সামাজিক কর্মে সম্মান লাভ। স্ত্রী’র শরীর-স্বাস্থ্য খারাপ হতে পারে। দেরীতে অর্থপ্রাপ্তি। ... বিশদ
কিন্তু তাতে শান্তি প্রতিষ্ঠিত হয়নি। জম্মু অঞ্চলটি হিন্দু পণ্ডিত সম্প্রদায়ের কাছে ক্রমে বসবাসের অযোগ্য হয়ে উঠেছে। কাশ্মীর উপত্যকার অর্থনীতি পর্যটন ও হস্তশিল্পের উপর বিশেষভাবে নির্ভরশীল। সেখানকার পর্যটন শিল্পের ঈর্ষণীয় উন্নতিই স্বাভাবিক ছিল। কিন্তু বাস্তবে তার উল্টোটাই ঘটেছে। নিত্যনতুন অশান্তির কারণে উপত্যকার সমস্ত ট্র্যাডিশনাল শিল্প আক্ষরিক অর্থেই মুখ থুবড়ে পড়েছে। একতরফাভাবে বিপুল অঙ্কের কেন্দ্রীয় সাহায্য জুগিয়েও সেখানকার অর্থনীতি চাঙ্গা করা যায়নি। কাশ্মীর একান্তভাবেই ভারতের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। তবু বিবাদটিকে আন্তর্জাতিক চেহারা দেওয়ার জন্যই মরিয়া পাকিস্তান। অতীতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন প্রভৃতি পশ্চিমা বৃহৎ শক্তি পাকিস্তানকে তাঁবে রাখার জন্য একাধিক অবাঞ্ছিত পদক্ষেপ করেছে। এখন ঘোলাজলে মাছ ধরার অপপ্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছে একা চীন। আর ওই ভরসাতেই, ভেঙে পড়া অভ্যন্তরীণ রাজনীতি এবং অর্থনীতি নিয়েও পাকিস্তান নষ্টামি অব্যাহত রেখেছে। অর্থাৎ টানা সাড়ে সাত দশকের কাশ্মীর সমস্যায় পূর্ণচ্ছেদ পড়ার সামান্যতম লক্ষণও নেই। এজন্য বিজেপি বার বার কংগ্রেস পার্টিকে দুষেছে। বিশেষ করে তারা দায়ী করে জওহরলাল নেহরুর ‘দুর্বল’ নেতৃত্বকে। বিজেপির আক্রমণের লক্ষ্য হয়েছেন ইন্দিরা গান্ধী এবং রাজীব গান্ধীও। কংগ্রেসের ‘ভ্রান্ত’ কাশ্মীর নীতি থেকে রাষ্ট্রকে মুক্ত করার অঙ্গীকার করেছিলেন নরেন্দ্র মোদি এবং তাঁর ডানহাত অমিত শাহ।
প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে, জম্মু ও কাশ্মীর রাজ্যের বিশেষ সাংবিধানিক মর্যাদা (৩৭০ অনুচ্ছেদ) বাতিল করা হয়। শুধু তাই নয়, পূর্ণাঙ্গ রাজ্যের মর্যাদা কেড়ে নিয়ে অঞ্চলটিকে ভেঙে দেওয়া হয় তিনটি পৃথক কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল রূপে। সেও তিনবছর হতে চলল। মোদি সরকারের প্রতিরক্ষা বিভাগ দাবি করেছিল, ২০১৬ সালে নোট এবং ২০১৯ সালে সংবিধানের ৩৭০ ও ৩৫এ অনুচ্ছেদ বাতিলের প্রত্যক্ষ সুফল পাবে কাশ্মীর উপত্যকা। উপত্যকাজুড়ে জঙ্গি তৎপরতা এবং অন্যান্য অপরাধের ঘটনায় লাগাম পড়বে। কাশ্মীর পুলিসের ক্রাইম ব্রাঞ্চের রিপোর্ট কিন্তু বিপরীত সাক্ষ্য দিচ্ছে, উপত্যকায় অপরাধের হার ঊর্ধ্বমুখী। অপরাধ ২০১৯ সালের তুলনায় ২০২০ সালে বেড়েছিল ১৫ শতাংশ। আবার ২০২০-র নিরিখে ২০২১-এ অপরাধ বৃদ্ধির হার ৯.৪৭ শতাংশ। গত একবছরে মাদক বিক্রি এবং সেবন বৃদ্ধির হারও (২৭) উদ্বেগজনক। এই তথ্য এবং সার্বিক পরিস্থিতি এটাই প্রমাণ করে যে, কাশ্মীর সমস্যার সমাধান কোনও লম্বা-চওড়া ভাষণ বা বিবৃতির সাবজেক্ট নয়। ওই অঞ্চলের আর্থিক ও রাজনৈতিক সমস্যাগুলির সমাধানে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে। অভিজ্ঞতা বলে যে, কাশ্মীরিদের আবেগের বিষয়গুলি উপেক্ষিত হলে রাজনৈতিক সমাধান অধরা থেকে যাবে। কাশ্মীর পরিস্থিতি আজ যে জায়গায় রয়েছে, তার সুষ্ঠু সমাধানে আরও জোর দিতে হবে কূটনৈতিক দক্ষতা বৃদ্ধির উপর। নেহরু বা গান্ধী পরিবারকে হেয় করার সস্তা রাজনীতির ভিতরে কাশ্মীর-জয়ের সামান্য গন্ধও নেই।