সামাজিক কর্মে সম্মান লাভ। স্ত্রী’র শরীর-স্বাস্থ্য খারাপ হতে পারে। দেরীতে অর্থপ্রাপ্তি। ... বিশদ
কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয় হল, কেন্দ্র কোনওদিনই স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে তার এই কর্তব্য সম্পাদন করে না। অথচ তার নিয়ম সংবিধানেই স্পষ্ট করা আছে। কেন্দ্র এবং রাজ্যের বৈঠকগুলিতেও সেসব নিয়ে বার বার আলোচনা হয়ে থাকে। এরপরও রাজ্যগুলি উপর্যুপরি দাবি জানায় কেন্দ্রের কাছে। কখনও সচিব পর্যায়ে দরবার করে। কখনও দাবিপত্র দেয় বিভাগীয় মন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে। এক একটি রাজ্যের চিঠির পাহাড় জমা হয় অর্থমন্ত্রীর দপ্তরেও। এমনকী, নানা উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে মুখ্যমন্ত্রীরাও রাজ্যের ন্যায্য পাওনা দ্রুত ছেড়ে দেওয়ার কথা স্মরণ করিয়ে দেন। তবু বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই কেন্দ্রকে নির্বিকার থাকতে দেখা যায়। তখন বিরোধী দলগুলি কেন্দ্রের বিরুদ্ধে নালিশ জানায় জনতার দরবারে। জমে ওঠে দলীয় সমাবেশ। এইভাবেই কেন্দ্রীয় বঞ্চনার অভিযোগ প্রতিষ্ঠা পেয়েছে। বাংলার মানুষের মনে আছে, কেন্দ্রীয় বঞ্চনার অভিযোগ নিয়েই বামেরা এই রাজ্যে দশকের পর দশক রাজনীতি করেছে। তা থেকে পর্যাপ্ত ডিভিডেন্ড ঘরে তুলেছে তারা। শুধু বিরোধী দলগুলি নয়, রাজস্ব বণ্টনের বিষয়টিকে নিয়ে কেন্দ্রীয় শাসকও রাজনীতি করতে ছাড়ে না। রাজ্যের প্রাপ্য হস্তান্তর করার জন্য কেন্দ্রও ‘উপযুক্ত’ সময় খোঁজে। এটা সবসময় রাজকোষের অবস্থার উপর নির্ভর করে না। কেন্দ্র এমন সময় কিছু টাকা দেয় যখন কাছাকাছি কোনও নির্বাচন থাকে। অর্থাৎ কেন্দ্রের দরাজ দিলের কথা প্রচার করে কেন্দ্রীয় শাসক দল ভোটের বাক্সে বাড়তি ফায়দা লুটতে প্রয়াসী হয়। নিজ ভাবমূর্তি উদ্ধারের জন্যও এই টাকাকে হামেশা হাতিয়ার করে কেন্দ্র। অথবা দেখা হয়, এই টাকা থেকে রাজ্যে রাজ্যে বিরোধী দলগুলি কোনও রাজনৈতিক সুবিধা না-পায়। অর্থাৎ কেন্দ্র-রাজ্য সম্পর্কের বিষয়টি সাংবিধানিক ব্যবস্থার গণ্ডিতে কমই ঘোরাফেরা করে। রাজ্যগুলির উন্নয়নচিন্তাও কেন্দ্রের মাথায় বিশেষ থাকে বলে মনে হয় না। বিশেষ করে যেসব রাজ্যে বিরোধী দল কর্তৃক পরিচালিত সরকার থাকে, সেখানে এমন সদিচ্ছার প্রমাণ দুর্লভ।
তা সত্ত্বেও কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রীকে কেন্দ্র-রাজ্য সম্পর্কের দোহাই পাড়তে হল। তিনি বোঝাতে চাইলেন, রাজ্যগুলির শিল্প-বাণিজ্য-উৎপাদন এবং উন্নয়নের বিষয়টিকে মোদি সরকার কতটা ‘কেয়ার’ করে, কেন্দ্র-রাজ্য সম্পর্কের সুরক্ষায় তাঁরা কতটা যত্নবান ইত্যাদি। তাই বুধবার পশ্চিমবঙ্গকে দেওয়া হয়েছে ৮,৭৭৬.৭৬ কোটি টাকা। মোদি সরকার বাংলার প্রাপ্য আটকে রেখেছে লক্ষাধিক কোটি টাকা। সেই তুলনায় কেন্দ্র এই দফায় যে টাকা দিয়েছে তা নগণ্যই। দয়ার দান বাংলা কখনও চায়নি। ন্যায্য প্রাপ্য সময় মতো পেলে রাজ্য সরকার বাংলার জন্য অনেক কিছুই করতে পারত। সবচেয়ে বেশি গতি পেত শিল্প, পরিকাঠামো ও উন্নয়ন কর্মসূচিগুলি। তা থেকে বহু গরিব ও মধ্যবিত্ত পরিবার কর্মসংস্থানের সুবিধা পেত। বেড়ে যেত মানুষের হাতে নগদ টাকার জোগান ও সাধারণ পণ্যের চাহিদা। কিন্তু কেন্দ্রের অসহযোগী, অবিবেচক ভূমিকায় রাজ্যগুলি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। পরোক্ষে রাজ্যগুলির বিকাশের পথ রোধ করে মোদি সরকার ‘সবকা বিকাশ’ স্লোগানে আত্মবঞ্চনা করছে না কি?