কর্ম নিয়ে স্থানান্তর গমনে সাফল্যের যোগ। কর্মে স্থানগত বা সংস্থাগত পরিবর্তন অসম্ভব নয়। পারিবারিক ক্ষেত্রে ... বিশদ
রাজ্যে ১৮টি সংশোধনগারকে নিরক্ষর বন্দিদের পঠনপাঠনের জন্য চিহ্নিত করা হয়েছে। সেগুলির মধ্যে অন্যতম ঝাড়গ্রাম বিশেষ সংশোধনগার। পঠনপাঠনে হাতেখড়ি হবে বর্ণমালার পাঠ দিয়ে। তারপর ধাপে ধাপে বাক্য গঠন, যুক্তবর্ণ শেখানো হবে। এছাড়াও যোগ, বিয়োগ, গুন-ভাগও যত্ন সহকারে শিক্ষকরা শেখাবেন। সপ্তাহে তিনদিন ক্লাস হবে। ঘড়ির কাঁটা ধরে সকাল আটটায় ক্লাস শুরুর ঘন্টা পড়ে যাবে। বন্দি পড়ুয়াদের তার আগেই বইখাতা, পেন নিয়ে ক্লাসে উপস্থিত হতে হবে। ক্লাসের সময় পড়ুয়ারা ইচ্ছেমতো বাইরে যেতে পারবে না। নিয়মিত ক্লাসে আসতে হবে। শিক্ষকদের কথা মেনে চলতে হবে। রাজ্যের কারাদপ্তর প্রথম প্রেসিডেন্সি ও মেদিনীপুর জেলা সংশোধনগারে এই পাইলট প্রজেক্ট চালু করে। সাফল্য মিলতেই বিভিন্ন জেলার ১৮টি সংশোধনগারে নিরক্ষর বন্দিদের সাক্ষরতার পাঠ দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
গত কয়েক দশকে প্রথাগত জেলের ধারণা পাল্টে গিয়েছে। জেলকে এখন সংশোধনগার বলা হয়। জেলের ভেতর বন্দিদের নিয়ে খেলাধুলা, নানা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান করা হয়ে থাকে। বিশেষ বিশেষ উৎসব, অনুষ্ঠানে খাওয়া দাওয়ার ব্যবস্থা থাকে। এবার নিরক্ষর বন্দিদের সাক্ষরতার পাঠ দেওয়া হচ্ছে। বন্দিদের স্বার্থেই মূলত এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। গ্ৰেপ্তারের পর থেকে বন্দিদের নিয়মিত কোর্টে যেতে হয়। সেখানে আইনজীবী আদালতে তাদের হয়ে মামলা লড়েন। বন্দিদের ওকালত নামায় সই করতে হয়। জামিন পেতেও স্বাক্ষরের দরকার হয়। জেলের মধ্যে কোনও সমস্যা হলে ‘প্রিজনার্স পিটিশন’ লিখতে হয়। সেখানেও স্বাক্ষর করতে লাগে। দেখা যায় নিরক্ষর বন্দিরা স্বাক্ষর করতে না পেরে সমস্যায় পড়ছে। বন্দিদের এই সমস্যা থেকে মুক্তি দিতে পঠনপাঠন শেখানোর উদ্যোগ। বয়স্কদের জন্য সাক্ষরতার লক্ষ্যে রোটারি ইন্ডিয়া লিটারেসি মিশন কাজ করে চলেছে। এবার সংশোধনগারে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দেবার কাজ তারাই করবে।
ঝাড়গ্রাম বিশেষ সংশোধনাগারে ৭০ জন বন্দি পড়ুয়ার মধ্যে পঞ্চাশজনই খুনের অভিযোগে অভিযুক্ত। বাকিরা বধূ নির্যাতন ও নানা অশান্তির ঘটনায় অভিযুক্ত। এইসব বন্দিদের পাঠদান খুব সহজ হবে না বলেই মনে করা হচ্ছে। তবে, সংশোধনগারের আধিকারিক ও নিযুক্ত শিক্ষকরা অবশ্য হাল ছাড়তে নারাজ। কারণ বেশিরভাগ বন্দি জীবনের এই পর্বে পড়াশোনা শুরু করা নিয়ে উৎসাহ ও আগ্ৰহ দেখাচ্ছে। বন্দিদের মনোযোগ দিয়ে পড়াশুনার ক্ষেত্রে যাতে কোনও ব্যাঘাত না হয়, তারজন্য সব ধরনের ব্যাবস্থা নেওয়া হচ্ছে। ঝাড়গ্রাম সংশোধনাগারের জেল সুপারিনটেনডেন্ট রাজেশ কুমার মণ্ডল বলেন, আগামী সোমবার থেকে এই সংশোধনগারে পঠনপাঠন শুরু হবে। প্রায় ৭০ জন পড়ুয়ার পঠনপাঠনের ব্যাবস্থা করা হয়েছে। শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি চলছে। নিরক্ষর বন্দিদের সাক্ষর করাই এই পরিকল্পনার মুখ্য উদ্দেশ্য। -নিজস্ব চিত্র