হস্তশিল্পীরা বিশেষ স্বীকৃতি ও সুনাম পেতে পারেন। পারিবারিক ক্ষেত্রে চাপ। ব্যয় কিঞ্চিৎ বাড়তে পারে। ... বিশদ
নাদনঘাট থানার ঘোলা গ্রামের চাষি পরিবারের ছেলে বছর ঊনত্রিশের রেজাউল শেখ। পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করে মোটর গ্যারেজে মেকানিক হিসেবে কাজ শুরু করেন। কাজ শিখে নিজে একটি গ্যারেজও খোলেন। এখন আর্থমুভার ভাড়া খাটিয়ে সংসার চলে। রেজাউল জানান, বাবা ইয়াসিন শেখ মৃত্যুর আগে বলে গিয়েছিলেন, ‘এমন কিছু একটা কর, যা সবাই মনে রাখবে।’ সেজন্য ২০২১সালে হেলিকপ্টার বানাবেন বলে ঠিক করেন রেজাউল। ইউটিউব ঘেঁটে নিজের ভাবনায় হেলিকপ্টার তৈরি শুরু করেন। বাড়ির পাশে ফাঁকা জায়গায় লোহার পাত কিনে এনে ওয়েল্ডিং মেশিন বসিয়ে প্রায় ৩০ফুট লম্বা হেলিকপ্টারের কাঠামো তৈরি করেন। বিভিন্ন জায়গা থেকে যন্ত্রাংশ কিনে প্রাথমিক কাজ শুরু করেন। বেঙ্গালুরু থেকে ৩৯৫ হর্স পাওয়ারের ইঞ্জিন কিনে আনেন। কপ্টারের মাথায় নিজের হাতে তৈরি ইস্পাতের ব্লেড লাগান। তাতে নীল-সাদা রং করেন। কপ্টারের গায়ে দুই মেয়ে রুমা ও রিমার নাম লেখেন। একদিন রাতে ইঞ্জিনের কাজ শেষ হতেই তা চালু করে ব্লেড ঘোরান। এতে তাঁর আত্মবিশ্বাস বেড়ে যায়। এখন কাজ অনেকটাই হয়ে গিয়েছে। পাইলট সহ পাঁচজন বসতে পারবেন। খুব তাড়াতাড়ি আকাশে স্বপ্নের হেলিকপ্টার ওড়াবেন রেজাউল।
রেজাউলের এই লড়াই মোটেও সহজ ছিল না। স্বপ্ন পূরণ করতে নিজের তিন বিঘা জমি বিক্রি করতে হয়েছে। শখের বাইক ও চারচাকা গাড়ি বন্ধক রেখেছেন। বছরখানেক আগে আচমকা ট্রেনের ধাক্কায় তাঁর বড় মেয়ে রুমার মৃত্যু হয়। এরপর রেজাউল মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন। থমকে যায় কাজ। মাসতিনেক হল তিনি ফের কাজ শুরু করেছেন। সম্প্রতি হেলিকপ্টারের টায়ার কিনে এনে ছ’টি চাকায় লাগিয়ে ফেলেন। ইঞ্জিনের ট্রায়াল দিতে গিয়ে তিনি উপলব্ধি করেন, হাতে তৈরি ব্লেডের বদলে আসল ব্লেড লাগাতে হবে। এখন লাখখানেক টাকা দরকার। সেই টাকা জোগাড় করতেই হিমশিম খাচ্ছেন। টাকা জোগাড় হলেই কাজ শেষ করে সরকারি নিয়ম মেনে আকাশে ৫০মিটার ট্রায়াল দেবেন। পাইলট হিসেবে নিজেই বসবেন।
রেজাউল বলেন, বাবাকে কথা দিয়েছিলাম, হেলিকপ্টার তৈরির স্বপ্নপূরণ করবই। জমি বিক্রি করেছি, বাইক ও গাড়ি বন্ধক রেখেছি। কারও কাছ থেকে এক টাকাও কখনও নিইনি। মেয়ের অকালমৃত্যুতে মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছিলাম। নিজে হাতে নকশা এঁকে সব কাজ করে এত দূর এসেছি। ওয়েল্ডিং করে ইঞ্জিন বসিয়ে ৯০ শতাংশ কাজ প্রায় শেষ করেছি। পাখা ঘুরেছে। মাটি থেকে আকাশে ওড়ার শক্তি তৈরি হয়েছে। আর্থিক সমস্যায় কিছু কাজ আটকে আছে। রেজাউলের ভাই ইকরাউল শেখ বলেন, দাদা সম্পূর্ণ নিজের চেষ্টায় হেলিকপ্টার বানিয়েছে। বিভিন্ন জায়গা থেকে বহু মানুষ দেখতে আসছেন।