সম্পত্তিজনিত বিষয়ে অশান্তি বৃদ্ধির আশঙ্কা, আত্মীয়-পরিজনের সঙ্গে সম্পর্কের অবনতি। শেয়ার, ফাটকা, লটারিতে অর্থাগম, কর্মক্ষেত্রে গোলযোগের ... বিশদ
অমিতাভ আসছেন না? অমিতাভ এলেন না কেন? এই প্রশ্নগুলোই ঘুরপাক খাচ্ছিল শুক্রবার নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে ২৫তম আন্তর্জাতিক কলকাতা চলচ্চিত্র উত্সবের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে। অমিতাভ বচ্চনের অগণিত ভক্তদের কাছে প্রথম সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের বক্তব্য থেকেই এই প্রশ্নের উত্তর আসে। সৌরভ তাঁর বক্তব্যে জানিয়ে দেন, অসুস্থতার কারণেই বিগ বি এবারের চলচ্চিত্র উত্সবে উপস্থিত থাকতে পারলেন না। এর পরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজের বক্তব্যে একই কথা বলেন। তিনি আরও জানিয়ে দেন, শুক্রবার সকালে মুখ্যমন্ত্রীকে ফোনে অমিতাভ এবং জয়া বচ্চনের অনুপস্থিত থাকার কথা জানিয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু অমিতাভ কি একটি শুভেচ্ছাবার্তাও পাঠাতে পারতেন না? এমন কিছু প্রশ্ন দানা বাঁধতে শুরু করে চলচ্চিত্র মহলে। তার পরেই অমিতাভ নিজে এই বিষয় নিয়ে ট্যুইটারে প্রতিক্রিয়া দেন।
মন খারাপ অমিতাভেরও। তিনি কলকাতার চলচ্চিত্রপ্রেমীদের কথা দিয়েছেন, আবার কোনও একদিন তিনি আসবেন। এই প্রসঙ্গে অমিতাভ ট্যুইটারে লিখেছেন,‘কিফের জন্য কলকাতায় থাকার কথা ছিল। কিন্তু অসুস্থতার কারণেই বিছানাতে সময় কাটল। কিফ এবং কলকাতার মানুষদের কাছে আমি ক্ষমাপ্রার্থী। কোনও একদিন নিশ্চয়ই যাব। দুঃখিত।’
বলিউডে অমিতাভের অসুস্থতা নিয়ে বেশ কিছুদিন ধরেই জলঘোলা চলছিল। কিছুদিন আগে তিনি হাসপাতালেও ভর্তি হয়েছিলেন। সেটা রুটিন চেকআপ ছিল নাকি আকস্মিক ভর্তি হওয়া, সেই বিষয়েও নানা মুনির নানা মত। তবে চলচ্চিত্র উত্সবে তাঁর না আসা, অমিতাভের শারীরিক অসুস্থতা নিয়ে আবার নতুন জল্পনা তৈরি করে দিল।
উৎসবের ককপিটে দেব
তিনি তো আর শুধুমাত্র ফিল্মস্টার নন। তিনি একজন দায়িত্বশীল সাংসদও বটে। ফিল্ম ফেস্টিভ্যালের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যেমন ছিলেন, তেমনই বুলবুল সাইক্লোনের জন্য নিজের লোকসভা কেন্দ্রের মানুষজনদের সুবিধার্থে সমানে গুরুত্বপূর্ণ ফোন নম্বর ট্যুইট করছেন। বুঝতে পারছেন না? দেবের কথা বলা হচ্ছে। তবে ফেস্টিভ্যালে তিনি শুধু উদ্বোধনী অনুষ্ঠানেই যে ছিলেন এমনটা নয়। তাঁর একটি ছবিও এই উত্সবে দেখানো হবে। তবে এই খবর কারও কাছে ছিল না। হঠাত্ই শনিবার সকালে দেবের প্রযোজনা সংস্থা থেকে ট্যুইট করা হয়, কমলেশ্বর মুখোপাধ্যায় পরিচালিত দু’বছর আগেকার ছবি ‘ককপিট’ চলচ্চিত্র উত্সবে অফিশিয়ালি সিলেক্টেড। এমনকী এই খবর পরিচালকও জানতেন না। তিনিও সোশ্যাল মিডিয়া দেখেই জানতে পারেন। শোনা যাচ্ছে, ছবিটি নাকি নন্দনেই দেখানো হবে। কোন বিভাগে? এখনও খবর নেই।
