বড়পর্দায় প্রতীম ডি গুপ্তর ‘চালচিত্র’। হইচই প্ল্যাটফর্মে সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের ‘ফেলুদার গোয়েন্দাগিরি: ভূস্বর্গ ভয়ঙ্কর’। মুক্তির অপেক্ষায় টোটা রায়চৌধুরীর দুই প্রজেক্ট।আড্ডায় শেয়ার করলেন সেই জার্নি।
আবার পুলিস হলেন?
(হা হা হা) এখনও পর্যন্ত কেরিয়ারে এত পুলিসের চরিত্রে অভিনয় করেছি যে, আমার বন্ধুরা বলে, তোর পুলিস-লগ্নে জন্ম! তবে ‘চালচিত্র’র পুলিস একেবারে আলাদা। ওর ব্যক্তিগত জীবনে অনেক সমস্যা আছে।
‘শুভ মহরত’-এর পুলিসের প্রেমে পড়েছিলেন বহু তরুণী। ‘চালচিত্র’তেও সেটা হবে?
(হাসি) ঋতুদা (ঋতুপর্ণ ঘোষ) ‘শুভ মহরত’-এ আমার চরিত্রটি এমনভাবে লিখেছিলেন, চরিত্র সম্পর্কে দর্শকের আকর্ষণ তৈরি হওয়া প্রায় অনিবার্যই ছিল। আর ‘চালচিত্র’-এ ভালোবাসার চেয়ে হয়তো নির্ভরতা বেশি তৈরি হবে। ‘শুভ মহরত’-এর ‘অরিন্দম’ এবং ‘চালচিত্র’র কনিষ্ক— এটা একটা বিবর্তনও বটে। কেরিয়ারের প্রথমদিকে অরিন্দম ছিলাম। আজ অনেকটা পথ অতিক্রম করে কনিষ্ক হয়েছি।
কপ ইউনিভার্স দর্শক বহুবার দেখেছেন। এই ছবিতে নতুন কী থাকবে?
আমাদের কপ ইউনিভার্স কিন্তু সুপার কপ ইউনিভার্স নয়। একটি ডিপার্টমেন্টে চারজন পুলিস অফিসার আছে। তাদের চার রকমের চিন্তাধারা। তাদের মধ্যে কোনওরকম সুপারহিউম্যান কোয়ালিটি নই। পুলিসেরও সমস্যা, দুর্বলতা থাকে, সেটা এই ছবিতে আছে।
‘ভূস্বর্গ ভয়ঙ্কর’-এ ফেলুদা হওয়ার সুযোগ এল তো আবার?
আমি নির্লোভ, অল্পেতেই সন্তুষ্ট। সারা জীবনে একটি চরিত্রে লোভ ছিল, ফেলুদা। ঈশ্বরের আশীর্বাদে সেটা করতে পেরেছি। আমার সাত বছরের জন্মদিনে ‘বাদশাহি আংটি’ বইটি উপহার পেয়েছিলাম। যখন বড় হচ্ছি, বাবার সঙ্গে পূজাবার্ষিকী নিয়ে কাড়াকাড়ি, কারণ নতুন লিখতেন সত্যজিৎ রায়। ‘টিনটোরেটোর যিশু’তে অভিনয় করলাম। চোখের সামনে বাবুদা (সন্দীপ রায়) এবং বেণুদার (সব্যসাচী চক্রবর্তী) কম্বিনেশনে ফেলুদাকে তৈরি হতে দেখলাম। সেখানে অ্যাকশন কোরিওগ্রাফও করেছিলাম। তারপর নিজে ফেলুদা হলাম! সাত বছর বয়সে যে ভালোবাসার শুরু হয়েছিল, ভাগ্য আমাকে ফেলুদা হিসেবে সেই বিন্দুতে নিয়ে গেল। এখন যখন ফেলুদা করছি, তখন সবথেকে ভাগ্যবান পুরুষ এই বাংলা ইন্ডাস্ট্রিতে আমিই।
ফেলুদাকে বদলেছেন?
(রহস্যের হাসি) প্রতিটা প্রজেক্টে ফেলুদাকে সচেতন ভাবে অল্প অল্প বদলেছি। খুব কম মানুষ সেটা বুঝেছেন। আজ বলে দিলাম, অনেকে হয়তো এখন বুঝতে পারবেন। এটা দর্শক ধরতে পারলে, আমাকে জানান। দেখুন, আমি নিজের কাজ দেখি না। কারণ আমাকে তো আগেরটা থেকে ভালো করতে হবে। সৌমিত্রবাবু (চট্টোপাধ্যায়) এবং বেণুদার কাজও দেখি না। কারণ ওঁরা এত পাওয়ারফুল, ওঁদের কাজ দেখলে আমি প্রভাবিত হব। আমি খোলা মনে সেই সাত বছর বয়সের ভালোবাসা নিয়ে শ্যুটিংয়ে যেতাম। সত্যজিৎ রায় স্পষ্ট লিখে গিয়েছেন, ফেলুদা তৈরি করেছেন কিশোর পাঠকদের জন্য। আমি সেই ফ্লেভারটা ধরার চেষ্টা করি। স্রষ্টার আইডিয়ার বাইরে যেতে হলে ফেলুদা করব না।
সোশ্যাল মিডিয়ায় মন খুলে লিখতে পারেন?
যুগটা পাল্টে গিয়েছে। এখন ক্যানসেল কালচার। আমরা যেটা শুনতে চাইছি, সেটা যদি কেউ বলতে না পারে, তাহলে তাকে ক্যানসেল করে দেওয়া হয়। কিছু ক্ষেত্রে অবশ্যই মন খুলে কথা বলি। যদি মনে হয়, এমন কিছু বলতে হবে যেটা মন খুলে বলা যাবে না, তাহলে বলি না। আমাকে সমালোচিত হতে হলে সেটাতে অসুবিধে নেই। কিন্তু আমার জন্য প্রযোজকের ক্ষতি হলে, তাতে অসুবিধে আছে। আমার পারফরম্যান্স নিয়ে গঠনমূলক সমালোচনা মন দিয়ে শুনি, অযথা ট্রোল করলে সেটাতে আপত্তি আছে। ইন্ডাস্ট্রিতে ৩০ বছর হতে চলল। অনেকে সমালোচনা করেন, তাঁদের বয়স ৩০ নয়।
মুম্বইতে কাজ করতে গেলে সেখানে থাকা কি জরুরি?
অবশ্যই। আমি কলকাতা ছেড়ে থাকতে পারব না। অনেকে বলেছেন ‘রকি অউর রানি কি প্রেম কাহানি’র পর জায়গাটা তুমি স্বেচ্ছায় হারিয়েছ। আমি তাদের বলেছি, আমার সাফল্যের সংজ্ঞা আলাদা। সেখানে প্রথম আসে পরিবার। শিকড়ের কাছে থাকা।
ওই ছবির পর অনেক বলিউডের অফার নাকি ছেড়ে দিয়েছেন?
আমি দর্শকের প্রতি দায়বদ্ধ। যাঁরা দুঃসময়ে আমার পাশে ছিলেন, তাঁদের কথা ভাবতেই হবে। ওই ছবিটার পর বলিউডের ন’টা স্ক্রিপ্ট এসেছিল। তার মধ্যে তিনটে বেছে নিয়েছি। অনেক টাকার অফার ছিল। কিন্তু ওই ছবিগুলোতে কোথাও নিজেকে দেখতে পাচ্ছিলাম না।
ইদানীং শোনা যায়, প্রযোজক নাকি নিজেই টিকিট কেটে সিনেমাহল ভর্তি করেন, এটা সত্যি?
সব ব্যাপারে মাথা ঘামাতে গেলে নিজের কাজটা মন দিয়ে করা যায় না। ফলে এটা আমি জানি না।
স্বরলিপি ভট্টাচার্য
ছবি: দীপেশ মুখোপাধ্যায়