শাস্ত্র অধ্যয়নে গতি বৃদ্ধি ও পরীক্ষায় শুভ ফল লাভের সম্ভাবনা। নতুন কর্মপ্রাপ্তি হতে পারে। দাম্পত্যে ... বিশদ
বৈঠকের পর যৌথ প্রেস মিটে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে প্রশংসায় ভরিয়ে দেন ট্রাম্প। মোদিকে দীর্ঘদিনের বন্ধু বলে উল্লেখ করে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেন, দর কষাকষির ক্ষেত্রে উনি আমার থেকেও কঠোর। আমার থেকে অনেক ভালোও। এক্ষেত্রে আমাদের দু’জনের মধ্যে কোনও প্রতিযোগিতাই চলে না। মোদি ভারতে সত্যিই অসাধারণ কাজ করছেন। তিনি মহান নেতা। শুধু প্রশংসাই নয়, হোয়াইট হাউসে স্বাগত জানানোর সময় মোদির সঙ্গে করমর্দন থেকে আলিঙ্গন— ট্রাম্প বাদ দিলেন না কিছুই। মোদিকে উপহার দিলেন ‘আওয়ার জার্নি টুগেদার’ শীর্ষক একটি বই। সেখানে কালো কালি দিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট লিখে দিলেন, ‘মিস্টার প্রাইম মিনিস্টার, ইউ আর গ্রেট!’
বন্ধুত্বের এই রসায়নের প্রতিফলন ঘটল ভারতের প্রাপ্তির ঝুলিতেও। দুই দেশের যৌথ বিবৃতিতে ঘোষণা করা হয়েছে, চলতি বছরেই শেষ হবে মেগা বাণিজ্য চুক্তির প্রথম দফা। পরবর্তী লক্ষ্যমাত্রা স্থির হয়েছে, ২০৩০ সালের মধ্যে বার্ষিক বাণিজ্যের পরিমাণ বাড়িয়ে ৫০ হাজার কোটি ডলার করা হবে। যৌথ বিবৃতিতে এটিকেই ‘মিশন ৫০০’ বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এপ্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী মোদি জানান, আমাদের অফিসাররা দ্রুত নয়া একটি বাণিজ্য চুক্তির খসড়া তৈরি করবেন। সম্ভাব্য সেই চুক্তির ফলে দুই দেশই লাভবান হবে। মোদির সঙ্গে বৈঠকের আগেই ভারতীয় পণ্যের উপর পাল্টা আমদানি শুল্ক চাপানোর ঘোষণা করেছিলেন ট্রাম্প। যৌথ প্রেস মিটেও তা গোপন করেননি মার্কিন প্রেসিডেন্ট। তিনি বলেন, ভারত যে হারে শুল্ক চাপিয়ে রেখেছে, আমরাও ঠিক ততটা চাপাব।
আমদানি শুল্কের এই কাঁটা সত্ত্বেও প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে ভারতের বড় প্রাপ্তির আভাস মিলেছে। তারই অঙ্গ হিসেবে প্রতিরক্ষা সহযোগিতার ১০ বছর মেয়াদি একটি পরিকল্পনা হাতে নিচ্ছে দুই দেশ। এর অন্তর্গত গুরুত্বপূর্ণ অস্ত্রশস্ত্র ও সরঞ্জাম যৌথভাবে উৎপাদনের কাজ হবে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ঘোষণা করেছেন, নয়াদিল্লিকে লক্ষ লক্ষ ডলার মূল্যের প্রতিরক্ষা হার্ডওয়্যার বিক্রি বাড়াবে আমেরিকা। এক্ষেত্রে সম্ভাব্য সরবরাহের তালিকায় রয়েছে এফ-৩৫ ফাইটার এয়ারক্র্যাফ্টও। এছাড়া, আরও ছ’টি পি-৮এল যুদ্ধজাহাজ কিনতে চেয়ে ভারতের দেওয়া প্রস্তাবে সিলমোহর দিয়েছে আমেরিকা। পাশাপাশি অ্যান্টি-ট্যাঙ্ক গাইডেড মিসাইল ‘জাভেলিন’ ও কমব্যাট গাড়ি ‘স্ট্রাইকার’ হাতে পাবে ভারত।
