নিজস্ব প্রতিনিধি, পুরুলিয়া: পুরুলিয়া শহরে অবৈধভাবে নির্মিত ফ্ল্যাটের অংশ ভাঙার নির্দেশ দিল কলকাতা হাইকোর্ট। এই শহরে সর্বোচ্চ ‘জি প্লাস ফোর’ অর্থাৎ পাঁচতলা পর্যন্ত ফ্ল্যাট নির্মাণের অনুমতি রয়েছে। কিন্তু, শহরের চণ্ডীকর লেনের রাধাকৃষ্ণ মোড়ের ‘রাধাকৃষ্ণ অ্যাপার্টমেন্ট’ ফ্ল্যাটটির ষষ্ঠতলা সম্পূর্ণ অবৈধভাবে নির্মাণ হয়েছে বলে অভিযোগ। এনিয়ে ওই ফ্ল্যাটেরই কয়েকজন মামলা করেছিলেন হাইকোর্টে। সেই মামলার প্রেক্ষিতে ষষ্ঠতলা ভাঙার নির্দেশ দেন হাইকোর্টের বিচারপতি দেবাংশু বসাক ও বিচারপতি সব্বর রশিদির ডিভিশন বেঞ্চ। ১৫ দিনের মধ্যে এনিয়ে পদক্ষেপ শুরুর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
আদালত সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০১৬ সালে পুরুলিয়া পুরসভা একটি ‘জি প্লাস ফোর’ বিল্ডিংয়ের প্ল্যান অনুমোদন করে। ২০১৮ সাল থেকে ফ্ল্যাট বিক্রি শুরু হয়। সেইসময় যাঁরা ফ্ল্যাট কিনেছিলেন, তাঁদের দলিলেও বিল্ডিংটি ‘জি প্লাস ফোর’ বলে স্পষ্ট উল্লেখ রয়েছে। সেই সঙ্গে বলা হয়, বিল্ডিংয়ের ছাদটি ফ্ল্যাটের সকলের ব্যবহারের জন্য। কিন্তু, ২০১৯ সালে হঠাৎ করে ফ্ল্যাটের ষষ্ঠতলার নির্মাণ কাজ শুরু হয়। এনিয়ে ফ্ল্যাটের অন্য বাসিন্দারা পুরসভা থেকে শুরু করে জেলা প্রশাসনের বিভিন্নস্তরে অভিযোগ জানাতে থাকেন। কিন্তু, লাভ না হওয়ায় ২০২৩ সালে তাঁরা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন। বিচারপতি অমৃতা সিনহার এজলাসে মামলাটির শুনানি হয়। ফ্ল্যাটের ষষ্ঠতলা কীভাবে নির্মাণ হয়েছে, তানিয়ে পুরসভার কাছে রিপোর্ট তলব করেন বিচারপতি। এনিয়ে আদালতে রিপোর্ট জমা করে পুরসভা।
আদালতে যে রিপোর্ট জমা দিয়েছে পুরসভা, তা থেকে জানা যায়, ওই ফ্ল্যাটের ষষ্ঠতলা নির্মাণের পর তা পুরসভার তত্কালীন চেয়ারম্যান সামিম দাদ খানের নজরে আসে। তিনি নামমাত্র জরিমানা ধার্য করে ফ্ল্যাটের ষষ্ঠতলার অনুমোদন দিয়ে দেন। বাসিন্দাদের অভিযোগ, এই প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ বেআইনিভাবেই হয়েছে। মামলার এক আইনজীবী বলেন, আইন অনুযায়ী ১২ ফুটের রাস্তায় ‘জি প্লাস ফাইভ’ বানানো যায় না। ২০১৬ সালে যখন ফ্ল্যাটটি নির্মাণ হয়, তখন ফ্ল্যাটের সামনের রাস্তা ১২ ফুট চওড়া বলে উল্লেখ ছিল। ২০১৯ সালে পুরসভা যখন ‘ঘুরপথে’ ষষ্ঠতলার অনুমোদন দিচ্ছে, তখন নথিতে দেখানো হচ্ছে যে রাস্তা ১৮ফুট চওড়া! অর্থাৎ, পুরসভার তত্কালীন বোর্ড যে বেনিয়ম করেছে এখানেই তা স্পষ্ট হয়ে যাচ্ছে। মামলাকারীদের অন্যতম ওই ফ্ল্যাটের বাসিন্দা অর্ণব কুমার বলেন, প্রোমোটার সম্পূর্ণ বেআইনিভাবে ফ্ল্যাটের ষষ্ঠতলা নির্মাণ করেছে। সেই অন্যায়ের বিরুদ্ধে এতদিন লড়াই করছিলাম। কলকাতা হাইকোর্ট রায় দিয়েছে, তাতে আমরা অত্যন্ত খুশি। আশা করি এবার পুরুলিয়া পুরসভা ও প্রোমোটারদের শুভবুদ্ধির উদয় হবে।
ওই আবাসনের ষষ্ঠতলার আবাসিক তথা প্রাক্তন সম্পাদক সুশান্ত দত্ত বলেন, ষষ্ঠতলায় প্রায় আটটি পরিবার থাকে। যাঁরা ফ্ল্যাট কিনেছেন, প্রত্যেকেই নথি দেখেই কিনেছেন। নথিতে ষষ্ঠতলার অনুমোদন রয়েছে। তবেই ব্যাঙ্ক লোন দিয়েছে। কিন্তু, তাতে যে কারচুপি রয়েছে আমরা কী করে জানব? তাঁর প্রশ্ন, যদি এখন আমাদের ফ্ল্যাট থেকে উচ্ছেদ করা হয়, আমরা যাব কোথায়? পুরসভা তাহলে ক্ষতিপূরণ দিয়ে পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করুক।
এনিয়ে সামিম দাদ খানকে ফোন করা হলেও তিনি কল রিসিভ করেননি। পুরসভার বর্তমান চেয়ারম্যান নব্যেন্দু মাহালি বলেন, হাইকোর্টের রায়কে মান্যতা দিয়ে যা যা পদক্ষেপ করার করা হবে।
বিজেপির সহ সভাপতি গৌতম রায় বলেন, সঠিক তদন্ত করলে দেখা যাবে পুরসভায় সব ফ্ল্যাটই বেআইনিভাবে তৈরি হয়েছে। নেতারা কাটমানি খেয়ে অবৈধভাবে এইসব ফ্ল্যাট তৈরিতে মদত দিয়েছেন।