হস্তশিল্পীরা বিশেষ স্বীকৃতি ও সুনাম পেতে পারেন। পারিবারিক ক্ষেত্রে চাপ। ব্যয় কিঞ্চিৎ বাড়তে পারে। ... বিশদ
পূর্বস্থলী-২ ব্লকের পিলা অঞ্চলের নতুনগ্রাম বহুবছর ধরেই কাঠপুতুলের গ্রাম হিসেবে পরিচিত। গ্রামের ৫০টি পরিবার বংশ পরম্পরায় কাঠের পেঁচা তৈরির শিল্পকে টিকিয়ে রেখেছেন। এখানকার শিল্পীরা কাঠের রাজা-রানি, গৌর-নিতাই, লক্ষ্মীর বাহন পেঁচা তৈরি করেই সংসার চালান। বেঙ্গালুরু, দিল্লি, মুম্বই সহ রাজ্যের সমস্ত জায়গায় এখানকার শিল্পকর্ম পাড়ি দেয়। কাঠপুতুল তৈরি করে গ্রামের অর্থনীতির হাল ফিরেছে। আগে কাটোয়ার অগ্রদ্বীপের কাঠের পুতুল পাড়ি দিয়েছে বিদেশের মাটিতে। শিল্পীদের তৈরি কাঠের রাশিয়ান ডল স্পেনের মিউজিয়ামে স্থান পেয়েছে। শুধু তাই নয়, আফ্রিকান ডলের আদলে কাঠের দুর্গাপ্রতিমা স্থান পেয়েছে রাজ্যের বিশ্ববাংলার বিপণন কেন্দ্রগুলিতে। আগে নতুনগ্রামের শিল্পীরা শুধু কাঠের পেঁচা, রাজারানি পুতুলই তৈরি করতেন। এখন তাঁরা ঘর সাজানোর কাঠের সুদৃশ্য জিনিসপত্র, আসবাবপত্র তৈরি করছেন। তবে তাতেও তাঁদের ‘সিগনেচার’ পেঁচার ছোঁয়া থাকছে। ঘর সাজানোর জন্য ছোট ছোট পেঁচার চেন, পেঁচা দিয়ে ঘড়ি, আসাবাবপত্র তৈরি করছেন তাঁরা। নানা সূক্ষ্ম কারুকার্যে ভরা ফার্নিচার তৈরি করছেন। ড্রেসিং টেবিল, সোফা, ডাইনিং টেবিল, বসার চেয়ারের সেট, এমনকী পুরানো আমলের সিন্দুক পর্যন্ত। প্রতিটি ফার্নিচারেই তুলে ধরা হচ্ছে কাঠপুতুলের ঐতিহ্য।
পূর্বস্থলীর নতুনগ্রামের শিল্পীরা কাঠপুতুল তৈরির জন্যই বিখ্যাত। তাই ফার্নিচারও কাঠপুতুল দিয়েই তৈরি হচ্ছে। হাওড়ার সালকিয়ার বাসিন্দা এক ব্যক্তি বরাত দিয়ে ওই কাঠপুতুলের ফার্নিচার নিয়ে গিয়েছেন। ফার্নিচারের দাম ১২-২৫ হাজার টাকা থেকে শুরু। বরাতও আসছে অনেক। শিল্পীদের দুর্দশা কাটছে ধীরে ধীরে। শিল্পী গৌতম ভাস্কর, গৌরাঙ্গ ভাস্কর বলেন, আমাদের শিল্পের মূল বিষয় হল মার্কেটিং। শিল্পীরা তাঁদের শিল্পকর্ম তৈরি করবেন। সেটা বিক্রি করতে না পারলে চলবে না। আগে আমরা শুধু পেঁচাতে আবদ্ধ ছিলাম। এখন ঘর সাজানোর নানা উপকরণ তৈরি করছি। প্রচুর বরাত আসছে। ঝাড়খণ্ড, মুম্বই থেকেও বরাত পেয়েছি। আমাদের অর্থনৈতিক অবস্থা আবার চাঙা হচ্ছে।
আরেক শিল্পী উত্তম ভাস্কর বলেন, এখন খাদি বোর্ড থেকে শিল্পীদের জন্য ওয়ার্কশপ করে দিয়েছে। যেহেতু পর্যটকরা গ্রামে আসেন, তাই তাঁদের কথা ভেবে খাদি বোর্ড আমাদের গেস্ট হাউস করে দিয়েছে। একটা কাঠ চেরাইয়ের মিল করে দিয়েছে। আমাদের শিল্পসৃষ্টির এই পরিবেশ আগে কেউ করে দেয়নি। এখন আমরা ভালো আছি। অনেকে বলছেন, কাঠের কাজ করা যে ধরনের ফার্নিচার তৈরি হচ্ছে তাতে অভাবনীয় কারুকার্য থাকছে। এর আগে এখানকার শিল্পীদের বরাত দিয়ে কাঠের মুখোশ তৈরি করিয়ে গুজরাতে বেশ কয়েকটি সিনেমায় ব্যবহার করা হয়েছে। সিনেমার সেট সাজাতেও এইসব মুখোশ ব্যবহার করা হচ্ছে।