কর্মপ্রার্থীদের কর্মলাভ কিছু বিলম্ব হবে। প্রেম-ভালোবাসায় সাফল্য লাভ ঘটবে। বিবাহযোগ আছে। উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় থেকে ... বিশদ
ভারত এবং বাংলা দু’টুকরো হয়ে যাওয়ার পরেও স্বাধীন ভারতে বাংলাভাষা এবং বাঙালি সংস্কৃতি যথেষ্ট অগ্রণী ভূমিকা পালন করে চলছে। সংখ্যার বিচারে বাংলাভাষীরা এদেশে দ্বিতীয় বৃহত্তম ভাষা গোষ্ঠী। পশ্চিমবঙ্গ এবং ত্রিপুরা রাজ্যের প্রধান সরকারি ভাষা হল বাংলা। এছাড়া অসমসহ সমগ্র উত্তর-পূর্বাঞ্চলে এবং বিহার, ঝাড়খণ্ড, ওড়িশা, আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জে বাংলাভাষা ও সংস্কৃতি রীতিমতো সমীহ জাগিয়ে রেখেছে। সারা দেশ কলকাতাকেই ভারতের সাংস্কৃতিক রাজধানী হিসেবে মান্যতা দিয়ে থাকে। হিন্দিসহ ভারতের আর কোনও আঞ্চলিক ভাষার মানুষ তার মুখের ভাষা প্রাণের ভাষা নিয়ে এই গর্ব করতে পারবে না। পরিতাপের সঙ্গে লক্ষ করা যাচ্ছে, তবুও ভারতে সরকারি পর্যায়ে বাংলাভাষাকে তার প্রাপ্য গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে না। বাংলাভাষীদের একাংশের বরাবরের ক্ষোভ এই যে, বাংলাভাষাকে, বাঙালি জাতি ও সংস্কৃতিকে ঐতিহাসিক কারণেই দাবিয়ে রাখার একটি পরোক্ষ ষড়যন্ত্র এদেশে বরাবর চলছে। আম বাঙালির এই ক্ষোভ কখনও কখনও যেন মান্যতাও পেয়ে যায়। তার পিছনে থাকে সরকারের কিছু ভুল সিদ্ধান্ত। যেমন আগামী বছরের জয়েন্ট এন্ট্রান্স (মেইন) পরীক্ষায় মাধ্যম হিসেবে ইংরেজি ও হিন্দির সঙ্গে গুজরাতি ভাষাকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
স্বামী বিবেকানন্দ বলেছিলেন, কোনও ভাষাই অশ্রদ্ধা ও অবজ্ঞার নয়। কথাটি গুজরাতি ভাষা ও সংস্কৃতির জন্যও প্রযোজ্য। গুজরাত, গুজরাতি ভাষা ও সংস্কৃতি নিয়ে বাংলার কোনও বিরোধ নেই। গুজরাতি ভাষা সংস্কৃতিকে বাংলার মানুষও ভালোবাসে। তবু বলতে হবে, মোদি সরকারের এই সিদ্ধান্ত অত্যন্ত বৈষম্যমূলক, অবাঞ্ছিত ও ঘোরতর অন্যায়। যদি আঞ্চলিক ভাষার অধিকার ও মর্যাদার স্বীকৃতির যুক্তিতে গুজরাতি ভাষাকে এই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সর্বভারতীয় প্রবেশিকা পরীক্ষায় মাধ্যম হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়, তবে এই অধিকার ও মর্যাদা সমস্ত আঞ্চলিক ভাষার প্রাপ্য। সবগুলি স্বীকৃত আঞ্চলিক ভাষাকে অবিলম্বে এই পঙ্ক্তিভুক্ত করা হোক অথবা পত্রপাঠ বাদ দেওয়া হোক গুজরাতিকেও। ভারতে সংখ্যার বিচারে গুজরাতি অনেক পিছনের একটি ভাষা—হিন্দি ও বাংলার অনেক পিছনে। তাই বিশেষত বাংলা থেকে, সারা দেশের বাংলাভাষীদের তরফে এ নিয়ে যে প্রতিবাদ ধ্বনিত হয়েছে—তাকে সম্মান করা উচিত সরকারের। অন্যথায় বিজেপি সরকারকে আরও বদনামের ভাগীদার হতে হবে। সামান্য বুদ্ধি থাকলে কোনও শাসক এমন বদনাম কুড়ায় না। কেন্দ্রের প্রধান শাসক দলটির গায়ে এমনিতেই সাম্প্রদায়িক অসহিষ্ণুতার কালিমা রয়েছে, এবার তার উপর পোক্তভাবে সেঁটে যাবে ভাষাগত বিভাজনের কারিগর বদনামটিও। তাই বিষয়টি গুরুত্ব দিয়েই পুনর্বিবেচনা করতে হবে স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকেই।