ব্যবসায়িক ক্ষেত্রে বাধায় চিন্তা ও উদ্বেগ। বেকারদের ভালো প্রতিষ্ঠানে কর্মপ্রাপ্তির প্রবল যোগ। ... বিশদ
গত বছরের জুলাই মাস। জেলা শিশুসুরক্ষা কেন্দ্রে আসেন এক দম্পতি। কোলে এক সদ্যোজাত। তাঁদের কাতর আর্জি, পরিবারে অনটন। দয়া করে আমাদের এই কন্যাসন্তানকে আপনারা আশ্রয় দিন। প্রি-ম্যাচিওর বেবি। ওজন মাত্র ১ কেজি ৭০০ গ্রাম। প্রচণ্ড অসুস্থ। চিকিৎসকরা বলেছেন, জটিল রোগে আক্রান্ত। আমাদের পক্ষে প্রতিপালন করা সম্ভব নয়। প্রশাসনের তরফে পাল্টা প্রস্তাব দিয়ে বলা হয়, আপনারা প্রতিপালন করুন। প্রতি মাসে ৪ হাজার টাকা করে অর্থ সাহায্য করা হবে। ১৮ বছর বয়স পর্যন্ত এই সহায়তা মিলবে। কিন্তু, কোনও প্রস্তাবেই সদ্যোজাতের দায়িত্ব নিতে রাজি হননি দম্পতি। একরকম বাধ্য হয়েই সদ্যোজাতের প্রতিপালনের ভার নেয় প্রশাসন। খুদের ঠাঁই হয় হোমে। পরিচর্যায় রাখা হয় আয়া, নার্স। তাকে বাঁচিয়ে রাখাই ছিঢ় প্রশাসনের কাছে বড় চ্যালেঞ্জ।
কন্যাসন্তানটিকে একাধিক সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা করানোর পর নিয়ে যাওয়া হয় কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে। সেখানে দু’টি জটিল অপারেশন হয়। তারপর ধীরে ধীরে সুস্থ হতে থাকে জ্যোতি। এখনও তাকে নিয়ে সপ্তাহে দু’বার কলকাতায় যেতে হয়। তবে খুশির খবর, আগেরস চেয়ে অনেকটাই সুস্থ সে। জ্যোতির এই এক বছরের জীবন-কাহিনি বিস্তারিত জেনে তাকে দত্তক নিতে রাজি নিউইয়র্কবাসী ওই দম্পতি। তাঁরা আদতে গুজরাতের বাসিন্দা। পাকাপাকিভাবে এখন নিউইয়র্কে থাকেন। সরকারি পোর্টালে জ্যোতিকে দত্তক নেওয়ার আবেদন করেছিলেন। সেই আবেদন মঞ্জুর হয়েছে। সূত্রের খবর, সরকারি নিয়ম-কানুন মেনে জ্যোতিকে ওই দম্পতির হাতে তুলে দেওয়া হবে। তার প্রক্রিয়া চলছে।
সাধারণত এই ধরণের প্রি-ম্যাচিওর সন্তানকে প্রতিপালনের ঝুঁকি নেন না বহু গরিব, অসহায় বাবা-মা। তাঁরা হয় গোপনে বিক্রি করে দেন, নতুবা ঝোপঝাড়ে ফেলে দিয়ে চলে যান। সে দিক দিয়ে জ্যোতির বাবা-মা খানিক ব্যতিক্রমী সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন বলে মত প্রশাসনিক মহলের একাংশের। ফলে, জ্যোতি একটা দৃষ্টান্ত। সে হোমের নিবিড় পরিচর্যা না পেলে হয়তো অকালে ঝরে যেত। অনেক সদ্যোজাতের ক্ষেত্রে যেটা হয়ে থাকে। কিন্তু আক্ষেপের বিষয়, পশ্চিম বর্ধমান জেলায় বহু বেসরকারি হাসপাতাল, নার্সিংহোম রয়েছে। তাদের কাছ থেকে এ ধরণের কোনও সদ্যোজাত পাওয়া যাচ্ছে না। বিষয়টি বেশ ভাবাচ্ছে প্রশাসনকে।