সম্পত্তিজনিত বিষয়ে অশান্তি বৃদ্ধির আশঙ্কা, আত্মীয়-পরিজনের সঙ্গে সম্পর্কের অবনতি। শেয়ার, ফাটকা, লটারিতে অর্থাগম, কর্মক্ষেত্রে গোলযোগের ... বিশদ
এদিন মন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারী নন্দীগ্রাম এবং খেজুরির বিভিন্ন দুর্গত এলাকায় যান। ভেটুরিয়া গ্রামে গিয়ে নিহত সুলতার স্বামী বিকাশ দাসের হাতে সতীশ সামন্ত ওয়েলফেয়ার তহবিল থেকে দু’লক্ষ টাকার চেক তুলে দেন। তাঁর ছেলের ভালো চিকিৎসার জন্য কলকাতার পাঠানোর ব্যবস্থা করেন। নাকচিরাচক ও ভেটুরিয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষজনকে ত্রিপল ও ত্রাণসামগ্রী তুলে দেন শুভেন্দুবাবু। পাশাপাশি তিনি খেজুরি-২ব্লকের জনকা, নীচকসবা, বারাতলা ও খেজুরি পঞ্চায়েতের ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় গিয়ে মানুষজনের সঙ্গে কথা বলেন। জেলাশাসক পার্থ ঘোষ এদিন নন্দীগ্রাম ও খেজুরিতে যান।
শনিবার রাতে বুলবুল আছড়ে পড়ার আগে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে যাবতীয় সতর্কতামূলক পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছিল। মোট ২২হাজার ৪০০মানুষকে সরানো হয়। তার মধ্যে ৬৩টি ক্যাম্প খুলে ৮৩০০জনকে রাখা হয়েছিল। ঝড়ের দাপটে প্রচুর গাছপালা ভেঙে পড়ে। সেই সঙ্গে হুড়মুড় করে ভেঙে পড়ে অসংখ্য কাঁচাবাড়ি। সবচেয়ে বেশি কাঁচাবাড়ি ভেঙেছে দেশপ্রাণ ও খেজুরি-২ব্লকে। দেশপ্রাণ ব্লকে আংশিক দু’হাজার এবং সম্পূর্ণ ৮০০কাঁচাবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জেলা প্রশাসন সূত্রে জানানো হয়েছে। এছাড়াও খেজুরি-২ব্লকে ৪০০সম্পূর্ণ এবং ৬০০কাঁচাবাড়ি আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। একইভাবে রামনগর-১ব্লকে সম্পূর্ণ ২০০টি এবং আংশিক ৯০০টি কাঁচাবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
রবিবার সকাল থেকে জেলাশাসক, মহকুমা শাসক এবং বিডিওরা দুর্গত এলাকায় যান। এদিন মোট সাড়ে ১৬হাজার ত্রিপল বণ্টন করা হয়। কাঁথি মহকুমায় ৭০কুইন্টাল চাল পাঠানো হয়েছে। রামনগর-১ ও ২, কাঁথি-১, ৩ ও দেশপ্রাণ, খেজুরি-১ ও ২, নন্দীগ্রাম-১ ও ২ সহ বিভিন্ন ব্লকে মারাত্মক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। রামনগরে অনেক মাছের খটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সিপিএমের রাজ্য কমিটির সদস্য হিমাংশু দাসের নেতৃত্বে একটি দল খেজুরির নীচকসবা, পাঁচুড়িয়া, নোনাপোতা, বনবাশুলিচক গ্রামে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় গিয়ে দুর্গতদের সঙ্গে কথা বলেন।
জেলার সমুদ্র উপকূলবর্তী বিভিন্ন ব্লকের বাসিন্দাদের ত্রাণশিবিরে সরানো হয়েছিল। এদিন অবশ্য প্রত্যেককে ক্যাম্প থেকে বাড়িতে পাঠানো ব্যবস্থা হয়। এদিন খেজুরি-২ব্লকের নীচকসবা গ্রাম পঞ্চায়েতের পাঁচুড়িয়ায় সাইক্লোন সেন্টারের সামনে স্থানীয় মানুষজনের সঙ্গে কথাবার্তা বলেন মন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারী। তিনি বলেন, এই এলাকায় দুর্বল নদীবাঁধ সারানো হবে। ক্ষতিগ্রস্ত মানুষজন সরকারি সাহায্য পাবেন। নন্দীগ্রামে তিনি বলেন, কৃষিজমি কিংবা পান বরজে যে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, সরকার নিশ্চিতভাবে তার ক্ষতিপূরণ দেবে। ক্ষতিগ্রস্ত চাষিরা যাতে সমবায় সমিতি থেকে শস্যবিমার টাকা পান, সেই উদ্যোগ আমরা নেব।
জেলায় আমন চাষে ৫৫শতাংশ জমি, সব্জি এবং ফুলচাষের ৪০শতাংশ জমি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে বলে জেলা কৃষিদপ্তরের পক্ষ থেকে রাজ্যে প্রাথমিকভাবে একটি রিপোর্ট পাঠানো হয়েছে। জেলায় মোট আড়াই লক্ষ হেক্টর জমিতে আমন চাষ হয়েছে। তারমধ্যে ৫৫শতাংশ জমিতে কমবেশি চাষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে এদিন জেলা কৃষিদপ্তরের উপ অধিকর্তা(প্রশাসন) আশিসকুমার বেরা রিপোর্ট পাঠিয়েছেন।
বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থার তমলুকের রিজিওনাল ম্যানেজার শ্যামল হাজরা বলেন, বুলবুলের দাপটে প্রচুর গাছপালা ভেঙে পড়ায় ৮০০-এর বেশি খুঁটি ভেঙে পড়েছে। এছাড়াও বেশকিছু ট্রান্সফর্মার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তাতে অনেক এলাকা বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়ে। রবিবার যুদ্ধকালীন তৎপরতায় কাজ হয়েছে। বেশিরভাগ জায়গায় বিদ্যুৎ পরিষেবা স্বাভাবিক হয়েছে। এখনও কিছু এলাকায় পরিষেবা স্বাভাবিক হয়নি। দ্রুত গতিতে লাইন স্বাভাবিক করার কাজ চলছে। জেলাশাসক পার্থ ঘোষ বলেন, মোট সাড়ে ১১হাজার বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় ত্রাণসামগ্রী ও ত্রিপল বিলি চলছে।
বুলবুলের কারণে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার খড়্গপুর ও ঘাটাল মহকুমার বহু পরিবারকে শনিবার নিরাপদ আশ্রয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। অতিরিক্ত জেলাশাসক(পঞ্চায়েত) প্রতিমা দাস বলেন, এই জেলায় ৯০০টি বাড়ি আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আর একটি বাড়ি সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ধান এবং অন্যান্য সব্জির ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ এখনও জানা যায়নি।