সামাজিক কর্মে সম্মান লাভ। স্ত্রী’র শরীর-স্বাস্থ্য খারাপ হতে পারে। দেরীতে অর্থপ্রাপ্তি। ... বিশদ
বিজেপির ঘোষিত অ্যাজেন্ডা হল, কংগ্রেস-মুক্ত ভারত নির্মাণ। জনসঙ্ঘের উত্তরসূরি হলেও এই হিন্দুত্ববাদী শক্তির রাজনৈতিক উত্থানের বয়স আহামরি নয়। বস্তুত, ১৯৮০ সালে বিজেপি প্রতিষ্ঠার দেড় দশক পরেই এই শক্তি জাতীয় রাজনীতিতে নিজেকে প্রাসঙ্গিক করে তোলে। অটলবিহারী বাজপেয়ি ১৯৯৯ সালে পূর্ণ মেয়াদের সরকার গড়ার পর থেকে বিজেপিকে আর পিছন ফিরে তাকাতে হয়নি। তবে, মনে রাখতে হবে বিজেপি কোনওদিন একক শক্তির ভরসা করার হিম্মত দেখায়নি। মোদিও দু’বার প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন এনডিএ বা একটি জোট সরকারের নেতা হিসেবে। বিজেপির নেতৃত্বে এনডিএ তৈরি হয়েছে কংগ্রেস-বিরোধিতার ধুয়ো তুলে। যখন যেখানে যাকে পেলে সুবিধা, তখন তাকেই এই জোটে নিয়েছে বিজেপি। তবে, বিজেপির এক দশকের রাজনীতির ধরনধারণ থেকে পরিষ্কার যে কংগ্রেস-মুক্ত ভারত নির্মাণ একটি কথার কথা। আরএসএসের রাজনৈতিক সংগঠনের আস্তিনের তলায় যে অস্ত্রটি লুকনো রয়েছে, তার ধারালো অংশে লেখা, বিজেপি আসলে চায়—‘বিরোধী-মুক্ত’ ভারত। বিজেপির যে কৌশল এতদিনে প্রকট হয়েছে, তা হল—কংগ্রেস সম্পর্কে যেসব দলের গাত্রদাহ প্রবল, নানা স্তোক দিয়ে প্রথমে তাদের কাছে টেনে নেয়। কিছু সুযোগ সুবিধে দেয়। এরপর বিজেপির হাতে তামাকু সেবন অভ্যাসে পরিণত হয়ে যাওয়ার পর সেই শরিকরা হঠাৎই একদিন তাদের সাড়ে সর্বনাশ আবিষ্কার করে: হায় হায়, পায়ের তলায় মাটি কই! তখন তারা না-পারে স্বাধীনভাবে কিছু করতে, না-পারে অন্য জোটের শরিক হতে। বিজেপি যা বলে সেটাই শুনতে হয় তাদের। প্রয়োজনে বিজেপির সঙ্গে মিশেও যায় তারা। অর্থাৎ, বিজেপির প্রথম লক্ষ্য, কংগ্রেসকে দুর্বল বা শেষ করে দেওয়া। তারপরের ধাপে এই শক্তি পঙ্গুত্ব নিশ্চিত করে কংগ্রেস এবং বিজেপির বিরোধীদেরও।
বস্তুত, এভাবেই মহারাষ্ট্রে শিবসেনা, পাঞ্জাবে অকালি দল এবং উত্তরপ্রদেশে বহুজন সমাজ পার্টির প্রভূত ক্ষতি হয়েছে। উত্তর-পূর্বাঞ্চলের বিভিন্ন স্থানে, গোয়ায় এবং দেশের আরও একাধিক রাজ্যে কয়েকটি রাজনৈতিক দল মোদি-শাহের ফাঁদে পা দিয়ে খুব দ্রুত নগণ্য হয়ে গিয়েছে। উদ্ধব থ্যাকারেকে গদিচ্যুত করার পর, সম্প্রতি বিজেপি নিজেকে অপ্রতিরোধ্য ভাবতে শুরু করেছিল। তাদের লোলুপ দৃষ্টি প্রসারিত হয়েছিল ঝাড়খণ্ড এবং বিহারের দিকে। ঝাড়খণ্ডের কুর্সি ছিনিয়ে নেওয়ার মতলবে গেরুয়া হাত ভিতরে ভিতরে কতটা কী খেলছে এখনও পরিষ্কার নয়। তবে, বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার বেশ বুঝে যান মোদি-শাহের মতলব, নীতীশকে ক্ষমতাচ্যুত করার ঘুঁটি পাকিয়ে এনেছেন তাঁরা। নীতীশ সেই সুযোগ তাঁদের না-দিয়ে, বরং বিহারের কুর্সি থেকে বিজেপিকেই অর্ধচন্দ্র দিলেন! মোদি-শাহরা হয়তো এতটা কল্পনাও করেননি। কোনও সন্দেহ নেই, পোড়-খাওয়া বিহারীবাবুর এই মাস্টারস্ট্রোকে বিজেপির মুখ চুন হয়ে গিয়েছে। জাতীয় রাজনীতিতে অনেকখানি গুরুত্ব বেড়ে গিয়েছে নীতীশের। পূর্ব ভারতের রাজনীতি বাকি ভারতের থেকে কতটা ভিন্ন, আশা করা যায়, সেই পাঠও বিজেপি এই ঘটনা থেকে নিয়েছে। চব্বিশের খেলা আরও আকর্ষণীয় হয়ে ওঠার অপেক্ষায় থাকছে অন্তত এই একটি ঘটনার সৌজন্যে।