সামাজিক কর্মে সম্মান লাভ। স্ত্রী’র শরীর-স্বাস্থ্য খারাপ হতে পারে। দেরীতে অর্থপ্রাপ্তি। ... বিশদ
সার্বভৌমত্ব, স্বাধীনতা ও গণতন্ত্র নিশ্চিত করার অঙ্গীকার করেছে আমাদের পবিত্র সংবিধান। এটাই দেশের সমস্ত মানুষের আকাঙ্ক্ষা। কিন্তু এগুলি নিশ্চিত করা কোনও একজন ব্যক্তি মানুষের সাধ্য নয়। মানুষের হয়ে এই দায়িত্ব কর্তব্য পালন করে রাষ্ট্র। রাষ্ট্র কাজটি করে সরকার এবং সরকারি প্রশাসনের সদিচ্ছা ও আন্তরিকতার দ্বারা। ভারতের সংবিধান সংসদীয় গণতন্ত্রের মডেল গ্রহণ করেছে। এদেশে বহুদলীয় গণতন্ত্র স্বীকৃত। সমস্ত স্বীকৃত রাজনৈতিক দল রাজ্যে রাজ্যে এবং কেন্দ্রে সরকার গঠনের নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে। মানুষ তাদের পছন্দ ও বিবেচনা অনুযায়ী ভোট দেবে, তার ভিত্তিতে তৈরি হবে সরকার। যদি একটি দল নিরঙ্কুশ গরিষ্ঠতা অর্জনে অপারগ হয়, তবে সমমনোভাবাপন্ন একাধিক দলের জোট ঐকমত্যের ভিত্তিতে সরকার গড়বে। আর যেসব দল সরকারের অংশ হতে পারল না, তারা বসবে বিরোধী আসনে। যারা সরকার গড়ার দায়িত্ব পেল, তারা জনগণের চাহিদা ও স্বার্থ পূরণের নীতি নিয়ে কাজ করবে পূর্ণ মেয়াদে। দলীয় প্রতীকে নির্বাচিত সদস্যদের নিয়ে গঠিত হলেও কোনও সরকার কিন্তু দলের হয় না, তখন সেটি সব মানুষের বলে গণ্য হয়। সরকারি প্রকল্প এবং পরিষেবার লক্ষ্য দলমতনির্বিশেষে সমস্ত মানুষ। সরকারের বিরোধিতাই, তেমনি, বিরোধী দলগুলির একমাত্র ব্রত হতে পারে না। সরকারের জনবিরোধী নীতি ও কাজের বিরোধিতা, প্রতিবাদ তারা অবশ্যই করবে। কিন্তু সরকার যখন সত্যিই জনকল্যাণে নিয়োজিত তখন বিরোধীদের উচিত সরকারের পাশে থাকা। তা না-হলে, উন্নয়ন বা জনকল্যাণ ব্যাহত, এমনকী বানচালও হয়ে যেতে পারে।
সরকার এবং বিরোধী দু’পক্ষেরই কাছে সবরকমে স্বচ্ছতা প্রত্যাশা করে জনগণ, দেশ। কিন্তু যখন ‘স্বচ্ছ ভারত’ নির্মাণের স্লোগান সবচেয়ে তীব্র হয়েছে তখনই সর্বোচ্চ চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে স্বচ্ছতা। তার ফলে জনগণের সার্বভৌমত্ব ও স্বাধীনতা পরিহাসের বস্তু হয়ে উঠেছে। গণতন্ত্রের নামে বৃহত্তম গণতন্ত্র যা পরিবেশন করছে, তাকে দুধের বদলে পিটুলি গোলার সঙ্গেই তুলনা করা চলে। এই গণতন্ত্রে মানুষের ইচ্ছা ও পছন্দ একেবারেই মূল্যহীন। প্রথম ধাক্কা আসছে সরকার গঠনে। মানুষ যাকে সরকারে বা বিরোধী আসনে দেখতে চেয়ে ভোটযন্ত্রে রায় দিয়েছে, অন্যায় ক্ষমতার অধিকারীদের তা মোটেই মনঃপূত নয়। তারা মানুষের রায় উল্টে দেওয়ার জন্যই মরিয়া। এই কুনাট্য সদ্য দেখা গিয়েছে মহারাষ্ট্রে। দিল্লির মতলবে সেখানে এমন এক সরকার গদিয়ান যে দেড় মাসেও পায়ের তলায় মাটি খুঁজে পায়নি। মাসাধিককাল নষ্টের পর মন্ত্রিসভা গঠন করেও মন্ত্রীদের দপ্তরই বণ্টন করতে পারেনি। এখানেই চিন্তা, এই সরকার মানুষের জন্য কাজটা করবে কবে? তারপর তো আছে অস্বচ্ছতার আরও একঝাঁক চেনা ছক! কুনাট্যের লক্ষ্য মুম্বই একা নয়, যেখানেই বিরোধী শক্তি দিল্লিওয়ালাদের তোয়াজে অপারগ, সেখানেই ‘আমার সরকার’ বসাতে তৎপর কালো ঘুঁটি! আজ, ৭৬তম স্বাধীনতা দিবসে এখানেই তাৎপর্য ফিরে পেয়েছে কাজী নজরুল ইসলামের ‘আমার ভারতবর্ষ’ কবিতাটি—‘কত রাজা আসে যায় ইতিহাসে/ ঈর্ষা আর দ্বেষ আকাশ বিষাক্ত করে, জল কালো করে/ বাতাস ধোঁয়ায় কুয়াশায় ক্রমে অন্ধকার হয়/ চারিদিকে ষড়যন্ত্র, চারিদিকে লোভীর প্রলাপ/ যুদ্ধ, দুর্ভিক্ষ আসে পরস্পরের মুখে চুমু খেতে খেতে ...’। আধুনিক রাজারা কি তাঁদের ব্যক্তিগত ঈর্ষা, দ্বেষ, ষড়যন্ত্র, লোভ-লালসা, যুদ্ধলিপ্সায় লাগাম টানতে পারেন না? স্বর্গগত মৃত্যুঞ্জয়ীরা যে স্বাধীন ভারতের চরম দুর্দশা দেখে যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন!