সামাজিক কর্মে সম্মান লাভ। স্ত্রী’র শরীর-স্বাস্থ্য খারাপ হতে পারে। দেরীতে অর্থপ্রাপ্তি। ... বিশদ
অবশ্য বঙ্গ বিজেপির নেতা-কর্মীদের এমন ভূমিকা নতুন কিছু নয়। সরকারি অনুষ্ঠানকে দলীয় সভার রূপ দিতে তাঁদের জুড়ি মেলা ভার। গতবছর কলকাতায় ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল হলে নেতাজি জন্মজয়ন্তী পালনের সূচনা অনুষ্ঠানেও প্রায় অনুরূপ ঘটনা ঘটেছিল। সেই ঘটনার সময়ে উপস্থিত ছিলেন খোদ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। কেন্দ্রীয় সরকারের ওই অনুষ্ঠানে শুধু নিমন্ত্রিত অতিথিরাই সেখানে উপস্থিত ছিলেন। বিশেষ অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেদিনও সকলকে অবাক করে দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বক্তৃতা দিতে ওঠার আগে ‘জয় শ্রীরাম’ ধ্বনিতে মুখরিত হল অনুষ্ঠানস্থল। দলীয় অনুষ্ঠানে ‘জয় শ্রীরাম ধ্বনি’ যে কেউ দিতেই পারেন। কিন্তু সরকারি অনুষ্ঠানে কোনও বিশেষ রাজনৈতিক দলের স্লোগান বাঞ্ছনীয় নয় কখনওই। সেদিন দলীয় কর্মীদের এমন আচরণে প্রধানমন্ত্রী আশ্চর্যজনকভাবে নীরব ছিলেন! তবে ক্ষুব্ধ মুখ্যমন্ত্রী প্রতিবাদ করেন সঙ্গত কারণেই। আসলে সরকারি অনুষ্ঠান মঞ্চকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করার প্রবণতা বিজেপি কর্মীদের মধ্যে বারবারই লক্ষ করা গিয়েছে। দেখা গিয়েছে কর্মীদের শৃঙ্খলাপরায়ণ করে তুলতে বঙ্গ বিজেপির ব্যর্থতা। অনুষ্ঠানকে কালিমালিপ্ত করার ঘটনা আরও আছে। কয়েকবছর আগে বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের এক অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রী। তাঁকে সেদিন ‘উষ্ণ অভ্যর্থনা’ জানাতেও শোনা যায় ‘জয় শ্রীরাম’-এর গর্জন। তাই বলাই যায়, সিউড়ির রেলের অনুষ্ঠানকে রাজনৈতিক মঞ্চ হিসাবে ব্যবহার করাটা সেই পরম্পরাই বহন করছে। আর সেই কারণেই সিউড়ির ঘটনাটিকে গুরুত্বই দেননি বিরোধী দলনেতা। নেতৃত্বের দেখানো পথেই তিনি যে চলছেন তা বেশ স্পষ্ট। কারণ ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালের অনুষ্ঠানে বা বিশ্বভারতীর ঘটনা চোখের সামনে দেখেও যে টুঁ শব্দটি করেননি প্রধানমন্ত্রী! বরং গতবছর রাজ্যে বিধানসভা ভোটের প্রচারে এসে অমিত শাহ সদম্ভে বলেছিলেন, মুখ্যমন্ত্রী যেখানে যাবেন সেখানেই ‘জয় শ্রীরাম’ স্লোগান দেওয়া হবে। বিজেপির সভা-সমাবেশ, মিছিল মিটিং রামনামে মুখরিত হলে আপত্তির কিছু নেই। কিন্তু নির্লজ্জতা কোন পর্যায়ে পৌঁছলে সরকারি মঞ্চকে এভাবে রাজনৈতিক মঞ্চের রূপ দেওয়া যায়? প্রশ্ন সেখানেই। ভগবান রামচন্দ্রও হয়তো তাঁর নামে জয়ধ্বনির এমন অপব্যবহারকে ক্ষমার চোখে দেখবেন না।
আসলে নরেন্দ্র মোদির জমানায় ‘জয় শ্রীরাম’ আর শুধু রাজনৈতিক স্লোগানে আটকে নেই। বরং গত কয়েক বছরে দেখা গিয়েছে, হরিয়ানা, ঝাড়খণ্ড, উত্তরপ্রদেশ, মধ্যপ্রদেশসহ গো-বলয়ের অনেক রাজ্যে অন্য সম্প্রদায়ের উপর হামলার সময়ে নির্বিচারে ব্যবহার হয়েছে এই স্লোগান। গেরুয়া বাহিনীর দুষ্কৃতীরাও হাতে অস্ত্র তুলে নিয়ে এই স্লোগান দিতে দিতেই আঘাত নামিয়ে এনেছে। ২০১৯-এর ভোটে জিতে প্রধানমন্ত্রীর স্লোগান ছিল—‘সবকা সাথ, সবকা বিকাশ, সবকা বিশ্বাস’। অথচ দেখা যাচ্ছে, সংসদে ভিন্ন সম্প্রদায়ের সাংসদরা শপথ নিতে উঠলে ‘জয় শ্রীরাম’ স্লোগান দিচ্ছেন বিজেপির প্রতিনিধিরা! তাই বলাই যায়, রেলের অনুষ্ঠানে ‘জয় শ্রীরাম’ ধ্বনি দিয়ে সরকারি অনুষ্ঠানকে গেরুয়া শিবিরের রাজনৈতিক সমাবেশের বা জমজমাট কর্মিসভার রূপ দেওয়ার বিষয়টি কোনও বিক্ষিপ্ত ঘটনা নয়। সরকারি সংস্থাকে ধ্বংস করা বা সরকারি অনুষ্ঠানকে দলীয় কর্মিসভার রূপ দেওয়ার সংস্কৃতি চক্ষুলজ্জাহীনভাবে এনে তারা বুঝিয়ে দিচ্ছে যে তাদের অভিধানে নিয়মনীতি শব্দটাই নেই। তাই কাণ্ডজ্ঞানহীন আচরণ করছে সগর্বে!