নিজস্ব প্রতিনিধি, মালদহ: মাদক কারবারে জড়িতদের শ্রীঘরে পাঠাতে তৎপর মালদহ জেলা পুলিস। ওই কারবারে ফেরারদের বিরুদ্ধে এবার ‘হুলিয়া’ জারি হতে চলেছে বলে পুলিসকর্তারা জানিয়েছেন। সেইসঙ্গে পলাতকদের সন্ধান দিতে পারলে মিলবে পুরষ্কার, জানিয়েছে পুলিস। সেই ব্যাপারে দ্রুত পদক্ষেপ করা হবে বলে পুলিস সূত্রের খবর। মাদক চক্রের পাণ্ডাদের হাজতবাস করানোই মূল লক্ষ্য পুলিসের। মূল চক্রীদের জেলে ভরতে পারলে মাদক কারবার নিয়ন্ত্রণে আনা যাবে বলে পুলিসকর্তারা মনে করছেন। এ ব্যাপারে মালদহের পুলিস সুপার অলোক রাজোরিয়া বলেন, মাদক কারবারে জড়িতদের বিরুদ্ধে আমরা বেশকিছু মামলা রুজু করেছি। কয়েকজন কারবারি পলাতক। এলাকায় তাদের ছবি সহ পোষ্টার সাঁটানো হবে। প্রয়োজনে পোষ্টারে আর্থিক পুরষ্কারের বিষয়টি ঘোষণা করা হবে। আমরা ইতিমধ্যে মাদক কারবারিদের খোঁজ দেওয়ার জন্য টোল ফ্রি নম্বর চালু করেছি। সেখানে অনেকেই আমাদের ফোন করে খবর দিচ্ছেন। পুরষ্কারমূল্য ঘোষণা হলে বিষয়টি নিয়ে সাড়া পড়বে। তিনি আরও বলেন, কালিয়াচক, বৈষ্ণবনগর এলাকার কয়েকজন মাদক কারবারি এলাকায় সমাজসেবী হিসেবে নিজেদের পরিচয় দেয়। অথচ পুলিসের খাতায় তারা মাদক কারবারে অভিযুক্ত। পুলিসের চোখে ধুলো দিয়ে তারা লুকিয়ে থাকে। ছবি ও নাম সহ এলাকায় পোষ্টার সাঁটালে সংশ্লিষ্টদের আসল রূপ এলাকাবাসীর কাছে প্রকাশ পাবে। তখন তারা পিছু হঠবে। দ্রুত আমরা হুলিয়া জারি ও পুরষ্কার ঘোষণার বিষয়টি বাস্তবায়িত করব। উল্লেখ্য, বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী জেলা মালদহে দীর্ঘদিন ধরে মাদক কারবার চলে আসছে। সীমান্তে ব্রাউন সুগার সহ অন্যান্য মাদক দ্রব্য পাচার হয়। জেলার মধ্যে কালিয়াচক এবং বৈষ্ণবনগর থানা এলাকায় সবচেয়ে বেশি মাদকের কারবার চলে বলে পুলিস জানিয়েছে। ফলে মাদক মাফিয়া ও পাচারকারীর সংখ্যাও ওই দুই থানা এলাকায় বেশি। মাদক, জালনোট কারবারীদের বিরুদ্ধে অভিযান চালাতে জেলা পুলিস ‘ক্রাইম মনিটরিং গ্রুপ’ (সিএমজি) নামে বিশেষ শাখা খুলেছে। ওই গ্রুপের পুলিস কর্মী ও আধিকারিকরা শুধুমাত্র অপরাধ জগতের সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে কাজ করে।
পুলিস সূত্রে জানা গিয়েছে, সিএমজি-র লাগাতার অভিযানে কালিয়াচকের বেশ কয়েকজন মাদক কারবারি বর্তমানে গা ঢাকা দিয়ে রয়েছে। তারা ভিন রাজ্যে চলে গিয়েছে বলে পুলিসকর্তারা মনে করছেন। কেউ কেউ অবশ্য অন্য জেলায় গিয়ে আশ্রয় নিয়েছে বলেও পুলিস জানতে পেরেছে। সংশ্লিষ্ট এলাকার পুলিসের সাহায্যে সিএমজি অভিযান চালিয়ে কয়েকজনকে ধরেছে। তবে এখনও অনেকে পলাতক। পুরনোদের পাশাপাশি নতুন করে কয়েকজন মাদক কারবারে নাম লিখিয়েছে। ওই তালিকায় মহিলা এবং কিশোররাও রয়েছে। তাদের ব্যাপারেও পুলিস তথ্য জোগাড় করছে। অভিযুক্তদের ছবিও পুলিসের কাছে এসেছে। সেই ছবি এবং তথ্য সম্বলিত পোষ্টার পুলিসের তরফে এলাকায় সাঁটানো হবে।
এক পুলিস আধিকারিক বলেন, মাদক ব্যবসার টাকায় অনেকে ঝা চকচকে বাড়ি তৈরি করেছে। কেউ কেউ দামি গাড়িতে ঘোরে। এলাকায় তাদের ‘সুনাম’ রয়েছে। ওইসব ব্যক্তিদের আসল পরিচয় এবার স্থানীয় বাসিন্দারা জানতে পারবে। কয়েকজন অভিযুক্তের বাড়িতে আমরা সম্প্রতি অভিযান চালিয়েছি। অভিযুক্তদের পরিবারের লোকজন আমাদের কাছে সত্য গোপন করেছেন। অভিযুক্ত ভিন রাজ্যে কাজ করে বলে আমাদের জানানো হয়েছে। অথচ সংশ্লিষ্টরা বেশিরভাগ দিন এলাকায় থাকে বলে আমরা জানতে পেরেছি। আর্থিক পুরষ্কারের বিষয়টি ঘোষণা করলেই অনেকেই তাদের গতিবিধি সম্পর্কে আমাদের ফোনে তথ্য দিতে পারেন। তথ্যদাতার নাম, পরিচয় গোপন থাকবে।