চলচ্চিত্র শতবার্ষিকী ভবন
শহরে যখন একটার পর একটা সিনেমা হল অস্তাচলে যাচ্ছে, সেখানে বাংলা সিনেমার একশো বছরকে কুর্ণিশ করে রাজ্য সরকারের উদ্যোগে পথ চলা শুরু করল চলচ্চিত্র শতবার্ষিকী ভবন। ১৫৭ আসন বিশিষ্ট সর্বসুবিধা যুক্ত একটি সিনেমা হল। কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের মুখ্য উপদেষ্টা তথা রাজ্যের মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস বলেন,‘মানুষকে সিনেমামুখী করাই চলচ্চিত্র উৎসবের মুখ্য উদ্দেশ্য। তাই টালিগঞ্জ স্টুডিও পাড়ার নাগালের মধ্যে একটি নতুন প্রেক্ষাগৃহ সিনেমাপ্রেমী দর্শকদের উপহার দেওয়া হল।’ প্রসঙ্গত বাঙুর হাসপাতালের পাশে পুরনো রাধা স্টুডিও চত্বরেই তৈরি হয়েছে চলচ্চিত্র শতবার্ষিকী ভবন।
সেই উপলক্ষে আয়োজিত এক সাংবাদিক সম্মেলনে অরূপবাবু জানান, প্রেক্ষাগৃহটিতে সিনেমা দেখানোর পাশাপাশি ছবি সংরক্ষণ ও নির্মীয়মান ছবির প্রিভিউয়েরও বন্দোবস্ত থাকবে। সকাল থেকে দুপুর ২টো পর্যন্ত এই সুযোগ পাবেন পরিচালক, প্রযোজকরা। তারপর তিন শিফটে সিনেমা দেখানো হবে। শতবার্ষিকী ভবনটি নন্দনের আর একটি অংশ বলা যেতে পারে। তাই এখানকার টিকিটের মূল্যও নন্দনের হারে ধার্য করা হয়েছে। ৩০ টাকা ও ৫০ টাকা। চলচ্চিত্র নিয়ে পড়াশোনা ও গবেষণারত ছাত্রছাত্রীরাও বিশ্বের ধ্রুপদী সিনেমা দেখার সুযোগ পাবেন।
কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের চেয়ারম্যান রাজ চক্রবর্তী ফিল্ম প্রিভিউ-এর ব্যবস্থাকে স্বাগত জানিয়ে বলেন,‘আমাদের মতো পরিচালক প্রয়োজকদের ফিল্ম প্রিভিউ ও মিক্সিং করতে মুম্বই ছুটতে হয়। অনেক ঝামেলা। তাছাড়া খরচও বেড়ে যায়। কলকাতায় এই ব্যবস্থা চালু হওয়াতে অল্প বাজেটের ছবির প্রযোজক পরিচালকদের সুবিধে হবে। গোটা উদ্যোগটির পরামর্শদাতা ও উপদেষ্টা পরিচালক গৌতম ঘোষ রাজ্য সরকার ও পূর্তদপ্তরকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, ‘পুরনো ছবির কথা মাথায় রেখে এই হলে ৩৫ মিলিমিটারের প্রজেক্টর বসানো হয়েছে। এখন এই প্রজেক্টর নন্দন ছাড়া ভারতের কোথাও নেই।’ অতীত হাতড়ে গৌতমবাবু স্মরণ করিয়ে দেন, ফ্রান্সের আবার্ন ইউনিভার্সিটির লাগোয়া এই রকম ছোট ছোট সিনেমা হলকে কেন্দ্র করে উঠে এসেছিলেন গোদার, ত্রুফোর মতো নবতরঙ্গের সিনেমা পরিচালকরা। তিনি আশা প্রকাশ করেন, চলচ্চিত্র শতবার্ষিকী ভবনকে কেন্দ্র করে ভবিষ্যতের পরিচালকরা জন্ম নেবেন। শতবার্ষিকী ভবনের উপর তলায় ছবির ভল্ট গড়ে তোলা হচ্ছে।
গৌতমবাবু জানান, আপাতত রাজ্য সরকারের প্রযোজনায় যে ছবিগুলো তৈরি করা হয়ছিল সেই ছবিগুলো সংগ্রহ ও সংরক্ষণের কাজ চলছে। এখনও পর্যন্ত প্রায় দুশোটি ছবি সংগৃহীত হয়েছে। গোটা সাংবাদিক সম্মেলনটি পরিচালনা করেন ফেস্টিভ্যাল ডিরেক্টর মিত্র চট্টোপাধ্যায়।
—সংকলক: প্রিয়ব্রত দত্ত