সামাজিক কর্মে সম্মান লাভ। স্ত্রী’র শরীর-স্বাস্থ্য খারাপ হতে পারে। দেরীতে অর্থপ্রাপ্তি। ... বিশদ
লকডাউনের সময়কালে দেশের অর্থনীতিতে প্রভূত ক্ষতি হয়েছে সন্দেহ নেই। সেই সময়ে কারখানায় উৎপাদন কার্যত থেমে ছিল। কর্মরত লক্ষ লক্ষ মানুষ নতুন করে বেকার হয়েছেন। মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমে এক দুরূহ পরিস্থিতি তৈরি হয়। এই মানুষগুলির হাতে নগদের জোগান দেওয়া জরুরি ছিল, যা সরকার করেনি। আবার করোনার প্রভাব কমতে আস্তে আস্তে সবকিছু যখন স্বাভাবিক হতে থাকে, অর্থনীতির চাকা ঘুরতে শুরু করে ধীর গতিতে, তখন আকাশছোঁয়া মূল্যবৃদ্ধির থাবা আম জনতার গলায় ফাঁসের মতো চেপে বসে। কেন্দ্রীয় সরকারের অপদার্থতায় গত এক বছরে প্রায় সবক্ষেত্রে দাম লাফিয়ে লাফিয়ে বেড়েছে। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই যা অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে দিয়েছে। যেমন গত এপ্রিলে খাদ্যপণ্যের দাম বেড়েছে ৮.৩৫ শতাংশ। এর মধ্যে তরিতরকারি ২৩.২৪ শতাংশ, আলু ১৯.৮৪ শতাংশ, ফল ১০.৮৯ শতাংশ এবং গমের দাম বেড়েছে ১০.৭০ শতাংশ। শুধু তাই নয়, এই সময়ে জ্বালানি ও বিদ্যুতের ক্ষেত্রে মূল্যবৃদ্ধির হার ৩৮.৬৬ শতাংশ। গ্যাস সিলিন্ডারের দাম প্রায় ১১০০ টাকা। যা ৩৮.৪৮ শতাংশ বৃদ্ধি। তথ্য আরও বলছে, গত এক বছরে খাবার, আবাসন, পরিবহণ, চিকিৎসা খরচ বেড়েছে ৫০ শতাংশ।
এমন এক সর্বগ্রাসী মহামারীর চেহারা নেওয়া মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে গত ফেব্রুয়ারি মাসের বাজেট অধিবেশন থেকে সংসদে আলোচনার দাবি করছিল বিরোধীরা। মানুষের জীবনে জ্বলন্ত সমস্যার কথা তুলে ধরতেই এই আলোচনার দাবি ছিল। কিন্তু নরেন্দ্র মোদিবাহিনী তখন তা মানেনি। এবারের বাদল অধিবেশনের প্রায় শুরু থেকেই তাই মূলত এই দাবিতে বিরোধীরা দিল্লিতে গান্ধী মূর্তির সামনে ধর্না শুরু করে। পাশাপাশি কয়েকদিন আগে এই সরকারেরই ‘মেন্টর’ সঙ্ঘ পরিবারের শীর্ষ নেতৃত্বও মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে সরকারকে করণীয় কাজ করার পরামর্শ দেয়। রাজনৈতিক মহলের একাংশের মতে, এই জোড়া সাঁড়াশি আক্রমণে সংসদে মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে আলোচনা করতে রাজি হয়েছে মোদি সরকার। পরিস্থিতি বেগতিক বুঝে এখন বলছে, জনস্বার্থের ইস্যুতে মোটেই চুপ করে থাকবে না তারা। জনবিরোধী কাজ করতে অভ্যস্ত এই সরকারে এখন জনদরদি সাজার মরিয়া চেষ্টা লক্ষ করা যাচ্ছে! এর পিছনে অন্য একটি উদ্দেশ্যও কাজ করছে। মূল্যবৃদ্ধির ইস্যুতে আলোচনায় রাজি হয়ে সরকার অধিবেশনের অচলাবস্থাও কাটাতে চাইছে। তবে বলা যায়, দেরিতে হলেও তাদের ঘুম ভেঙেছে, এটা ইতিবাচক পদক্ষেপ। কিন্তু প্রশ্ন হল, শুধু আলোচনায় কি চিঁড়ে ভিজবে? নাকি মূল্যবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণের জন্য সরকার কোনও বড় ঘোষণা করবে? মোদ্দা কথা, আম জনতার স্বার্থরক্ষায় যথোপযুক্ত পদক্ষেপ করুক সরকার। মনে রাখতে হবে, গোটা দেশের মানুষের দ্বারা নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা রয়েছেন সংসদে। দেশের স্বার্থেই সমস্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সংসদে আলোচনা হওয়া উচিত। সেটাই সংসদীয় গণতন্ত্রের আদর্শ কাজ। তাই শুধু বিরোধী নয়, মানুষের দাবিকে মান্যতা দিয়ে মূল্যবৃদ্ধি রোধের ব্যবস্থা নিক মোদি সরকার।