয়েছেন। এই সময়ের মধ্যে তিনি দমন করেছেন বহু গৃহযুদ্ধ। অনেক রক্ত আর হিংসার পথে আকীর্ণ তাঁর চলার পথ। ১৯৯২ সালে অবসরগ্রহণের পর তিনি চলে যান মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে। কিন্তু তাঁর ভাই মহিন্দা প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের পর শ্রীলঙ্কায় ফিরে আসেন এবং দেশের প্রতিরক্ষামন্ত্রী হন। পরের চার বছর শ্রীলঙ্কা দেখেছে রক্তাক্ত গৃহযুদ্ধ। সেই সময়ে গোতাবায়া হয়ে উঠেছিলেন ডিফ্যাক্টো সেনাপ্রধান এবং সন্ত্রাস দমনে নির্বিচার অত্যাচার চালিয়েছিলেন। এই গৃহযুদ্ধে বলি হয়েছিল অন্তত চল্লিশ হাজার তামিল এবং বিরোধী। কত মানুষ যে নিখোঁজ হয়ে গিয়েছিলেন, শ্রীলঙ্কার ইতিহাস তা লিখে রাখেনি। সেই সময় সংবাদপত্রে এনিয়ে কিছু লেখা যেত না। সরকারবিরোধী খবর ছাপা হলেই হুঁশিয়ারি শুরু হতো। সাংবাদিক গুমখুনের ঘটনাও সেই সময় বহু ঘটেছে। এমনই এক সাংবাদিক লাসান্থা বিক্রমতুঙ্গের হত্যাকাণ্ড সেদেশে আলোড়ন ফেলে দিয়েছিল। অভিযুক্ত ছিলেন গোতাবায়া। সেই হত্যাকাণ্ডের মীমাংসা আজও হয়নি। দেশের মানুষ সেই সময় তাঁকে বলতেন ‘টার্মিনেটর’। এমনকী অস্ত্র ডিলেও তিনি বহু কোটি টাকার কাটমানি খেয়েছিলেন বলে অভিযোগ উঠেছিল। তারও মীমাংসা হয়নি।
এরপরেও তিনি ক্ষমতায় এলেন তার কারণ উগ্র জাতীয়তাবাদ এবং সন্ত্রাস দমনে তাঁর কঠোর মনোভাব। গত বছর ইস্টারে আইএস হামলায় ২৭০ জন মানুষের মৃত্যু হয়েছিল। তাতে মূলত বৌদ্ধরাই মারা গিয়েছিলেন। এরপরই সেখানে মুসলিমদের একাংশের বিরুদ্ধে দেশজুড়ে একটা ক্ষোভের স্রোত বয়ে গিয়েছিল। মাথা চাড়া দিয়ে উঠেছিল উগ্র বৌদ্ধ ও সিংহলী জাতীয়তাবাদ। সেই আবেগের দোলায় দুলে তিনি ক্ষমতায় এলেন। পাশাপাশি এই ভোটের ফল প্রকাশের পর থেকেই শ্রীলঙ্কায় ভয়ে কাঁটা হয়ে আছেন নিরীহ মুসলিমদের অনেকে। তাঁরা আবার নতুন করে আতঙ্কিত। কী করে পরবর্তী দিনগুলি শান্তিতে কাটাবেন ভেবে পাচ্ছেন না। কেননা ভোটের আগেই তাঁদের হুমকি দিয়ে বলা হয়েছিল গোতাবায়াকে ভোট না দিলে, তাঁদের ঘরবাড়ি আগুনে পুড়িয়ে ছারখার করে দেওয়া হবে। দেশের মুসলিম সংগঠনের নেতাদের কাছে এই ধরনের হুমকি-ফোন গত দু’মাস ধরে আসছিল। অভিযোগ উঠেছিল, মুসলিমরা ভোটের দিন যখন বিভিন্ন জায়গায় ভোট দিতে যাচ্ছিলেন, তখন তাঁরা বহু জায়গায় আক্রমণের শিকার হয়েছেন। ফলে আতঙ্কে গোতাবায়াকে ভোট দিয়েছেন বহু মুসলিম। কিন্তু তাতে সম্ভবত আতঙ্ক কাটল না, বরং বেড়েই গেল।
শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট হিসাবে গোতাবায়ার নাম ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি তাঁকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। এটা অবশ্যই সৌজন্যের ব্যাপার। কিন্তু গোতাবায়ার জয়ের পর একটা প্রশ্ন স্বাভাবিকভাবেই উঠে আসছে, এই জয় ভারতের পক্ষে কতটা সহায়ক হয়ে উঠবে? তাহলে বলতেই হয়, গোতাবায়ার এই জয় ভারতের পক্ষে খুব একটা অনুকূল নয়। কেননা গোতাবায়া চীনের খুব পছন্দের মানুষ। এর আগে ২০১৫ সালে মহিন্দা রাজাপাকসেকে জেতাতে চীন প্রচুর অর্থ ব্যয় করেছিল। এবারও অলক্ষ্যে থেকে কলকাঠি নেড়েছে চীন। আগামী বছর দেশে সাধারণ নির্বাচন। সেখানে প্রধানমন্ত্রী হতে চান মহিন্দা। চীনও সেটাই চায়। দুই ভাই যদি দেশের প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রী হন, তাতে চীনের অনেকটা সুবিধা। ভারতের থেকে শ্রীলঙ্কাকে দূরে সরিয়ে রাখতে আপ্রাণ চেষ্টা চালাচ্ছে চীন। অনেকটাই সফল হয়েছে তারা। তাই বলা যায় শ্রীলঙ্কায় গোতাবায়ার এই জয় ভারতের কাছে খুব একটা উচ্ছ্বাস করার মতো বিষয় নয়। গোতাবায়াকে ‘ভারতবন্ধু’ করে তোলার চেষ্টা নরেন্দ্র মোদি অবশ্যই করবেন। কিন্তু তাতে কতটা সাফল্য মিলবে সে বিষয়ে সন্দেহ থেকেই যায়।