ব্যবসা ভালো হবে। কেনাবেচা ক্রমশ বাড়বে। অর্থাগম ভাগ্য আজ অনুকূল। দেহে দুর্বলতা। ... বিশদ
সময়টা ১৯৮১ সাল। ময়ূরেশ্বর থানার ঝিকড্ডা পঞ্চায়েতের কোটে গ্রামের ঘটনা। এতবছর পর ১৩ জন অভিযুক্তকে দোষীসাব্যস্ত করলেন সিউড়ির প্রথম দায়রা অতিরিক্ত জেলা বিচারক তীর্থঙ্কর ভট্টাচার্য। আগামী সোমবার দোষীদের সাজা ঘোষণা করবেন তিনি।
ঠিক কী ঘটেছিল সেদিন? জানা যায়, কোটে গ্রামে বিয়ে হয় মাড়গ্রামের বাসিন্দা ফরিদা বিবির। তাঁর ১ বছর বয়সী ছেলে নানা দুরারোগ্য ব্যাধিতে ভুগছিল। বিশ্বাস অনুযায়ী, মল্লারপুরের সন্ধিগড়ার পীরবাবার ভক্ত হিসেবে বাপের বাড়ির মোট ৯ সহদর ভাই তাঁদের ভাগ্নেকে সুস্থ করে তুলতে বোনের বাড়িতে সুফি গান করতে আসেন। তাঁদের বিশ্বাস ছিল, ‘আমি তোমার মত প্রভু পাব না আর, কভু এই ত্রি-সংসারে’—এই গানের মাধ্যমে প্রার্থনা করলেই সুস্থ হয়ে যাবে ভাগ্নে। কিন্তু এরপর গ্রামের লোকজন জড়ো হয়ে বলতে শুরু করে, এখানে এসব করা চলবে না। তারপর সেই বাড়ি সকলে মিলে ঘিরে ফেলে। তাতে ভয় পেয়ে সকলে বাড়ির রান্নাঘরে ঢুকে যান। বাইরে থেকে তালা মেরে দিয়ে চারিদিক দিয়ে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে মারার চেষ্টা করে উত্তেজিত প্রতিবেশীরা। কিন্তু আগুন লাগলেও ভেতর থেকে শব্দ শুনতে পাওয়া যাচ্ছিল। তাই মৃত্যু নিশ্চিত করতে রান্নাঘরের দেওয়াল ফুটো করে লঙ্কার ধোঁয়া দিতে থাকে। তাতেও মৃত্যু হয়নি জানতে পেরে দরজা খুলে বউ ও মেয়েকে বের করা হয়। এরপর এক এক করে ভাইদের বের করে টাঙি, কোদাল সহ একাধিক ধারাল অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে কুপিয়ে মারা হয়। ৯ জনের দেহ গ্রামের বিভিন্ন দিকে ফেলে দিয়ে আসে অভিযুক্তরা। পরের দিন ফরিদার মা আনোয়ারা বিবি থানায় এফআইআর করেন। ১৯৮৬ সালে ৮২ জনের নাম পুলিস চার্জশিটে উল্লেখ করে আদালতে পেশ করে। তারপর নানা টালবাহানার পর ২০০৬ সাল থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত সাক্ষ্যগ্রহণ চলে। তাতে দোষীদের অনেককেই শনাক্ত করা গিয়েছিল। কিন্তু কেউ কেউ গ্রেপ্তার হলেও পরে উপযুক্ত তথ্য প্রমাণের অভাবে সবাই ছাড়া পেয়ে গিয়েছিল। বাম আমলে ময়ূরেশ্বরের এই নৃশংস ঘটনা নানাভাবে ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা চলে বলে অভিযোগ ওঠে। এমনকী এফআইআরের কপি হারিয়ে যায়। তদন্তকারী অফিসার মারা যান। সাক্ষীরা অনেকেই মারা যান। চার্জশিট পর্যন্ত খুঁজে পাওয়া যায়নি। কিন্তু রাজ্যে পালাবদল হতেই হিমঘরে চলে যাওয়া এই নারকীয় হত্যাকাণ্ডের ফাইল ফের খোলা হয়। মূল উদ্যোক্তা পীরবাবার ভক্ত তথা আইনজীবী সৈয়দ মুন্না। অবশেষে ৪৩ বছর পর নৃশংস এই ঘটনার বেঁচে থাকা ১৩ জনকে দোষীসাব্যস্ত করলেন বিচারক। এদিনই তাঁদের হেফাজতে নেয় পুলিস। সোমবার কী সাজা হয় সেদিকেই তাকিয়ে গোটা জেলা।
সরকারি আইনজীবী মলয় মুখোপাধ্যায় বলেন, বহুবছর পর ফাইল ঝেড়ে বের করে ভারতীয় দণ্ডবিধির ২০১, ৩০২ ধারায় মামলা চলে। অভিযুক্ত ৩৬ জনের মধ্যে ১৩ জনকে সাজা দিলেন বিচারক।
বাদিপক্ষের আইনজীবী মুক্তুব হুসেইন, সহযোগী আইনজীবী রঞ্জিত গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, বাম আমলে নানাভাবে কেসটা ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা হয়েছে। সেসময় পুলিস অনেককে বাঁচানোর চেষ্টা করেছিল। ২০১০ সালে আলমারি থেকে ফাইল নামিয়ে ফের আমরা লড়াই শুরু করেছিলাম। অবশেষে সত্যের জয় হল। (রায় শুনতে আদালত চত্বরে ভিড়। (ডানদিকে, উপরে ও নীচে) দোষী সাব্যস্তরা। নিজস্ব চিত্র)