ব্যবসায়িক ক্ষেত্রে বাধায় চিন্তা ও উদ্বেগ। বেকারদের ভালো প্রতিষ্ঠানে কর্মপ্রাপ্তির প্রবল যোগ। ... বিশদ
তীব্র গরমের পর বর্ষার অপেক্ষায় বারবার চোখ চলে যায় ক্যালেন্ডারের দিকে। কিন্তু দিনক্ষণ মেনে ইদানীং আর বৃষ্টি হয় কই! অগত্যা হা পিত্যেশ। আকাশ ভেঙে বৃষ্টি নামার দিনে যেন ‘আষাঢ়স্য প্রথম দিবস’-এর মতোই আনন্দ। তবে বৃষ্টির মাদকতা বয়ে আনলেও, বর্ষা ঋতুর কিছু প্রচলিত সমস্যা আছে। এই সময় জিনিসপত্র থেকে ঘরবাড়ি সবেতেই একটা জলীয় ভাব থাকে, স্যাঁতসেঁতে হয়ে পড়ে কোনও কোনও বাড়ির দেওয়াল ও মেঝে। চামড়ার জুতো-ব্যাগ থেকে কাঠের আসবাব সবেতেই মালিন্য দেখা দেয়। অতিবৃষ্টি হলে অবস্থা আরও সংকটের হয়ে ওঠে। বর্ষা এলে সকলেই কমবেশি এই সমস্যার মুখোমুখি হয়ে থাকেন। তবে কয়েকটি সহজ টিপস জানলে এই ধরনের সমস্যাগুলির সহজ সমাধান থাকবে হাতের মুঠোয়।
• চামড়ার জুতো, বেল্ট ও ব্যাগ শুকনো কাপড়ে মুছে নিন: বর্ষাকালে আবহাওয়ায় আর্দ্রতা বেশি থাকে, তাই চামড়ার জিনিসপত্রে ছাতা পড়ার শঙ্কা থাকে। তার উপর বৃষ্টির জল পড়লে সমস্যা আরও বাড়ে। এই সময় প্রতিদিন বাড়ি ফেরার পর বেল্ট, ব্যাগ ব্যবহার করে তুলে রেখে দেবেন না। বরং একটু বাড়তি কয়েক মিনিট সময় দিন। বাড়ি ফিরে শুকনো কোনও মলমল বা সুতির পরিষ্কার কাপড়ে চামড়ার বেল্ট, ব্যাগ ও জুতো ভালো করে মুছে নিন।
রোদে নয়: অনেকেই বর্ষার আর্দ্রতা থেকে চামড়ার জিনিস ভালো রাখতে এই সময় ওগুলো রোদের মধ্যে কিছুক্ষণ ফেলে রাখেন। এই মিথ খুব উপকারী নয়। বরং অতিরিক্ত তাপমাত্রায় চামড়ার দ্রব্যের ক্ষতি হয়। তাই সরাসরি রোদের মধ্যে ওসব ফেলে রাখবেন না।
হালকা হাতে পালিশ: চামড়ার সৌন্দর্য ধরা থাকে পালিশে। ভালোভাবে পালিশ করলে চামড়ার জিনিস বাতাসের জলীয় বাষ্পের হাত
থেকে বাঁচে।
• কাঠের আসবাবের যত্ন
ঘূণ জব্দ: বর্ষার আর্দ্রতায় আসবাবের গায়ে ঘূণ পোকারা বাসা বাঁধে। তাই কাঠের আসবাবে ঘূণ ধরার প্রবণতা বাড়ে। এক্ষেত্রে নিম খুব উপকারী। নিমের তেল, নিমপাতা, স্পিরিট ও কর্পূর মিশিয়ে একটা মিশ্রণ তৈরি করুন। একটা পারফিউমের খালি বোতলে এই স্প্রে ভরে রেখে দিন। আসবাবে ঘূণ ধরছে দেখলেই এই মিশ্রণ স্প্রে করুন।
কর্পূরে সমাধান: কাঠের আসবাবে আর্দ্রতা শোষণের জন্য কর্পূর বা ন্যাপথলিন বিশেষ উপযোগী। ভিজে বা স্যাঁতসেতে আবহাওয়ায় আসবাবের কোণে কর্পূরের থলে কিংবা কাপড়ে জড়ানো কিছু ন্যাপথলিন রাখুন। এতে কাঠের শরীর থেকে আর্দ্রতা দূরে থাকবে।