ট্রাম্প ঘোষণা করেছেন, বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে আমেরিকা হতে চলেছে ভারতের পয়লা নম্বর তেল ও গ্যাস সরবরাহকারী। প্রধানমন্ত্রী মোদির সঙ্গে বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত হয়েছে। পাশাপাশি অসামরিক পরমাণু শক্তি সেক্টরেও তাৎপর্যপূর্ণ গতি এসেছে। মার্কিন পরমাণু ক্ষেত্রের জন্য সুখবর রয়েছে। ভারতের বাজারে মার্কিন পরমাণু প্রযুক্তিকে স্বাগত জানাতে নয়াদিল্লি আইনে সংস্কার করছে। ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠকের আগে প্রধানমন্ত্রী মোদি পৃথকভাবে বৈঠক করেন মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা মাইক ওয়ালৎজ, ডিরেক্টর অব ন্যাশনাল ইন্টেলিজেন্স তুলসী গাবার্ড, ধনকুবের শিল্পপতি এলন মাস্ক ও রিপাবলিকান নেতা বিবেক রামাস্বামীর সঙ্গেও।
কী কী ঘোষণা হল
সমুদ্রের নীচে ৫০ হাজার কিলোমিটার কেবল পাতার কাজ করবে মার্ক জুকেরবার্গের সংস্থা মেটা।
শিক্ষাক্ষেত্রে যৌথ ডিগ্রি, অফশোর ক্যাম্পাস এবং উৎকর্ষ কেন্দ্র তৈরিতে সহমত পোষণ করেছে দু’পক্ষই। বর্তমানে প্রায় ৩ লক্ষ ভারতীয় পড়ুয়া সম্প্রদায় মার্কিন অর্থনীতিতে বার্ষিক ৮০০ কোটি মার্কিন ডলারের অবদান রাখে।
পারমাণবিক শক্তি উৎপাদনের হার বাড়াতে আধুনিক ক্ষুদ্র মডিউলার রিঅ্যাক্টর তৈরিতে যৌথ উদ্যোগ নেবে ভারত-আমেরিকা।
চলতি বছর শেষ হওয়ার আগেই এআই রোডম্যাপ চূড়ান্ত করবে দুই দেশ। এর সঙ্গে নেক্সট জেনারেশন ডেটা সেন্টার ও যৌথ অংশীদারিত্বে এআই প্রক্রিয়াকরণ (প্রসেসিং) সংক্রান্ত ঘোষণাও করা হয়েছে।
আমেরিকার মাটিতে ভারতের ওষুধ শিল্পের প্রসার ঘটানো হবে।
অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে ‘মিশন ৫০০’ লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছে দিল্লি ওয়াশিংটন। এর অধীনে ২০৩০ সালের মধ্যে দু’দেশের দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ৫০ হাজার কোটি মার্কিন ডলারে নিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। যদিও, সম্প্রতি ইস্পাত এবং অ্যালুমিনিয়াম আমদানিতে ২৫ শতাংশ শুল্ক চাপানোর ঘোষণা করেছেন ট্রাম্প। যা ভারতের জন্য মোটেই ভালো নয়। কারণ বছরে ভারত থেকে বছরে প্রায় ২৭ হাজার কোটি টাকার ইস্পাত আমদানি করে আমেরিকা।
ফিফ্থ জেনারেশন যুদ্ধবিমান ও অত্যাধুনিক সামুদ্রিক সমরাস্ত্র ভারতকে সরবরাহ করার জন্য নীতি তৈরি করবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র।
আগামী ১০ বছরের জন্য প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে ভারত-আমেরিকা যৌথ অংশীদারিত্ব চুক্তি সম্পন্ন হবে চলতি বছরেই।