সামাজিক কর্মে সম্মান লাভ। স্ত্রী’র শরীর-স্বাস্থ্য খারাপ হতে পারে। দেরীতে অর্থপ্রাপ্তি। ... বিশদ
একথা চরম সত্য যে শিক্ষকরাই সমাজ গড়ার কারিগর। শিশু জন্মানোর পর প্রথমে মা-বাবা এবং তারপর শিক্ষকদের তত্ত্বাবধানে ও স্নেহস্পর্শে তারা বেড়ে ওঠে। ছাত্রছাত্রীদের জীবনে প্রকৃত গুরুর আসনে থাকেন শিক্ষকরাই। টাকার বিনিময়ে চাকরি পাওয়ার অভিযোগের পর সেই শিক্ষকরাই যেন বৃহত্তর সমাজে অনেকের কাছে সন্দেহের পাত্র হয়ে উঠেছেন! ভয়ঙ্কর হলেও সত্যি যে এই ঘুষ-কাণ্ডের ঘটনাটি বাংলার অনেক কিছুকে নাড়িয়ে দিয়েছে, আঘাত করেছে মূল্যবোধে। ছাত্র ও শিক্ষকের পারস্পরিক সম্পর্কে শ্রদ্ধার আসনটি টলে যাওয়ার উপক্রম। অথচ এ নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই যে, স্কুল থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত সব স্তরেই বেশিরভাগ শিক্ষক নিজেদের যোগ্যতায়, পরীক্ষার নিয়মবিধি মেনে মেধা তালিকার ভিত্তিতে চাকরি পেয়েছেন। ছাত্রদের গড়ে তুলতে তাঁরা প্রাণপণ চেষ্টা করেন। ছাত্রছাত্রীদের নিজেদের সন্তানের মতো ভালোবাসেন, তাদের পড়ান, মূল্যবোধের শিক্ষা দেন। কিন্তু শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতির ঘটনাটি ছাত্রদের কাছে তাঁদের মাথা হেঁট করে দিচ্ছে। সৎভাবে চাকরি পেয়েও প্রতিবেশী ও আত্মীয়-স্বজনের চোখে ‘সন্দেহভাজন’ হয়ে উঠছেন তাঁরা, যা বাঞ্ছনীয় নয়। তাই শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতির ঘটনাটিকে লঘু করে না-দেখে মনে রাখা উচিত, এটাই সব নয়। এক শ্রেণির শিক্ষক নিয়োগের পিছনে টাকার খেলা থাকলেও তার দায় অন্য শিক্ষকদের উপর বর্তায় না। যদিও পার্থ-কাণ্ডের জেরে তাঁদের অনেককেই এখন যেভাবে নানারকম টিপ্পনীর মুখে পড়তে হচ্ছে তা তাঁদের পক্ষে চূড়ান্ত অপমানজনক। এটা বন্ধ হওয়া দরকার। সামগ্রিক বিচারে সামান্য একটা অংশের বাঁকাপথে চাকরি পাওয়ার দায় কখনওই গোটা শিক্ষক সমাজের উপর পড়তে পারে না। তাই ঘটনাটি যতই গুরুত্বপূর্ণ হোক তাকে ‘বিক্ষিপ্ত’ বলে মনে করা যেতে পারে। ২০১৩ সালের পর স্কুলে নিযুক্ত শিক্ষকদের মধ্যে কারা ‘আসল’ অর্থাৎ যোগ্য, কারা ‘নকল’ বা অযোগ্য এই কটু প্রশ্নের উপযুক্ত জবাব তখনই মিলবে—যখন শিক্ষাদপ্তর আইন মোতাবেক দুর্নীতিমুক্ত স্বচ্ছ নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে পারবে, বা ঘুষের জোরে হওয়া ‘শিক্ষকদের’ চিহ্নিত করতে পারবে। এই পরিস্থিতি থেকে বেরতে হলে সরকারকে তাই আগে স্বচ্ছভাবে শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়া যত দ্রুত সম্ভব শুরু করতে হবে। সেইসঙ্গে কারা ঘুষ দিয়ে চাকরি পেয়েছেন তা নিশ্চিত করতে তদন্ত প্রক্রিয়ার কাজও দ্রুত শেষ হওয়া প্রয়োজন। রাজ্য সরকারও চায় তদন্তের দ্রুত নিষ্পত্তি।
একথা ঠিক, ঘুষ কেলেঙ্কারি সামনে আসতেই নড়েচড়ে বসেছে রাজ্য প্রশাসন। আশার কথা যে, পরীক্ষায় কৃতকার্য হয়েও যাঁরা চাকরি পাননি বলে ক্ষুব্ধ, সেই আন্দালনরত চাকরিপ্রার্থীদের সমস্যার সমাধানে ভাবনাচিন্তা ইতিমধ্যেই শুরু করেছে সরকার। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁদের বিষয়টি দেখার আশ্বাস দিয়েছেন। শাসকদলের অন্যতম মুখ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের এক্ষেত্রে তৎপরতা প্রমাণ করছে তাঁরা বিষয়টি গুরুত্বসহকারেই ভাবছেন। শিক্ষক নিয়োগ-দুর্নীতিতে জড়িত ব্যক্তিরা দোষী প্রমাণিত হলে তাদের শাস্তিও নিশ্চয় হবে। কিন্তু নিয়োগের ক্ষেত্রে কোনও যোগ্য প্রার্থী যাতে বঞ্চিত না-হন তা নিশ্চিত করতে হবে সরকারকেই। সেইসঙ্গে দেখা দরকার, নির্দোষ কেউ যেন শাস্তি না পান। শিক্ষকদের সম্মান ও মূল্যবোধ রক্ষার স্বার্থে এটা জরুরি।