ঘরোয়া বার্নিশ: কাঠের আসবাব বছরে একবার বার্নিশ করিয়ে নিতে পারলে তা বহুদিন টেকে। খরচে পোষাতে না পারলে বাড়িতেই তৈরি করে নিতে পারেন বার্নিশের বিকল্প। চিনি ছাড়া চায়ের কড়া লিকার তৈরি করুন। তার মধ্যে মেশান ২ ছিপি ভিনিগার। এবার আসবাবের যেসব জায়গায় ছাতা পড়েছে সেসব অংশে এই মিশ্রণ ঢেলে শুকনো সুতির কাপড় দিয়ে ঘষে পরিষ্কার করে নিন।
মেঝে শুকনো রাখুন: ঘরের মেঝেয় যত কম জল দেবেন, ততই আসবাবের গায়ে আর্দ্রতা কম জমবে। তাই ঘর মুছলেই ফ্যান চালিয়ে শুকিয়ে নিন। চেষ্টা করুন মেঝে শুকনো রাখতে।
• ঘরের সার্বিক যত্ন
ওয়াটার প্রুফিং: অতি বর্ষায় ছাদ বা দেওয়াল চুঁইয়ে জল পড়ার সমস্যা দেখা যায় অনেক বাড়িতেই। এমন হলে গরম পড়তে না পড়তেই সেই জায়গাগুলো চিহ্নিত করুন। পিভিসি ওয়াটার প্রুফিং করিয়ে নিন। দেওয়াল জল টানতে শুরু করলে দু’কোটের ওয়াটার প্রুফিং ও সিলেট স্প্রে করুন। ফলে বাড়ির ভিতর জল চুঁইয়ে পড়ার সমস্যা মিটবে। ঘরবাড়ি আর্দ্রতাবিহীন থাকবে।
জীবাণুনাশক: রান্নাঘরের প্ল্যাটফর্ম, টেবিল, আলমারি, মেঝে, দেওয়াল ইত্যাদি জায়গাকে শুকনো রাখার পাশাপাশি জীবাণুমুক্ত করুন। হাতের কাছে এমন জীবাণুনাশক মজুত রাখার জন্য ৭৫ শতাংশ জলের সঙ্গে (৩ কাপ জল) ২৫ শতাংশ ভিনিগার (১ কাপ ভিনিগার) মিশিয়ে একটি জীবাণুনাশক স্প্রে তৈরি করে নিন। ঘরের নানা অংশে এই স্প্রে দিলে মাছি সহ নানা কীটপতঙ্গ ও জীবাণুর হাত থেকে ঘরকে রক্ষা করা যায়।
পাইপ ও নিকাশী সংস্কার: বর্ষায় নালা নর্দমা উপচে পড়ে। খেয়াল রাখুন পাইপে যেন জল না জমতে পারে। নির্দিষ্ট দিন অন্তর পাইপ ও ট্যাঙ্ক পরিষ্কার করান। পাইপ ও সিঙ্কের স্যাঁতসেঁতে ভাব কমাতে ১ কাপ বেকিং সোডা, ১ কাপ টেবিল সল্ট ও ১ কাপ সাদা ভিনিগার মিশিয়ে বাড়ির পাইপ ও সিঙ্কের মুখে ছড়িয়ে দিন। সিঙ্ক, পাইপ থেকে স্যাঁতসেঁতে গন্ধ দূর হবে ও তা সহজেই পরিষ্কার হবে। বর্ষার দুর্গন্ধ থেকে বাঁচতে কিচেন ক্যাবিনেট বা আলমারির কোণে বাথ সল্ট রাখলে বিশেষ উপকার পাবেন।
কার্পেট ও পাপোশের খেয়াল: বর্ষাকালে ভারী ওজনের কার্পেট, পাপোশ, পরদা একবার ভিজলে শুকাতে চায় না। তাই বর্ষা এলে এগুলোর ব্যবহার কমিয়ে দিন। বর্ষার জন্য এমন সেট রাখুন যা সহজেই পরিষ্কার করা যায়। ভারী পাপোশ ও কার্পেটে যাতে ছত্রাক হানা দিতে না পারে তাই বর্ষার শুরুতেই ভালো করে কেচে শুকিয়ে প্লাস্টিকে মুড়ে তুলে রাখুন তা।
বৃষ্টির জল থেকে দূরে: দরজা ও জানালার মাধ্যমে ঘরে জলের ফোঁটা প্রবেশ করে। জানালা খোলা থাকলে ও জানালা ঘেঁষে বিছানা থাকলে তোষকও জলের ছাঁটে ভিজে যায়। এই সমস্যা থেকে নিস্তার পেতে হলে বিছানা জানালার কাছ ঘেঁষে রাখবেন না। সানশেডগুলো বৃষ্টির হাত থেকে দেওয়ালকে বাঁচায়। তাই সানশেডে ফাটল দেখা গেলে বা সানশেড খুব একটা চওড়া না হলে সেগুলো বদলে ফেলতে পারেন।